কোরবানি সংক্রান্ত  প্রয়োজনীয় কিছু মাসআলা

August 10, 2019,

এহসান বিন মুজাহির॥ আগামী ১২ আগস্ট সোমবার দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহত্তম দুটি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে  অন্যতম একটি হলো পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। একদা হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) রাসুলের (সা.) নিকট জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) কোরবানি কী? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করলেন কোরবানি হচ্ছে তোমাদের আদি পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) এর জীবনাদর্শ। সাহাবি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন কোরবানির ফজিলত কী? রাসুল (সা.) বললেন, পশুর পশমের পরিবর্তে একেকটি করে নেকি দেয়া হয়’। (মেশকাত : ১২৯)। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আব্দুল¬াহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) পবিত্র মদিনায় দশ বৎসর জীবন-যাপন করেছেন প্রত্যেক বছরই তিনি পশু কোরবানি করেছেন’। (তিরমিজি : ১৮৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই কোরবানিদাতার কোরবানি আল¬াহর দরবারে কবুল হয়ে যায় এবং তাঁর অতীতের সকল গুনাহ মোচন করে দেয়া হয়। (তিরমিজি : ১৮০)। ইসলামে যেহেতু কোরবানি গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। তাই কোরবানি সম্পর্কিত মাসয়ালা-মাসায়িল জেনে বিশুদ্ধভাবে কোরবানি করা জরুরি। অন্যান্য ইবাদতের মতো কোরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কিছু নিয়ম ও বিধি-বিধান। আজকের নিবন্ধে কোরবানির প্রয়োজনীয় কিছু মাসআলা নিয়ে আলোকপাত করা করা হলো।

মাসআলা-মাসায়িল :

যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব :

ঈদুল আজহার দিন প্রয়োজনীয় খরচ ব্যতীত সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা কিংবা সমপরিমাণ সম্পদ যার কাছে থাকবে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য নেসাব পরিমাণ মাল পূর্ণ এক বছর থাকা জরুরি নয়, কোরবানির শেষ দিন সূর্যাস্তে পূর্বেও কেউ যদি নেসাব পরিমাণের মালিক হয় তাহলে তার ওপরও কোরবানি ওয়াজিব। জীবিকা নির্বাহের জন্য যে পরিমাণ জমি ও ফসলের দরকার তা থেকে অতিরিক্ত জমি ও ফসলের মূল্য অথবা যে কোনো একটির মূল্য নেসাব পরিমাণ হলেও কোরবানি করা ওয়াজিব। একই পরিবারের সকল সদস্য পৃথক পৃথকভাবে নেসাবের মালিক হলে সকলের ওপর আলাদাভাবে কোরবানি ওয়াজিব। কোনো উদ্দেশ্যে কোরবানির মান্নত করলে সে উদ্দেশে পূর্ণ হলেও কোরবানি করা ওয়াজিব। অতএব প্রত্যেক স্বাধীন, ধনী, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক নর-নারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব।

কোরবানির পশু ও তার বয়স :

ইসলামি শরিয়তে গরু-মহিষ, ভেড়া, ছাগল, দুম্বা, উট কোরবানি করাকে বৈধতা দান করেছে। তবে ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে আদায় করা চলবে কিন্তু গরু, মহিষ, উট সাত ব্যক্তি শরীক হতে পারবে। শর্ত একটাই শরীকদার সকলের নিয়ত বিশুদ্ধ থাকতে হবে। এদের মধ্যে একজনেরও যদি লোক দেখানো বা গোশত খাওয়া উদ্দেশ্য হয় তাহলে কারো কোরবানি কবুল হবে না। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, এক বছর বয়সী হওয়া আবশ্যক। তবে যদি ছয় মাসের দুম্বা এবং ভেড়া এরূপ মোটা তাজা হয় যে, দেখতে এক বছরের মত মনে হয় তাহলে ঐ ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কোরবানি করা যাবে। আর ছাগল যতো বড়ই হোক না কেন এক বছর পরিপূর্ণ হওয়া জরুরি, একদিন কম হলেও কোরবানি জায়েজ হবে না। গাভী, মহিষ দু’বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি। উট পাঁচ বছরের হওয়া জরুরি, একদিন কম হলেও কোরবানি হবে না। কোরবানির জন্য মোটা, তরতাজা, সুস্থ পশু হওয়া জরুরি। আতুর, লেংড়া, কানা, কানকাটা, লেজকাটা, দুর্বল পশু দিয়ে কোরবানি বিশুদ্ধ হবে না।

কোরবানির দিন :

তিন দিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কোরবানির দিন হলো দশ, এগারো ও বারো জিলহজ। এ তিন দিনের মধ্যে যেকোনো দিন কোরবানি করা জায়েজ আছে। তবে উত্তম দিন হচ্ছে প্রথম দিন অর্থাৎ দশ জিলহজ। কোনো কারণ ছাড়া বিলম্ব না করা ভালো।

কোরবানির সময় :

জিলহজের দশম দিন ঈদের নামাজ পড়ার পর থেকে জিলহজের বার তাবিখ সূর্যাস্তের পুর্ব পর্যন্ত কোরবানি করা যাবে। তবে ঈদের নামাজের পূর্বে কোরবানি করা যাবে না। ঈদের নামাজ পড়ে এসে কোরবানি করতে হবে। যদি শহরের একাধিক স্থানে ঈদের নামায হয় তাহলে যেকোনো এক স্থানে নামাজ আদায় হয়ে গেলে সব স্থানেই কোরবানি করা জায়েজ হবে।

জবেহ :

কোরবানি দাতা সে নিজেও জবেহ করতে পারবে এবং কোনো আলেম তথা জানলেওয়ালা কাউকে দিয়ে কোরবানি করাতে পারবে। তবে উত্তম হচ্ছে নিজের কোরবানি নিজে করা। মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে নিয়ত করা জরুরি নয় বরং অন্তরের নিয়তই যথেষ্ট। জবেহ করার সময় অবশ্য অল্লাহর নাম নিতে হবে।

কোরবানির গোশত :

কোরবানির গোশত নিজে খাবে এবং গরিব-মিসকিনগণকে খওয়াাবে। উত্তম পন্থা হচ্ছে গোশতকে তিনভাগে ভাগ করা, একভাগ গরিব-মিসকিনকে দান করা। একভাগ আত্মীয়স্বজনকে দেয়া এবং এক অংশ নিজ পরিবারের জন্য রাখা।

পশুর চামড়া :

কোরবানির পশুর চামড়া নিজে ব্যবহার করতে পারবেন এবং অন্যকে হাদিয়াও দিতে পারবেন। আবার মাদরাসার লিল্লাহ ফান্ডেও দান করা যাবে। কিন্তু কোরবানির চামড়া বিক্রি করে কোনো মাদরাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমামের ভাতা দেয়া যাবে না। বিক্রি করলে চামড়ার টাকা একমাত্র গরিব-মিসকিনকেই দান করতে হবে। সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে মাদরাসার গরিব ফান্ডে দান করা।

কোরবানি যেহেতু একটি উত্তম ইবাদত। এ ইবাদতটিও একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া চাই। কারণ আল¬াহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চই  আমার নিকট কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত কিছুই কবুল হয় না, তবে আমার নিকট পৌছে একমাত্র তাকওয়া। (সূরা  হজ : ৩৭)।

(তথ্য সুত্র : আহসানুল ফাতাওয় ৭/৫১০, তিরমিজি ১/১২০, ইমদাদুল ফাতায়া ২/১৬৬, মুয়াাত্তা মালেক ১৮৮)।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com