গ্রামে কবরস্থান তলিয়ে যাওয়ায় ৬ কিলোমিটার দূরে টিলায় দাফন
স্টাফ রিপোর্টার॥ শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় রাজনগর উপজেলার সুনামপুর গ্রামের নজির মিয়া (৭৫) মারা গেছেন। পরদিন দুপুর ৩ জুলাই ২টায় সুনামúুরস্থ কুশিয়ারা নদীর বাঁধের উপর জানাযা শেষে ৬ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি এলাকা দাফন করা হয়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৭ সন্তানের জনক নজির মিয়া বার্ধক্য জনিত কারণে তার গৃহে মারা যান। ৭ সন্তানের মধ্যে ৫ মেয়েদের সবাই শশুরালয়ে। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মমশাদ কোরআনে হাফেজ। ছোট ছেলে প্রায় অর্ধ্ব কোরআন মুখস্থ করেছে।
প্রয়াত নজির মিয়ার ঘরের চারিদিকে শুধু জল আর জল। গোসল করিয়ে জানাযার জন্য নৌকা দিয়ে বহন করে পাশের ওয়াপদা সড়কে তার জানাযার নামাজ পড়া হয়। জানাযায় ইমামতি করেন সুনামপুর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আলী হোসেন। ভাটি এলাকার কুশিয়ারা অঞ্চলের এই গ্রামে থৈ থৈ করছে জলে। জানাযার দুটি যায়গার মধ্যে সুনামপুর জামে মসজিদ ও সুনামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ জলে একাকার। বাধ্য হয়ে এই সড়কে জানাযা পড়েন গ্রামের মানুষজন। জানাযা শেষে এক করুন দৃশ্য চোখে পড়ে। প্রয়াতের স্বজনেরা লাশ কাঁেদ বহন করে কুশিয়ারা নদীতে নিয়ে যান। সেখানে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় তুলে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি এলাকাস্থ উজানের নয়াটিলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিরদিনের জন্য দাফন করা হয়।
প্রতিবেশিরা জানান, এই সময় ছেলেদের মধ্যে অন্যরকম এক চাপা কান্না বিরাজ করে। নিজ গ্রাম ছেড়ে ৬ কিলোমিটার দূরে পিতাকে শায়িত করছেন এমনটা যেন মেনে নিতে পারছেন না তারা। বন্যা না আসলে হয়তো তারা নিজ গ্রামে পিতাকে কবর দিতে পারতেন। প্রয়াত নজির মিয়ার মত ভাটি এলাকার আরও বহু গ্রামের মানুষকে নয়াটিলা ও পাশের ময়দান টিলায় শায়িত করা হয়েছে।
জানা যায়, কুশিয়ারার পাড় ঘেঁষে এই প্রথম সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছে। এই বন্যায় নদী পাড়ের মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার প্রায় ৫০টি গ্রাম তলিয়ে নিয়ে গেছে। গেল ২০০৪ সালে প্রায় এরকম বন্যা হয়েছিল কুশিয়ারা জুড়ে। তবে এতা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
মন্তব্য করুন