গাভী নিয়ে গেছে চুর, অঝোরে কাঁদছেন শ্রীমঙ্গলের চম্পাবতী
স্টাফ রিপোর্টার॥ চম্পাবতীর দেড় লক্ষাধিক টাকা মুল্যের কালো একটি গাভী ও সাদা বাছুর নিয়ে গেছে চোরেরা। দীর্ঘ দিন পোষে বড় করা একমাত্র সম্বল হারিয়ে সত্তোর্ধ চম্পাবতী নায়েক এখন দিশেহারা। তারা কান্না থামছেই না। অঝোরে কাঁদছেন।
প্রতিদিনকার মতো তার বাড়ীর পাশে ছনখলা সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে রশি দিয়ে খোঁটায় বেধে গরু চড়াতেন। স্বামী হারা বিধবা চম্পাবতী শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের ছনখলাবস্তি এলাকার বাসিন্দা।
সোমবার ১ এপ্রিল দুপুর একটার দিকে দুটি গাভী ও একটি বাছুরকে জল খাওয়াতে যান স্কুল মাঠে চম্পাবতী। তিনি গিয়ে দেখতে পান একটি গাভী ও একটি বাছুর নেই। শুধু খুটাটা পড়ে আছে। এর পর থেকে চম্পাবতী ও দুই ছেলের বউ, ছেলে নির্মল ও পরিমল নায়েকসহ আত্মীয় স্বজন সকলে মিলে গাভী ও বাছুর খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আশা পাশের এলাকা গান্ধী, আমরাইল, রাবার বাড়ী বৈরাগী, রায় বাড়ী, মুছাই, কালেঙ্গা, সাতষট্টি, আটষট্রি, সাতাইশ, উনত্রিশ, জেবি, সাতগাও, সিন্দুরখান সব জাগায় খোঁজা হয়েছে। আঐ রেলের উত্তরে সারা ভুনবীর ইউনিয়ন এলাকায় খোঁজা খুঁজি করা হয়। যদি কেউ পান জানাতে স্থানীয় মসজিদের মাইকিংও করানো হয়। কিন্তু গত দুদিনেও সারা এলাকায় হণ্যে হয়ে বাছুর ও গাভী দুটিরই কোনও খোঁজ পাননি।
চম্পাবতীর দেবর ধনঞ্জয় নায়েক ছিলেন নি:সন্তান। তিনি মারা যান তিন চার বছর আগে। ধনঞ্জয়ের বউয়ের ফান্ডের টাকা তুলে একটি গাভী কিনেন। এই গাভী লালন পালনের পর দুটি গাভী ও একটা বাচুর হয়।
সোমবার সকালে এ দুটি গাভী ও একটি গরু বাচুর স্কুল মাঠে খুটায় বেধে ঘাস খেতে দেন। দুপুরে গরুগুলোকে মার গুড়া জল খাওয়াতে গিয়ে দেখেন তিনটি গরুর মধ্যে দুই টি নেই। দিনে দুপুরে একটি গাভী ও বাচুর নিয়ে যাওয়ার পর থেকে এ বাড়িতে এক শোকের আবহ সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারের কারো মন ভাল নেই। একমাত্র সহায়সম্বল গরুদুটি হারিয়ে সবাই অঝোরে কাঁদছে। কোথাও গিয়ে পাচ্ছেন না এতটুকু শান্তনা। কোথায় পাবে গরু কোথায় পাবে এর বিচার।
চম্পাবতী কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘দুইদিন ধরে ঘরের চুলায় আগুন নেই। মুড়ি আর চা খেয়ে কোন রকম দিন কাটাই। শুধু গরু বাছুর খোঁজে দিন রাত কাটছে পরিবারের সকলের।’
চম্পাবতী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দুইহাত কড়ো জোড় করে প্রার্থনা জানিয়ে কেঁদে কেঁদে বলেন, “মাগো। আপনার কাছে এই অনুরোধ। প্রার্থনা। আমরা যে বাচ্চা কাচ্চা জন্ম করছি। এই বাচ্চা কাইচ্চার ভবিষ্যতের জন্য সম্পদ বানাইছি। গরু। আমরা বাড়ি থাকতে কিভাবে যে চোরাইয়া গরু নিছে এটাতো কইতে পারলাম না। গাভী একটা। এর পরে সাদা ঢেকি। তিনটা গরু ডিগ্রা দিসলাম। তিনটা গরুর ভিতরে একটা গরু রেখে দুইটা গরু লইয়া চলি গেছে। এরকমভাবে যদি তারা চুরি চামারি করে মা তাহলে আমরা কেমনে বাচমু। আর আমরার বাইচ্চা কাইচ্চা কিভাবে বাঁচিয়া যাইবো। আমরা কোনও আছে। কিচ্ছু তো নাই। কিছু বলতে হামদের কিচ্ছু নাই। এ দুইটা গরু বাচুর ছাড়া। এটাই আমরার সম্পদ। এ সম্পদটাই যদি চুরি করিয়া নিয়া যায় আমরা কিভাবে চলমু, মা ?। আমাদের বেঁচে থাকতে যদি বাচ্চা কাইচ্চা চলতে না পারে তাহলে বাইচ্চা কাইচ্চাদের বাইচ্চা কাইচ্চা কিভাবে সামনের দিনে চলবেক। আমাদের সময় যদি এ দুর্গতি আর তাদের সময় কি হইবো?। এটাই মাগো, আপনারে প্রার্থনা কইরা কই। আপনি এইটার ব্যবস্থা নেন। এই চোর চিনার বৈদ্য এরা যে এইভাবে করতেছে অন্দোলন (চুরি)। এই অন্দোলন (চুরি) যদি তারা সবদিন করতে থাকে আমরা কেমনে চলমু। আমরার তো চলার মতো কিচ্ছু নাই। এইটা আপনার কাছে আমার প্রার্থনা। তুমি এই চোররে কোনরকম দমন করো মা। আর কিভাবে আমরা চা শ্রমিক ভালো হইয়া চলমু এটার আপনি একটা ব্যবস্থা নিবেন। আপনার কাছে আমার এই অনুরোধ মাগো।”
মন্তব্য করুন