খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবিদায় ও বরণ উৎসব ‘সেং কুটস্নেম’নাচ ও গানের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত
স্টাফ রিপোর্টার : মৌলভীবাজারের খাসিয়া সম্প্রদায়ের ১২৫ তম বর্ষ বিদায় ও ১২৬ তম নতুন বছরকে বরণের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাসিয়ারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও সাজসজ্জায় সেজে নেচেগেয়ে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন।
শনিবার ২৩ নভেম্বর বিকেলে উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের আয়োজনে আদিবাসী খাসিদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘সেং কুটস্নেম’ অনুষ্ঠানে সিলেট বিভাগের ৭০টি পুঞ্জি থেকে খাসিয়ারা যোগ দেন।
বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি মান্ত্রী জিডিসন প্রধান সুচিয়াং এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: আব্দুস সালাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন।
উপস্থিত ছিলেন, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শাওন মজুমদার, কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডি এম সাদিক আল শাফিন, লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান ও খাসি সোস্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পত্মী, ডেবলছড়া পুঞ্জি প্রধান পিডিশন প্রধান সহ বিভিন্ন পুঞ্জি প্রধানগণ।
বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষে নানান রঙের পোশাক পরে খাসিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নাচগান, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। পরে অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তোলে দেন। খাসিয়াদের উৎসব উপভোগ করতে দেশ বিদেশের পর্যটকেরা এই অনুষ্ঠানে আসেন।
আয়োজকেরা জানান, ‘সেং কুটস্নেম’ বা বর্ষবিদায় খাসিয়াদের সর্বজনীন উৎসব। প্রতিবছরের মতো এবারও কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া পুঞ্জির খেলার মাঠে নানা সমাহারে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এদিন বর্ষবিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান খাসিয়ারা। বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১২৫তম বর্ষকে বিদায় ও ১২৬ তম বর্ষকে বরণ করে নিচ্ছেন তাঁরা। ব্রিটিশ আমল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ২৩ নভেম্বর ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ পালন করা হয়। ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হবে খাসি বর্ষবরণ।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী বলেন, উৎসবের অংশ হিসেবে মাঠের এক পাশে তৈলাক্ত একটি বাঁশ। তার ঠিক ওপরে একটি মোবাইল ফোন রাখা। তৈলাক্ত সেই বাঁশ বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করছেন কয়েকজন। অনেক চেষ্টার পর একজন বাঁশ বেয়ে জিতল মোবাইল। আরেক পাশে তির-ধনুক নিয়ে তির ছুড়ছেন কয়েকজন তরুণ। কেউ আবার গুলতি দিয়ে সামনে রাখা লক্ষ্যে ছুড়ে মারছেন। নারীরা অবশ্য সব প্রতিযোগিতায় নেই। তাঁরা ব্যস্ত পান গোছানোর প্রতিযোগিতায়। মাঠের মাঝে রাখা পান। কে কত কম সময়ে গোছাতে পারেন, সেই প্রতিযোগিতায় নেমেছেন তাঁরা।
মাঠের একপাশে খাসিয়াদের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে মেলা বসে। তবে এবছর অন্যান্য বছরের তুলনায় সময় স্বল্পতার কারনে আয়োজন কিছুটা সীমিত ছিল কারণ একদম শেষ সময়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিনটি আয়োজন করা হয়।
‘সেং কুটস্নেম উৎসবের দিন সবাই মিলে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে আনন্দে নিজেদের সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করেন। অনুষ্ঠানস্থলে পুরো মাঠ জুড়ে মেলা বসে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়ারা পোশাক, পান, তীর, ধনুক, বাঁশ-বেতের তৈরী জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন।
হেলোনা ডিখার বলেন, আমরা প্রতি বছর আমাদের বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠানটি করে আসছি। অনুষ্ঠানটি ঘিরে আমরা খাসি সম্প্রদায়ের সবাই একসাথে জমা হয়ে উৎসবে মেতে উঠি।
খাসি নারী নেত্রী ও মান্ত্রী মনিকা খংলা বলেন, সারাবছর এ দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকি বর্যকে বিদায় জানানোর জন্য। এটি আমাদের ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব, বছরের এদিনে এখানে এসে সবার সাথে দেখা হয়। আনন্দ উদযাপন করি।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি জিডিশন প্রধান সুছিয়াং বলেন,‘সিলেট বিভাগের প্রায় ৭৩টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ এই উৎসবে এসে অংশ নেন। দেশীবিদেশের পর্যটকেরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন। খাসি সেং কুটস্নেম বা বর্ষ বিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন উৎসব।
মন্তব্য করুন