গণ পরিষদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানের প্রথম মৃত্যু বার্ষীকী কামনা ও প্রার্থনা
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ মানুষ মরণশীল, জগতের সকল প্রাণীকেই একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মৃত্যু প্রসঙ্গেঁ আমাদের মহান সৃষ্টা ও প্রতিপালক দুজাহানের খালিক-মালিক-সর্ব শক্তিমান মহান আল্লাহ তায়ালা কালামে পাক আল কোরআনে স্বয়ং ঘোষনা করেন-“কুল্লিন নাফসিন জায়িকাতুল মউত।” রুহের জগত আলমে আরওয়া থেকে হাসরের ময়দান পর্য্যন্ত সময়ের মধ্যে মানবাত্বার দুনিয়ার সময়টুকই অনির্ধারিত ও ক্ষনস্থায়ী। সর্বকালের সেরা কবি দার্শনিক ও ইসলামি চিন্তাবিদ শেখ শাদী (র:) যথার্থই বলেন দুনিয়া, এহিত হ্যায় এক মুসাফির খানা, যানে হগাজরুর-ক্যোয়ী আগে-ক্যোয়ি পিছে। অপরিণত বয়সের মৃত্যো হলে ও মূর্দার স্বজন-শুভাকাংখীগণ স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেন না-আকুল কান্নায় ব্যাকুল হন। আফসোস আহাজারি করেন।
ভয়াবহ বৈশ্বিক ব্যাধি করনা কোভিড- ১৯ বিগত দুই বৎসরাধিক কাল যাবত বিশ্বস্ব্যাস্থ সংস্থা-মানব সভ্যতার ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছে। মানব সভ্যতার অগ্রাভিযান এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের ঐতিহাসিক অগ্রগতিতে ঘাতক ব্যাধি ক্যেন্সার সহ বিভিন্ন মরণ ব্যাধির ঔষধ আবিস্কৃত হলেও এখন পর্য্যন্ত করনার কোন ঔষধ আবিস্কার হয়নি। ফলতঃ মৃত্যোর মিছিল চলছে। করনার শিকার হয়ে জাতীয় থেকে স্থানীয় পর্য্যায় পর্য্যন্ত আমরা আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুনী আপনজনকে হারিয়েছি। গেল বছর আঠারোই আগষ্ট ঢাকাস্থ বঙ্গঁ বন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতঃ মৃত্যোকে আলিঙ্গঁন করেন একাত্তোরের অকুত ভয় বীর, মহান গণ পরিষদ এর মাননীয় সদস্য, মৌলভীবাজার জেলা সদরের সাবেক সাংসদ মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ এর সম্মানিত চেয়ারম্যান এম.আজিজুর রহমান। আশি বৎসর বয়সে প্রায় পরিণত বয়সের মৃত্যো হলেও তাঁর এই আকস্মিক মৃত্যোতে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। তৃণমূল থেকে উঠে আসা নির্লোভ নিরহং কারি সৎ ও বিনয়ী সার্বক্ষনিক রাজনীতিবিদ সাধারন পোষাকের এক অসাধারন মানুষ ছিলৈন জেলা চেয়ারম্যান এম.আজিজুর রহমান। বিগত দিনগুলিতে জেলা ও বিভাগ ব্যাপী ঘাতক ব্যাধি করনা ছড়িয়ে পড়লে জেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান, জেলার প্রবীন রাজনীতিবিদও সমাজ সেবী হিসাবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন মানুষের সেবা কল্যান ও ত্রানে। স্ব্যাস্থ্য বিধি মেনে নিয়মিত অফিসে এসেছেন-দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রাণ ভয়ে ভীত হয়ে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে গিয়ে গণ বিচ্ছিন্ন হন নি-বিগত দিন গুলিতে প্রশাসন ও জনগণের সঙ্গেঁই ছিলেন। আমাকে প্রায়ই বলতেন, সাবধানে থাকার জন্য স্ব্যাস্থ বিধি মেনে চলার জন্য, করনা একটি ভয়ানক ভাইরাস-শিশুও বৃদ্ধ দুর্বল এবং প্রতিরোধ মূলক ক্ষমতা হীন বলে করনা আক্রান্ত হন অধিক হারে, মৃত্যোর হার ও বেশি। তিনি আশির কোঠায়, হার্ট বাইপাশের রুগী, আমি সত্তরোর্ধ, বহুবিধ জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত-মাঠ রাজনীতিতে সক্রিয় না হলেও পেশা ও সামাজিক কর্ম কান্ডে কিছু থাকতে হয়। অগ্রজ প্রতিম এবং আমার একজন শুভাকাংখী হিসাবে আমার প্রতি তার মমতা ও দুর্বলতা ছিল ।
এমতাবস্থায় সার্বক্ষনিক সমাজ সেবক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম.আজিজুর রহমান করনায় আক্রান্ত হন। একজন আদর্শ প্রবীন রাজনীতিবিদ এবং বঙ্গঁবন্ধুর সহচর হিসাবে তার উপর দলীয় কেন্দ্রীয় হাই কমান্ডের সুদৃষ্টি ছিল। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে বঙ্গঁবন্ধু শেখ শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ব বিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্ত্তি করা হয়। তাঁর কনিষ্ট ভ্রাতা সাবেক জেলা কমান্ডার অনুজ প্রতীম বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন মারফত তাঁর শারীরিক অবস্থাদির খবর পেতাম নিতাম। আমি দীর্ঘদিন যাবত মৌলভীবাজার জেলা জামে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন রত। পরিণত বয়সে আল্লাহ আল্লাহ করা এবং মসজিদ মাদ্রাসারই কাজ করার কথা। যৌবন কালে পাবলিক লাইব্রেরী, প্রেসক্লাব, রেডক্রশ, জেলাবার ও শিশু একাডেমীর সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের নবনির্মিত জেলা জামে মসজিদটি বিশাল দৃষ্টি নন্দন। জুম্মার নামাজে প্রচুর মুছল্লি সমাগম হয়। আমি এক জুম্মা বারে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি হিসাবে সমবেত মুছল্লিগণের উদ্যেশ্যে আজিজ ভাইর অসুস্থতার সংবাদ জানিয়ে তার সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চাইলাম, আমাদের ইমাম সাহেবকে দোয়া করতে বল্লাম। আমাদের মসজিদে সাপ্তাহিক মিলাদ ও দেয়া মাহফিল আছে। জুম্মার নামাজ শেষে জেলা জামে মসজিদ এর খতিব টাউন কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আলহাজ্ব হযরত মৌলানা মুফতি শামসুল ইসলাম সাহেব জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম.আজিজুর রহমানের রুগ-মুক্তি কামনায় দোয়া করলেন। সাবেক পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আজিজ ভাই এই সংবাদ পেয়ে আমাকে মোবাইল মরফত ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিলেন তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। মৌলভীবাজার এলেই আমাকে ফোন দেবেন, জরুরী কথা আছে। অগ্রজ প্রতিম এম.আজিজুর রহমান মৌলভীবাজার এলেও আমি আর ফোন পাইনি, কারন তিনি এলেন লাশ হয়ে। করনা ভীতি উপেক্ষা করে তাঁর নামাজে জানাজায় প্রচুর মুছল্লি সমাগম হয়। জানাজা শেষে তাঁকে তাঁদের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর পিতা-মাতা পূর্ব পুরুষের পাশে সমাহিত করা হয়। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের গ্রামের বাড়ী গোজারাই-এ-তাঁর চল্লিশা উপলক্ষে বিশাল আকারে মিলাদ শরীফ, দোয়া মাহফিল ও শিরনীর আয়োজন করা হয়। মিলাদ ও মোনাজাত পরিচালনা করে ছিলেন টাউন কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মৌলানা মুফতি শামসুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আমার দেখা মতে স্থানীয় সংসদ দস্য ও জেলা আওয়ামী লেিগর সভাপতি নেছার আহমদ জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আলহাজ্ব এম.মিছবাহুর রহমান, সহ সর্বদলীয় রাজনৈতিক বৃন্দ, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদদের নির্বাচিত সদস্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মীর নাহিদ আহসান সহ জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা বৃন্দ এবং বিভিন্ন কর্মজীবী-পেশাজীবী বুদ্ধিজীবী উপস্থিত ছিলেন। বিশাল আয়োজনটি তাঁর সম্মান ও স্মরনে শান্তিপূর্ণ ভাবে সু-সমাপ্ত হয়।
চল মৌলভীবাজার জেলা সদরে সমকালীন সমাজও রাজনীতির ইতিহাসে একটি উজ্জল নাম এম.আজিজুর রহমান। মৌলভীবাজার সদর উপজেলাধীন গুজারাই গ্রামে বৃটিশ ভারতের শেষ ভাগে শিক্ষিত সম্ভান্ত মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে আজিজুর রহমানের জন্ম। তাঁর পিতা আসাম-বাংলা অঞ্চলের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও চুক্তি কারক আব্দুছ ছত্তার আকলু মিয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল আব্দুছ ছত্তার এন্ড কোম্পানী। তাঁর বন্ধু নিকট প্রতিবেশী উলুআইল নিবাসী মৌলভী ছনাওর আলী একজন ব্যবসায়ী সংবাদ পত্র সেবী ছিলেন। তাঁর কোম্পানীর নাম ছিল ছনাওর এন্ড কোম্পানী। এই দুই বন্ধু ও দুই কোম্পানী মিলে বৃটিশ ভারতে পাকিস্তানী স্বাধীনতার প্রথম ভাগ পর্য্যন্ত সিলেট-আসাম অঞ্চলে ব্যবসা বানিজ্য প্রচুর সুনাম অর্জন করেন। আজিজ ভাইর পিতা আব্দুছ ছত্তার সুঠাম শরীরের অধিকারী একজন সুদর্শন ও বিনয়ী ভদ্রলোক ছিলেন। তাঁর প্রথম পুত্র সিরাজুল ইসলাম মানিক মিয়া লেখা পড়া শেষে পিতার পেশায় যোগ দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। গোল বাটা মুখ, উন্নত নাসিকা, মাঝারি উচ্চতা, ফর্সা চেহারা আরসুঠাম শরীরের অধিকারী এম.আজিজুর রহমান ছিলেন একজন নায়কোচিত ফিগারের আকর্ষনীয় ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব। পঞ্চাশের দশকের শেষে বানিজ্যে স্নাতক ডিগ্রী নিয়ে লেখাপড়ার পাঠ চুকান তিনি। তখন কমার্স গ্রেজুয়েটদের জন্য ইনকামট্যেক্স প্রেকট্রিশনার, কোন বানিজ্যিক-বীমা কোম্পানীর বড় কর্তা হওয়া, আয় রোজগার নিশ্চিত করত: নিজের ভবিষ্যত জীবন সাজিয়ে নেয়া খুব সহজ ব্যাপার ছিল। পিতার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা বানিজ্যে জড়িত হয়ে দাপটের সঙ্গেঁ বিগ বিজনেস মেগনেট হওয়া তাঁর জন্য কোন কঠিন ব্যাপার ছিল না, তাঁর সহ পাঠি বন্ধুদের মধ্যে আব্দুল মূঈদ চৌধুরী সি এস পি হয়ে সচিব হয়েছেন, আব্দুর রব সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে মেজর জেনারেল হয়েছেন, আবু লেইছ চৌধুরী লেঃ কর্ণেল, খালেদুর রহমান মেজর ও ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন, তারা সাতাশ বন্ধু যে যেখানে গেছেন ক্ষমতার শীর্ষ বিন্দুতে আরোহন করেছেন কিন্তু জীবন বিরাগী জীবন শিল্পী আজিজুর রহমান প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা সত্বেও নাচা করি, না ব্যবসা কিছুতেই গেলেন না। তিনি-একজন সার্বক্ষনিক সাংস্কৃতিক সংঘটক ও সমাজ কর্মি হিসাবে নিজেকে বিলিয়ে দেন, কোন রাজনৈতিক কর্ম কান্ডের সঙ্গেঁ তাঁর সম্পর্ক বা সমর্থন ছিল না তবে বাম ভাবধারার প্রতি তাঁর কিঞ্চিত দুর্বলতা ছিল। বাহারি সেনডেল পেন্ট-স্পোর্টস গেঞ্জি বা টি-শার্ট এক হাতে একটি ফুল এবং এক হাতে একখানা কবিতার বই নিয়ে যখন সাফ কাপড়ি এম.আজিজুর রহমান বৈকালিক ভ্রমনে বেরুতেন তখন অনেকের নযর থাকত তাঁর দিকে আমরা তাঁকে চেয়ে চেয়ে দেখতাম। চৌমুহনাস্থ ম্যানেজার স্টলে তাঁর নির্ধারিত আসনে বসে চা-সিঙ্গাড়া খাওয়া ছিল তাঁর নিত্য দিনের নিয়ম। মূলতঃ তিনি ছিলেন উঁচু মাপের অভিনয় শিল্পী। ষাটের দশকের শুরুতে এই শহরে নাট্যাভিনয় ও সাংস্কৃতিক কার্য্যক্রম খুব জোর দার ছিল। ক্লাব সংঘ সমিতি, থিয়েটার ছিল-এসবের মধ্যে নবারুন সংঘের নাম, অবদান ছিল শীর্ষে। তাঁর বন্ধুদের মধ্যে সুনির্মল কুমার দেব-মীন একজন শক্তিমান অভিনেতা ও সু-লেখক ছিলেন। মিন-দাদা সিলেট এর প্রবীন শিল্পী। এম.আজিজুর রহমানের সঙ্গেঁ ষাটের দশকের শুরুতে সম্পর্ক ও সখ্যতা। ইতিপূর্বে তাঁর সঙ্গেঁ পরিচয় থাকলেও সম্পর্ক ছিল না। তাঁর সহোদর জহির উদ্দিন আহমদ (প্রবাসী) আমার সহপাঠি-সহশিল্পী ও বিশিষ্ট বন্ধু ছিল। সেই সুবাদে তিনি আমাদের সহপাঠি বন্ধু-মহলকে স্নেহ মমতা করতেন, নাম ধরে ডাকতেন, সহজ সরল ভাবে তুই করে সম্ভোধন করতেন। ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি আমার নাটক ও গান বাজনার প্রতি আকর্ষন ছিল। সুদর্শন জহির নায়ক, আমি ভিলেন এবং আজিজ ভাইর জন্য কেন্দ্রীয় চরিত্র ভিনেতার-রোলটি নির্ধারিত ছিল। নাট্য চর্চার কারনেও তাঁর সঙ্গেঁ আমার সম্পর্ক গভীর হয়। সত্তোর সালের সাধারন নির্ব্বাচনের প্রাক্কালে বৃহত্তর সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা দেওয়ান ফরিদ গাজির মাধ্যমে বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আহ্বানে আওয়ামী লীগ যোগ দিয়ে মৌলভীবাজার সদর আসনে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য পদে মনোনয়ন পেয়ে রাজনৈতিক অঙ্গঁনে চমক ও আলোড়ন সৃষ্টি করেন ভাগ্যবান রাজনীতিবিদ, শক্তিমান সংঘটক এম.আজিজুর রহমান। দলে যোগ দান করে তিনি দলীয় দায়িত্ব প্রাপ্ত- মহকুমা আওয়ামী লীগের সম্পাদক নিযুক্ত হন। নবীন রাজনীতিবিদ এম.আজিজুর রহমান আজীবন তিনি তাঁর প্রিয় দল আওয়ামী লীগকে মনে প্রাণে ধারন-লালন করেছেন আওয়ামী লীগের ভাঙ্গঁনে-বিভ্রান্তিতে তিনি বরাবরই মূল ধারা-বঙ্গঁ বন্ধুর আদর্শের অনুসারি ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন মহকুমা-জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক, সভাপতি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সহ-সাধারন সম্পাদক এর গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন। সত্তোরের সাধারন নির্বাচনে মহকুমা সদরে এম.পি. পদে তাঁর জন্য নিরলস ভাবে কাজ করেছি আমরা। জনসভা সমূহে জ্বালাময়ী ভাষন দিয়েছি। আমরা এই আমাদের মধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মোঃ ফয়জুর রহমান (উপাধ্যক্ষ। পরলোকে) মহকুমা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান মুজিব, সাবেক সম্পাদক এম.এ.ওয়াদুদ (মহকুমা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি পরলোকে) ছাত্রলীগের নব নির্বাচিত সভাপতি সুদর্শন দেওয়ান আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী প্রমুখ। বঙ্গঁবন্ধু ও জয় বাংলার জোয়ারে কোন প্রার্থী প্রতিযোগিতায়ই আসতে পারেন নি-আজিজ ভাই বিপুল ভোটে এম, পি, এ, হয়ে সংসদীয় রাজনীতির শুভ সূচনা করেন। পাক ফৌজি প্রেসিডেন্ট লেঃ জেনারেল এ,এম, ইয়াহিয়া খানের বাঙ্গাঁলি হত্যা ও নিধন যজ্ঞ পঁচিশে মার্চের অপারেশন সার্চ লাইটে-নিজ বাড়ি গুজারাই খান সেনাদের হাতে গেপ্তার হন পূর্ব পাক প্রাদেষিক পরিষদ এর নবীন সদস্য এম.আজিজুর রহমান। খাঁন সেনাদের দলতাকে বন্দী করে তাঁদের হেড কোয়ার্টার ও ‘টর্চার সেল’ পি.টি.আই-এ নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে বঙ্গঁবন্ধু ও ছয়দফার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে চাপ দিলে তিনি অস্বীকার করেন, নির্যাতনের শিকার হন। তিনি প্রায়ই আমাকে বলতেন-“তোর জন্য পাকিস্তানী সিপাহীর হাতে অপমানিত-প্রহৃত হয়েছি “তোমহারা ভাই গুন্ডা মুজিব ক্যাহা হ্যায় উছকাপাতা বাতাও”। দুই দিন আগে আমি ২৩শে মার্চ একাত্তোরে চৌমুহনা চত্বরে পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঘোষিত দেশব্যাপী প্রতিরোধ দিবস এর কর্ম সূচীতে চৌমুহনা চত্বরে ছাত্র লীগ আয়োজিত সভায় ছাত্রলীগ এর নব-নির্বাচিত সভাপতি দেওয়ান আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী এবং সাধারন সম্পাদক নূরুল ইসলাম মুকিত (স্বাধীনতার সংঘটক। নির্ভীক ও নির্লোভ মুজিব সৈনিক। অকাল প্রয়াত।) সহযোগে পাকিস্তানের পতাকা এবং পাকিস্তানী জাতির জনক মিঃ জিন্নাহর ছবি পুড়িয়ে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিব এর ছবি ও স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা উড়াই। চৌমুহনাস্থ মুক্তা ফটো ষ্টুডিও সেই ছবি উঠিয়ে ছিল, পরে আমি ছবিতে দেখেছি পাকিস্তানের পতাকা এবং জিন্নাহ সাহেবের ছবি কি করুন ভাবে পুড়ছে। স্বাধীন বাংলা দেশ না হলে পাকিস্তান টিকে থাকলে রাষ্ট্র দ্রৈাহিতার অপরাধে আমাদের ফাসি হত। আজিজ ভাই ও আমার নামের মিল দেখে পাক সেনারা আমাকে তাঁর ভাই এবং ছবিতে আমার লম্বা-চুল-গুপ দেখে গুন্ডা-পান্ডা বলে ভেবেছিল।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ভাগে মৌলভীবাজারে সেনাদের পরাজয় ও আমাদের বিজয় হলে পাক ফৌজ আজিজ ভাই সহ বাঙ্গাঁলি বন্দীদেরকে নিয়ে সিলেট অভিমুখে পিছু হটে। সিলেট জেলা কারাগার থেকে আজিজ ভাই ও অন্যান্য বন্দীগণকে মুক্ত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে এম.আজিজুর রহমান এম.পি.এ. সি-ইন-সি-স্পেশিয়্যাল ব্যাচ বিশেষ প্রশিক্ষন প্রাপ্ত মুক্তি যোদ্ধা হিসাবে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, এম.পি.এ. থেকে এম.সি.এ- (মেম্বার অবদি কনষ্টিটুয়েন্ট এসে ম্বলি। আমাকে প্রায়ই বলতেন তাঁকে এম.সি.এ. হিসাবে গুরুত্ব দিয়ে যেন লিখি-কারন এমন সুযোগত আর কারো হবে না) হয়ে তিনি কৃতিত্ব পূর্ণ অবদান রেখেছেন। চার নম্বর সেক্টারে তাঁকে যুদ্ধের সময় দেখেছি। বহুবিধ সমস্যা অভাব অভিযোগের মাঝেও তাঁর মুখে একচিলতে মায়াবি মিষ্টি হাসি লেগে থাকত। সেখানে কষ্ট ও বেদনা থাকলেও তা বুঝা যেত না। ন’ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে পাক বাহিনীকে পরাজয় মেনে নিতে হয়। আট ডিসেম্বর মৌলভীবাজার মুক্ত হলে তিনি এলাকার নির্বাচিত জন প্রতিনিধি হিসাবে আনুষ্ঠানিক ভাবে মৌলভীবাজারের মহকুমা প্রশাসক ও মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট এর অফিসে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। তাঁর কনিষ্ট দুই ভ্রাতা খুর্শেদ আহমদ (অকাল প্রয়াত) এবং জামাল উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। স্বাধীনতা উত্তর কালে তাঁর কনিষ্ট ভ্রাতা আলহাজ্ব মাহমুদুর রহমান মৌলভীবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে একজন ধর্ম প্রাণ সৎ জন প্রতিনিধি এবং ন্যায় বিচারক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি ও প্রয়াত। তাঁর একাধিক পরিবার সদস্য রাজনীতিও সমাজ সেবায় নিবেদিত আছেন। তাঁর কনিষ্ট ভ্রাতা, নাজমুল ইসলাম নজমুল জেলা ছাত্র লীগ এর বলিষ্ট নেতা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংঘটক এবং একজন নির্ভীক-নির্লোভ-নিবেদিত প্রাণ মুজিব সৈনিক ছিলেন। একটি মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় তিনি ও অকাল প্রয়াত। আজিজ ভাইর ভ্রাতস্পুত্র নাহিদ আহমদ আওয়ামী যুবলীগ-মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন রত। স্বাধীনতা উত্তর কালে আমি ছাত্রজীবন ও ছাত্র রাজনীতি শেষে একজন স্বপ্নবাজ মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে নূতন সমাজ গঠনের লক্ষে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নূতন রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষে দাদার প্রদর্শিত পথ মত ও দর্শনে বিভোর হই, আমার বন্ধু মহলের প্রায় সকলেই নূতন ধারার রাজনীতির সমর্থক ছিলেন। আমাকে মহকুমা কৃষক লীগ সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় আজিজ ভাইর সঙ্গেঁ রাজনৈতিক মত পার্থক্য গত কারনে কোনদিন মনোমালিন্য হয়নি তবে কিঞ্চিত রাজনৈতিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়। অবশ্য আমার বিয়ের পর সামাজিক ও পারিবারিক ভাবে আজিজ ভাইদের পরিবারের সঙ্গেঁ আমার সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই আদিতে উলুআইল নিবাসি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সংবাদপত্র সেবী মৌলভী ছনাওর আলীর কনিষ্ট কন্যা মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে দুই পরিবারের পারিবারিক সম্পর্কের সুবাদে আমি হয়ে গেলাম আজিজ ভাইর কনিষ্ট ভগ্নিপতি ও নাজমুলের দুলাভাই, জীবনের শেষ প্রান্ত পর্য্যন্ত এখন ও সেই সু-সম্পর্ক বহাল আছে।
এই স্বল্প পরিসরে, স্বাধীন বাংলা দেশের পঞ্চাশ বৎসরে রাজনীতির অন্যতম প্রাণ পূরুষ সার্বক্ষনিক রাজনীতিবিদ জননেতা এম.আজিজুর রহমানের বর্ণীল বর্ণাঢ্য কর্ম ও রাজনৈতিক জীবনের পূর্নাঙ্গঁ চিত্রাংকন সম্ভব নয়। সর্ব্বোপরি সম্প্রতি আমি কয়েকটি জটিল ব্যাধি সহ ঘাতক ব্যাধি করনার আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী লেখালেখিও চলাফেরার শক্তি নাই। এমতাবস্থায় আমার প্রিয় আজিজ ভাইর মৃত্যোর বৎসরান্তে তাঁর সম্মানও স্মরনে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনায় কিছু স্মৃতি কথা-আমার দেখা আজি ভাই-কিংবা আজিজ ভাইকে মনে পড়ে-স্মৃতি চারন করে সবিনয়ে কিছু প্রস্তাব পেশ করলাম।
আওয়ামী লীগার হিসাবে তিনি ছিলেন আপোষ হীন রাজনীতিবিদ হিসাবে তিনি ছিলেন সার্বক্ষীনক হউল টাইমার। দল ক্ষমতায় থাকুক কিংবা বিরোধী দলে তিনি থাকতেন সমান ভাবে সক্রিয়। পঁচাত্তোরের পনেরোই আগষ্টে স্বাধীনতার মহান স্থপতি মহামান্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবকে একদল বিপথগামী সেনা সদস্য নির্মম ভাবে হত্যা করে বানিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মুশতাক আহমদ নিজেকে পনেরোই আগস্টে সারথি হিসাবে ঘোষনী করে ডেমক্রেটিক লীগ গঠন করেন। মফস্বল পর্য্যায়েও মুশতাকি কার্য্যক্রম শুরু হয়। নির্লোভ রাজনীতিবিদ আজিজুর রহমান তাঁর সহকর্মি-বিশেষত: ছাত্র যুবকদেরকে নিয়ে দলকে বুক আগলে রাখেন-ভাঙ্গঁন হতে দেননি। জেনারেল এর্শাদী স্বৈর শাসন আমলে পনোরো দলীয় জোটের গন আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল সমুজ্জল। এ সময় সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হলে আমি পেশাজীবী পরিষদ এর যুগ্ম আহ্বায়ক নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হই-এখানে ও তাঁর সমর্থন ছিল। গন আন্দোলন শেষে একান্নব্বই সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এম.আজিজুর রহমান আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসাবে মৌলভীবাজার তিন নির্বাচনি এলাকা থেকে বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বি.এন.পি-র হেভী ওয়েট প্রার্থী- দলের প্রতিষ্ঠা কালীন প্রভাবশালী নেতা এম.সাইফুর রহমান তাঁর প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা সত্বেও সাংঘটনিক দুর্বলতার কারনে জয় লাভ না করতে পারলেও বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ট্যেকনোক্র্যাট কোটায় এম.সাইফুর রহমানকে অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। জেলা সদরের সংসদ সদস্য হিসাবে এম.আজিজুর রহমান অর্থমন্ত্রী এম.সাইফুর রহমানের সঙ্গেঁ যোগাযোগ রাখতেন-স্থানীয় সার্কিট হাউসে আমার-আমাদের সম্মুখেই স্থানীয় উন্নয়নে মত বিনিময় করতেন। অর্থমন্ত্রী এম.সাইফুর রহমান স্থানীয় সাংসদ, এম.আজিজুর রহমানকে আমার এম.পি. সাহেব বলে সম্ভোধন করতেন, বয়োঃ কনিষ্ট হিসাবে স্নেহ মমতা প্রদর্শন করতেন। এম.পি আজিজ ভাই ও তাঁর বয়োঃ জ্যেষ্ট অর্থমন্ত্রী মহোদয়কে বড় ভাই বলে সম্ভোধন করতেন। জন সভায় কোন দিন কোন আপত্তিকর অশালীন মন্তব্য করেন নি। একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে সকল রাজনীতিবিদদের প্রতি তাঁর একটি সম্মান বোধ ছিল। একজন সাংসদ হিসাবে গাড়ি বা প্লট বানিজ্য করেন নি। পরিনত বয়সে তাঁর পোষাক আশাক বেশ ভূষায় ও পরিবর্তন আসে-পাজামা পাঞ্জাবি মুজিব কোর্ট-লুঙ্গিঁ পাঞ্জাবি ছিল তাঁর সাধারন পোষাক। পরিনত বয়সে পবিত্র হজব্রত পালন শেষে এক মুখ সেফেদ সাদা দাঁড়িতে থাকে বেশ মানাত।
তাঁর কর্মজীবনের শেষ কর্মস্থল ছিল মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ-তিনি জেলা পরিষদ এর সরকার মনোনীত প্রশাসক, প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান- মৃত্যোর সময় ও তিনি মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর কার্য্য কালে জেলা পরিষদ এর উদ্যোগে পাবলিক লাইব্রেরী এবং সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন শহীদ মিনার এলাকায় বঙ্গঁ বন্ধুর ম্যুরাল সহ গুরুত্ব পূর্ণ স্থাপনা নির্মান করেন।
বিগত বই মেলায় প্রকাশিত বৃহত্তর সিলেটের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আমার গবেষনা গ্রহ্ণ “আমার দেখা একাত্তোর-মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কথা” রচনায় তাঁর বহু মূল্যবান ও প্রাসঙ্গিঁক পরামর্শ ছিল। প্রায় সন্ধ্যায় ফোন করতাম আপনি ফ্রি নাকি, আজিজ ভাই বলতেন, চলে আয়। ঝাল না ফল জানতে চাইলে বলতেন, ঝাল আর খেতে পারেন না, গ্যেসপ্রবলেম করে, বলতেন ফল নিয়ে আয়। আমি আমার প্রিয় শেখ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ সহ গ্রামের বাড়ি গুজারাই ছুটতাম। মৌমাছি কন্ঠের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সাংবাদিক শেখ সিরাজকে তিনিও খুব স্নেহ করতেন। আমার উপর তাঁর জোর দাবী ছিল মুক্তিযুদ্ধের মাঠ পর্য্যায়ের প্রকৃত ও পূর্নাঙ্গঁ ইতিহাস রচিত হয় নি। নূতন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসের তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করার দায়িত্ব আমাদের। একাত্তোরের আমরা-মাঠের মুক্তিযোদ্ধারা-একাত্তোর-একাশির উর্ধ্বে, কাজেই আমাদের আর সময় নষ্ট করা উচিত নয়। তাঁর নিজেরও এক খানি স্মৃতি কথা লেখার খেয়াল ছিল-সে সময় আর তিনি পান নি। ইতিপূর্বে একবার আমাদের মৌলভীবাজার এর পরিচালক বিশিষ্ট চিত্র সাংবাদিক স্নেহ ভাজন সুহেল আহমদ আমাকে এসে দাবী জানালো ষাটের দশকের সংস্কৃতি ও নাট্য চর্চা নিয়ে একটি লাইভ টকশো করতে চান, আমি বলে দিলাম আজি ভাই রাজি হলে আমি সম্মত আছি। স্বাভাবিক ভাবে সংস্কৃতি অন্তপ্রাণ এম.আজিজুর রহমান সম্মতি প্রদান করলে বিশিষ্ট নাট্যজন ও উপস্থাপক স্নেহভাজন, আ,স,ম, সালেহ্ সুহেল এর প্রাণ বন্ত উপস্থাপনায় আমাদের মৌলভীবাজার এর প্রযোজনায় এম,সি,এন, এর-টকশো-টি দারুন দর্শক প্রিয়তা পেয়েছিল। আমি ও আজিজ ভাই নবাব সিরাজুদ্দৌলার সংলাপ আওাড়িয়ে ছিলাম- উচ্চারন করেছিলাম।দর্শকদের কাছ থেকে প্রশংসিত হয়েছিলাম। এম.সি.এন. কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানাচ্ছি আজিজ ভাইর মৃত্যো বার্সিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানটি পূনঃ প্রচার করা হউক। বাংলাদেশে বাঙ্গাঁলি সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে-যেজাতি বীরের মর্য্যাদা দেয় না সেদেশে বীরের জন্ম হয় না, যেসমাজ গুনীর কদর করে না, সে সমাজে গুনীর জন্ম হয় না।
জাতি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তাঁকে সম্মান ও স্কীকৃতি দিয়েছে, সামাজিক ভাবে এই সমাজ তাঁকে প্রয়োজনীয় সম্মান দিতে পারেন। গুটি কতেক অসৎ উচ্চাবিলাসি রাজনীতিবিদ এর কারনে রাজনীতি আজ রাজনীতিবিদদের হাতে নেই, সুস্থ রাজনীতিও প্রশ্নবিদ্ধ। দূবৃত্তায়ন-বানিজ্যায়ন-হাইব্রিড আর কাউয়া কালচারের জোয়ারের মাঝে সার্বক্ষনিক রাজ নীতিবিদ এম.আজিজুর রহমান ছিলেন-সাদা-সফেদ-পরিষ্কার-অবৈধ লেন দেন ও কলংকের কালিমা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তাঁর সততা ও সাধুতার সম্মান ও স্মরনে জেলা পরিষদ এলাকায় তার নামে একটি মুক্তি যুদ্ধ বিষয়ক যাদুঘর ও শিশু পাঠাগার গড়ে তোলা যেতে পারে।
আশির দশকে আমি দীর্ঘদিন জেলা শিশু একাডেমির সেক্রেটারি ছিলাম-তাঁর শুভেচ্ছা ও সহযোগিতা ছিল-তিনি অকৃতদার হিসাবে কোন শিশুর পিতা না হলেও শিশুদের প্রতি তাঁর সীমাহীন ভালোবাসা মায়া মমতা ছিল। তিনি শিশুদেরকে খুবই স্নেহ করতেন। বর্ত্তমান প্রজন্ম বিভিন্ন প্রশ্নে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও শিশু-রা-নিস্পাপ-ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুর অন্তরে- আজকের শিশু আগামী দিনের রাষ্ট্র নায়ক, তাই আগামী দিনের রাষ্ট্র নায়ক গণকে রাষ্ট্রের উপযুক্ত নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষে এখন থেকেই কার্য্যক্রম শুরু করতে হবে। তাঁর নামে ফাউন্ডেশন, ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট গঠন করে ও ধর্ম রাষ্ট্র ও সমাজ কল্যান মূলক কাজ করা যেতে পারে। ব্যক্তি আজিজুর রহমান অকৃতদার তাঁর ব্যক্তিগত ঘর সংসার না থাকলেও তাঁর সহকর্মি গণই ছিলেন তাঁর পরিবার সদস্যের মত। সর্ব্বোপরি মৌলভীবাজার জেলা সদরের মাননীয় সদস্য, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভাপতি নেছার আহমদ মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের দক্ষ সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব এম.মিছবাহুর রহমান তাঁর খুবই স্নেহ ভাজন সহকর্মি ছিলেন। তাই জেলা বাসি প্রত্যাশা করেন তারা এ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবেন। মৌলভীবাজার এক এর মাননীয় সাংসদ মাননীয় মন্ত্রী আলহাজ্ব এম.শাহাব উদ্দিন ও তাঁর বয়ো: কনিষ্ট ও প্রিভাজন ছিলেন মাননীয় মন্ত্রী ও তাঁকে শ্রদ্ধা করেন বিধায় তিনিও বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারেন। সংরক্ষিত মহিলা আসনের মাননীয় সাংসদ সৈয়দা জহুরা আলা উদ্দিন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল হোসেন এবং পৌর মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান ও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন বলে আমরা আশাবাদি। আঠারোই আগষ্ট একাত্তোরের অকুত ভয় বীর, গণ পরিষদ এর মাননীয় সদস্য ও সহজ সরল সাদা মনের সৎ মানুষ- মহৎ মানুষ অগ্রজ প্রতিম এম.আজিজুর রহমানের প্রথম মৃত্যোবার্ষিকীতে তাঁর উজ্জল স্মৃতির প্রতি সুগভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি-তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি-মহান মালিক তাঁর বেহেশত নসীব করুন- এই মোনাজাত সহ আমীন-ছুম্মা আমীন।
[ষাটের দশকের ছাত্র লীগ নেতা সাংস্কৃতিক সংঘটক। মুক্তিযোদ্ধা। কলামিষ্ট। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার জেলা বারও প্রেসক্লাব।]
মন্তব্য করুন