কোভিড-১৯ ভাইরাসের উচ্চ সংক্রমন এবং বাঙালীর মাক্স বিষয়ে মনস্তত্ব
রজত গোস্বামী॥ আমার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে দেখেছি, দেশের কোন হাটে বা বাজারে কিংবা শহরের কোন প্রান্তে যদি একটা ককটেল বা পটকা বিস্ফোরিত হয়, দেখা যায় মানুষ দিগিদি¦ক জ্ঞানশূণ্য হয়ে দৌড়ে পালাতে থাকে। এমনকি, কোন কিছুই হয়নি, কেউ একজন বললো- বাজারের ওই প্রান্তে বোমা ফেটেছে, তা শুনেই মানুষ পালাতে থাকে।
২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে দেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমন শুরু হয়েছে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে, সংক্রমন হারের উঠানামার ভিত্তিতে বারবার লকডাউন দেয়া হচ্ছে। কয়েকমাস থেকে আবার কোভিড-১৯ এর জীবন বিনাশী ’ডেল্টা ভেরিয়েশানের’ প্রবল সংক্রমন শুরু হয়েছে। ১লা জুলাই থেকে পবিত্র ঈদ-উল-আজহার জন্য ৮ দিনের বিরতি দিয়ে লকডাউন চলছে। এখন, দেশে দিনে গড়ে ২০০ প্রানহানী, এবং ১৫ হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন। মৃত্যুর মিছিলের এ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে , দেশের মানুষের পরিচিত কেউ না কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং দেশের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞগণ শুরু থেকেই বলে আসছেন, কোভিড-১৯ এর সংক্রমন থেকে নিজেকে রক্ষা করার প্রধান উপায় দুইটি। প্রথম হচ্ছে- টিকা গ্রহন। দ্বিতীয়, দ্রুত টিকা পাওয়া কঠিন, তাই কঠোর ভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, বিশেষ করে আবশ্যিক ভাবে মাক্স পরিধান ও নিজের দুইহাত কিছুক্ষণ পরপর জীবানুমুক্ত করা। কিন্তু আমার দেশের অধিকাংশ সোনার মানুষরা দুইহাত জীবানুমুক্ত করা তো দূরের কথা , মাক্সই পড়বেন না। এই লকডাউনের সময়ও দেখা যাচ্ছে মাক্স না পড়াটা যেন তাদের একটি জেদ।
২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং স্থানীয়ভাবে মাইকিং এর কল্যানে মাক্স জিনিষটা সবার পরিচিত হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট, হাট-বাজারে ঘুরে বেড়ানো মানুষ কিংবা দোকানদার/ব্যবসায়ী প্রায় শতভাগেরই মাক্স আছে, তবে তা দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা নয়, বরং তা থুতনিতে লাগানো, বা পকেটে রাখা। অর্থাৎ, মাক্স ব্যবহার না করার জেদ। কোভিড-১৯ মহামারী, এতো সংক্রমন, এতো মৃত্যু, তারপরও কেনো এই জেদ ?
প্রায় ১২৫/১৩০ বছর আগে শিশু কাব্যগ্রন্থে লেখা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ”আমি আজ কানাই মাষ্টার” খ্যাত ’মাষ্টারবাবু’ শিশুতোষ কবিতাটি যেনো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কবিতার একটি লাইন-”…………আমি বলি চ ছ জ ঝ ঞ / ও কেবল বলে মিয়োঁ মিয়োঁ”। রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং স্থানীয়ভাবে মাইকিং এর মাধ্যমে প্রচারনার পরও দেশের সিংহভাগ মানুষ মাক্স পরিধান করার কথা বললে ’কানাই মাষ্টারের সেই ছাত্রের (বিড়াল) মতো কেনো ”মিয়োঁ মিয়োঁ” করে, তা বোধগম্য হচ্ছে না। এবিষয়ে একটা গবেষনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।
আমি না হয় অবুঝ মানুষ, কিন্তু, মাক্স না পড়া এতসব মানুষের সবাইতো আমার মতো অবুঝ নন। তবে কেনো মাক্স না পড়ার এতো জেদ ? যেখানে সামান্য পটকা/ ককটেল ফাটলে দেন ভো-দৌড়, ভূমিকম্প হলে প্রাণ ভয়ে দৌড়ে ঘরের বাহিরে চলে আসেন, সেখানে মরনঘাতি কোভিড-১৯ সংক্রমনের এই ক্রান্তিকালে কেনো স্বাস্থবিধি মানছেন না। কি এর জবাব? যদি স্বাস্থ্যবিধি না ই মানবেন, মাক্স না ই পড়বেন, তাহলে লকডাউনে কেনো বাহিরে গিয়ে অন্যকে বিপদে ফেলবেন?
নব-উদঘাটিত বাক্য- ’জীবন ও জীবিকার’ কথা বলছেন? তাহলে, মাক্স সঠিকভাবে পরিধান করলে ’জীবন ও জীবিকায়’ কি ক্ষতি হয়, বলতে পারেন?
লেখক রজত গোস্বামীঃ প্রাক্তন সাংবাদিক, ডেইলি ষ্টার, সরকারি কলেজের শিক্ষক।
মন্তব্য করুন