খেলাফত মজলিস আমির মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরীর জানাযায় মানুষের ঢল (ভিডিওসহ)
স্টাফ রিপোর্টার॥ দেশের অন্যতম শীর্ষ আলেম ও বুর্জগ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় আমীর শায়খুল হাদিস অধ্যাপক মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী জানাযায় অংশগ্রহণ করেন নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।
শনিবার ৮ এপ্রিল বিকেলে মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা যোবায়ের আহমদ শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ খেলাফত মজলিস আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অথিতির বক্তব্য দেয়ার পর ইফতারের আগ মুহুর্তে হটাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এর পর তাৎক্ষণিক সেখানকার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিৎিসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানাযার নামাজের ইমামতি করেন সিলেটের ভার্থখলা মাদ্রাসার মুহতামিম ও খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর হাফিজ মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ। জানাযায় অংশ নেন জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাউর রহমান জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি মিজানুর রহমানসহ খেলাফত মজলিস, জামাত, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আঞ্জুমানে আল-ইসলাহ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিরা।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৩ বছর। তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে ৩ মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজন ও গুণাগাহী রেখে যান। অধ্যাপক মাওলানা যোবায়ের ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার শহরের শাহ মোস্তফা রোডস্থ বাসায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মরহুম মাওলানা আব্দুন নূর ইন্দেশ্বরী ছিলেন একজন প্রখ্যাত বুযুর্গ আলেম ।
শিক্ষাজীবনের শুরুতে পিতার প্রতিষ্ঠিত মৌলভীবাজার শহরস্থ আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুমে ১৯৬৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকার প্রাপচীনতম মাদরাসা আশরাফুল উলুম বড়কাটারায় এক বছর পড়ালেখা করেন। ১৯৬৮ সালে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগে অধ্যয়নের পর সিলেটে চলে যান। ১৯৬৯-৭০ সালে জামিয়া হোসাইনিয়া গহরপুরের সানাবিয়্যাহ ২য় ও ফযীলত ১ম সমাপ্ত করেন। ১৯৭১-৭২ সালে মৌলভীবাজারের সুপ্রসিদ্ধ জামিয়া লুৎফিয়া আনোয়ারুল উলূম বরুনায় মেশকাত এবং দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন : ১৯৭৩ সালে নেত্রকোনার মউ মাদরাসায় হাদীসের দরস প্রদানের মাধ্যমে জীবনের প্রথম শিক্ষকতা করেন। ১৯৭৪ সালে দেশের প্রাচীনতম দ্বীনি প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া রায়পুরে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭৫ সালের ১১ই নভেম্বর মৌলভীবাজার ডিগ্রী কলেজে ইসলামিয়াত ও ইসলামিক হিস্ট্রি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত ন। সেখানে ১৯৭৮ সালের শেষ পর্যন্ত প্রায় তিন বছর অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৯-৮০ সালে সিলেটের জামেয়া মদিনাতুল উলুম দারুস সালাম খাসদবীরে হাদীসের খেদমত আঞ্জাম দেন।
১৯৮১-৮৩ এর মাঝামাঝি জামিয়া লুৎফিয়া আনোয়ারুল উলূম বরুণায় সিনিযার মুহাদ্দিস হিসেবে দ্বীনী শিক্ষার ধারা অব্যাহত রাখেন। এছাড়াও ১৯৮৩-৮৫’র আগস্ট পর্যন্ত ইসলামী ইউনিভার্সিটি কুষ্টিয়ার ভাইস চান্সেলরের গাইডেন্সে তাফসিরে মাতুরীদী (ইমাম মাতুরীদী)-এর একমাত্র গবেষক হিসেবে কাজ করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষের অনুবাদক ও নিবন্ধকার ছিলেন।
২০১৪ হতে ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহকারি মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত বেফাকের মহাপরিচালক দায়িত্ব পালন করেন। মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী ১৯৮৯ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত খেলাফত মজলিসের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৭ সালের দিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ২০১০ সাল থেকে বেফাকের যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। বেফাক থেকে চলে আসার পর ফের নায়েবে আমীর হন। ২০২১-২০২২ সেশনে দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর নির্বাচিত হন এবং বিগত ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ খেলাফত মজলিসের আমীর নির্বাচিত হন।
ইউটিউবে দেখুন পাতাকুঁড়ির ভিডিও গ্যালারি
মন্তব্য করুন