ঘুরে আসুন ইন্ডিয়া, দেখে আসুন প্রাচীন সমরাজ্য
তুহিন আহমদ পায়েল॥ অনেক দিন থেকে ইন্ডিয়া যাবার পরিকল্পনা ছিল। তাই ঐতিহাসিক স্থান দর্শন আর ঘুরে বেড়ানোর জন্য চলে গেলাম ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়া ভ্রমন ছিল ট্রেন করে। বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়া ট্রেন সপ্তাহে তিন দিন যায়। তাই পরিকল্পনা ছিল ট্রেন। কারন অনেক লোক একসাথে আনন্দ করে যাওয়া যায়। নভেম্বর মাস তখন। একটু একটু ঠান্ডা পড়েছে। ঢাকা ক্যান্টরমেন্ট স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে যায়, তাই সময় মত হাজির হলাম স্টেশন। সকাল ৬টা হয় তখন, অনেক মানুষের ভীড়। দীর্ঘ লাইনে সারি সারি ভাবে সবাই লাইনে দাড়িয়ে আছে। আমরাও দাড়ালাম। চেকিং শেষ করে নিদিষ্ট আসনে বসলাম। সময় মত ট্রেন ছাড়ল। ট্রেন এ সব রকম খাবার পাওয়া যায় তাই সকালের নাস্তা করলাম।
যাত্রী সবাই নিজেদের মত কেউ ঘুমাচ্ছে, কেউ গল্প করছে। দুপুর ১:৫০ মিনিট দর্শনা স্টেশনে পৌছালাম। সেখানে আমাদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হল। আবার ট্রেন করে যাত্রা শুরু। তার একটু পরে ইন্ডিয়া বর্ডার। ইন্ডিয়া স্টেশন গেদেতে আমাদের আবার নামতে হল চেকিং এর জন্য। তা শেষ করে ট্রেনে উঠে আসনে বসতেই ট্রেনের যাত্রা শুরু হল কলকাতা স্টেশন এর উদ্দেশ্যে। অনেক ভালো লাগছিল ট্রেন ভ্রমনটি। চারদিকে তাকালে সবুজ বৃক্ষ গাছপালা, মাঠ পেরিয়ে যাচ্ছে। বিকালে স্নিগ্ধ বাতাস মিলিয়ে অপরুপময় দূশ্য দেখা যাচ্ছিল। সন্ধ্যা ৭.৫০ মিনিটে কলকাতা স্টেশনে পৌছালাম। ট্রেন থেকে নেমেই চারদিকে তাকিয়ে দেখি এটা তো আমাদের ঢাকা স্টেশন এরমত। প্রথমবার এসেছি অপরিচিত জায়গা তাই আমরা স্টেশন থেকে বের হয়ে একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে নিলাম। গন্তব্যস্থল নিউমার্কেট। ট্যাক্সি সরু রাস্তা দিয়ে চলতে শুরু করলো। কলাকাতার সেই পুরাতন ট্যাক্সি চড়ার সৌভাগ্য আমার হল। কারন অনেক সময় দেখতাম তাদের ট্যাক্সি কিন্তু চড়া হয়নি। চারপাশ দেখতে দেখতে নিউমার্কেট এলাকায় পৌছে গেলাম। নিউ মার্কেট এলাকায় অনেক স্ট্রিট রয়েছে- মারকাস স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, মির্জা গালিব স্ট্রিট, ফ্রী স্কুল স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিক এর আশপাশে অনেক হোটেল রয়েছে। ভালো দেখে একটা হোটেল এ উঠলাম। হোটেল এ ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবারের জন্য বের হলাম তখন একটু আশপাশ দেখে নিলাম কলকাতা শহর। অনেক কান্ত লাগছিল তাই খাবার শেষে হোটেল এ ফিরে সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম। পর দিন সকাল বেলা উঠে নাস্তা করে বের হলাম কলাকাতা দেখতে। কলকাতায় একটু কম যানজট,সরু রাস্তা, জিনিসপত্র কম দামে পাওয়া যায়। মানুষগুলো একটু বেশী পুরনো নয়ত কিন্তু একটু আধুনিক ।
প্রথম দেখায় কলকাতাকে আমাদের ঢাকার চেয়ে অনেক বেশী পুরনো আর মলিন লাগতে পারে। কিন্তু একটু খেয়াল করে এর লাইফস্টাইল আর ইতিহাস লক্ষ্যে করলে বোঝা যায় যে শহরটা দারুন। আমাদের ঢাকার কলকাতায় হয়ত বড় বড় শপিং মল নেই ঠিকই কিন্তু ইতিহাসের সাক্ষী এই শহরটা যতœ করে আগলে রেখেছে তা রীতিমত বিস্ময়কর। সেদিনের মত ঘুরাঘুরি কম হল কারন দিল্লি যাবার টিকেট করতে হবে। টিকেট করতে চলে গেলাম ডালুস নামক স্থানে যেখান থেকে বিদেশীদের, যে কোন জায়গার টিকেট দেওয়া হয়। রাজধানী এক্সপ্রেস এর টিকেট করলাম। পরের দিন দিল্লি যাব। হোটেল পরিবর্তন করলাম। নিউ মার্কেট এর ডান দিক থেকে হেটে একটু সামনে গেলেই বিগ বাজার শপিং মল। একটু কেনাকাটা করে নিলাম। ফিরে আসা হল হোটেলএ। পরের দিন একটু সকাল ঘুম থেকে রওয়ানা হলাম হাওড়া স্টেশন এর দিকে দিল্লি যাবার উদ্দেশ্যে। আমাদের ট্রেন ছিল বিকাল ৪টায়। কিন্তু আমরা একটু সকাল বেরিয়ে পড়লাম কারন আমাদের পরিকল্পনা ছিল হাওড়া ঐতিহ্যবাহী ব্রিজ ও এলাকা ঘুরে যাওয়া। ট্যাক্সি নিয়ে হাওড়া ব্রিজ, দর্শনীয় স্থান, দেখার পর ফিরে এলাম স্টেশন। তথ্যকেন্দ্র ডেক্স থেকে জেনে নিলাম দিল্লি যাবার কলকাত এক্সপ্রেসটি কত নাম্বার প্লেট ফরম থেকে যাবে। হাওড়া স্টেশনটি অনেক বড় ৩০টির মত প্লেট ফরম রয়েছে এখানে। নিদিষ্ট স্থানে দাড়ালাম এবং ট্রেন আসার পর ট্রেন এ উঠে নিদিষ্ট আসন এ বসলাম। ভারতের ট্রেন সার্ভিস অনেক উন্নত। তাদের সব তথ্য টিকেট এ দেওয়া থাকে। তাই কোন সমস্যা হয় নাই। বিকেল ৪টায় ট্রেন ছাড়লো। আমাদের ট্রেন ভ্রমন ছিল প্রায় ১৭ ঘন্টার মত। পরদিন সকাল বেলা পৌছাবো। আমাদের একটু বিরক্তবোধ লাগেনি কারন ভ্রমনটি ছিল অনেক আরামদায়ক। ট্রেনের ভেতর আমাদের সব ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয় যার জন্য অতিরিক্ত কোন চার্জ প্রয়োজন লাগে না। ট্রেন ছাড়ার সাথে সাথে আমাদেরকে চা, নাস্তা, পানি, জুস দেওয়া হল বিকেলের নাস্তা। আবার রাতের খাবারে জন্য অর্ডার দেওয়া হল কি আমরা খাব। ট্রেনের সিট গুলো ছিল সিঙ্গেল ছিল, বিছানার মত ঘুমানো যায়। আমাদের সাথে অনেক বিদেশী পর্যটক ছিল। সকাল এ ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে নিলাম। ইন্ডিয়া ট্রেনের যাত্রী সেবা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছনতা সবকিছু। সকাল ১১ দিকে নিউ দিল্লি স্টেশন এ পৌছালাম। স্টেশন এ নেমেই চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম বিশাল বড় স্টেশনটি। রওয়ানা হলাম হোটেল এর জন্য স্টেশনের পাশেই পাহাড়গঞ্জ যেখানে হোটেল এর সারি সারি লাইন রয়েছে। ভালো দেখে একটা হোটেল এ উঠলাম। আমাদের কাছে খুব কম সময় ছিল তাই হোটেল এ উঠে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম দিল্লি দেখার উদ্দেশ্যে। দিল্লিতে দেখারমত উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হল, বিল্লা মন্দির, পার্লামেন্ট হাউজ, প্রেসিডেন্ট ভবন, ইন্ডিয়া গেইট, ইলিভেন স্টেটার্স, তিন মুর্তি, ইন্দিরাগান্ধি মহল, লোটাস টেম্পল, রাজঘাট, জামা মসজিদ, লালকেলা ছাড়াও অনেক স্থান। তার আগে দিল্লি সম্পর্কে একটু জেনে রাখা ভাল। যমুনা নদীর তীরে দিল্লি অঞ্চলের জনবসতির উন্মেষ ঘটে খিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে। দিল্লি অঞ্চলে একাধিক প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সৌধ, পুতস্থল, প্রত্মতাত্বিক ধ্বংসাবশেষ দেখা মেলে। ভারতের সংসদ সহ যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক গুরুত্বপূর্ন কার্যালয় নতুন দিল্লিতে অবস্থিত। বর্তমানে সারাদেশ থেকে বিভিন্ন ভাষা ও জাতীয় মানুষ দিল্লিতে এসে বসবাস শুরু করায় দিল্লি একটি বহুজার্তিক মহানগরে পরিনত হয়েছে। যা আজ ভারতের এক অতি গুরুত্বপূর্ন সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বানিজ্যিক কেন্দ্র। এখন আসি কেমন ছিল সেই ভ্রমনটি। আমাদের প্রথম স্থান দেখা শুরু হল বিল্লা মন্দির থেকে যার নান্দনিক কারুকাজ দেখার মত। ভেতরে রয়েছে দেখার মত অনেক জিনিস যা পর্যটকদের আকর্ষক বাড়িয়ে দেয়। তারপর ইন্ডিয়া গেইট এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। কিন্তু ইন্ডিয়া গেইট যাওয়ার আগে পার্লামেন্ট ভবন ও প্রেসিডেন্ট ভবন দেকে নেওয়া যায়। যদিও নিরাপত্তার কারনে বাইরে দেখতে হয়। তবু এর আর্কিটেচালার বিউটি দেখার মত। তা দেখে ইন্ডিয়া গেইট এ যাওয়া হল। এটি ভারতের স্মৃতিসৌধ। যা দিল্লির দ্রষ্টব্য স্থান। হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসে তা দেখার জন্য। যার নকশা সবাইকে আকর্ষনীয় করে তোলে। এটি লাল ও সাদা বেলে পাথরের, গ্রানাইট পাথরের তৈরী।এখান থেকে বেরিয়ে ইলিভেন স্টেটাস, তিনমুর্তি, দেখে চলে গেলাম পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সাতটি প্রসাদের সর্বশেষটি উপসনালয় যেটিকে আমরা লোটর্স টেম্পল নামে জানি। এটির প্রতিটি নকশা স্বতন্ত্র ও বৈচিত্রময়। এই উপসনালয় সবচাইতে সুন্দর ফুল ও পবিত্রতার প্রতিক। লোটস টেম্পল নয়টি বৃহৎ জলধারা দ্বারা বেষ্টিত যেটি কিনা উপসানালয়ের ভেতরের কক্ষ প্রাকৃতিক নিয়মে ঠান্ডা রাখে। এর পাপড়ি গুলো সাদা সিমেন্ট, বালি, নুড়ি দ্বারা নির্মিত এবং বাইরের অংশ গ্রীক মার্বেল পাথর দিয়ে আচ্ছাদিত। সব ধর্মের মানুষের জন্য এই উপসানলয় উন্মুক্ত। সারি বেধে দলে দলে লোক ঢুকছে। ঘুরে ফিরে দেখছে অনন্য এই স্থাপনাটি। এর সবটাই হচ্ছে নি:শব্দ প্রসন্নতায়, অনুপম শৃংখলয়। সেখানে থেকে বেরিয়ে আসি প্রশান্ত মন নিয়ে। তখন বিকেল হয়ে গেছে। তাই চলে যাই কুতুব মিনার এ যা বিশ্বের সর্বোচ্চ ইটনির্মিত মিনার। এটি কুতুব কমপ্লেক্স এর ভেতরে অবস্থিত। প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের ধ্বংবাশেষ পাথর দিয়ে কমপ্লেক্স এবং মিনার তৈরী। ভারতীয় স্থাপত্যশৈলী গুরুত্বপূর্ন এবং অন্যতম প্রাচীন নিদের্শন বলে কুতুব মিনার বেশ উল্লেখযোগ্য। এর আশপাশে আর বেশ কিছু প্রচীন এবং মধ্যযুগীয় স্থাপনা রয়েছে। যা একত্রে কুতুব মিনার হিসেবে পরিচিত। এই কমপ্লেক্সটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাবদ্ধ রযেছে। চমৎকার এই মিনারটি দেখে আনন্দের সাথে চলে গেলাম রাজঘাট। যেখানে মহাত্ম গান্ধির সমাধি। রাজঘাট বেশ সুন্দর করে সাজানো চারপাশে সবুজ আর সবুজ। সন্ধ্যার দিকে যাওয়ায় পুরো দৃশ্যটি উপভোগ করতে পারিনি। পুরো সৌন্দর্য দেখতে হলে সকালে আসা লাগে। তাই অল্প দেখে চলে আসি। হোটেল এ আসার পথে দেখে নেই রাতের দিল্লি শহর সাজানো গোছালো এই শহরটি অনেক পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন। রাতের শহরটি দেখার মত নান্দনিকতা। আর দেওয়ালী হলে তো কথাই নেই আর সুন্দর করে সেজে উঠে শহর। সে দিন ছিল দেওয়ালী। আর সুন্দর হয়ে উঠেছিল শহরটি। চারদিকে আলোর সাজসজ্জা অপরুপ সব দৃশ্য। হোটেল গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কারন সকাল উঠে যেতে হবে আগ্রা তাজমহল দেখতে। সকাল উঠে রওয়ানা হলাম আগ্রা তাজমহলের উদ্দেশ্যে। দিল্লির প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে চলছে গাড়ি। ট্রাফিক সিগনাল সবাই সুন্দর ভাবে মেনে চলে। গাড়িতে বসে চারপাশ দেখতে দেখতে প্রায় ৪ ঘন্টায় পৌছে গেলাম আগ্রায়। শুরু হল সম্রাট শাহজাহানের বাড়ি দিয়ে যা আগ্রা কেলা নামে পরিচিত। অনেক বিস্তিত এলাকা নিয়ে গড়ে উঠা এটি। গাইড এর সাহায্যে এটা দেখে নিলাম। সম্রাট শাহজাহানের কক্ষ থেকে তাজমহল দেখা যায়। সেখান থেকে বেরিয়ে একটু খাবার খেয়ে চলে গেলাম তাজমহলের দেখতে। মোঘল সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত এই অনন্য মহলটি সম্রাটের প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজের প্রতি ভালোবাসার প্রতিক হয়ে জ্বলজ্বল করছে। যা সম্রাট শাহজাহান ও মমতার ভালোবাসাকে পবিত্রতা ও সৌন্দর্যকে চিরস্মরনীয় করে রেখেছে। এই চমৎকার সমাধীসৌধ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে। গেট পেরিয়ে তাজমহলের মূল সৌধের কাছে যেতে বেশকিছু পথ হাটতে হয়। নিচ থেকে কয়েকটি সিড়ি পার হয়ে তাজমহলের মূল বেদিতে প্রবেশ করতে হয়। অপরুপ সৌন্দর্যমন্ডিত এই সমাধীসৌধটি ২০ হাজার লোকের ২২ বছরের অকান্ত পরিশ্রমে ১৬৫৩ সালে আগ্রায় যমুনা নদীর তীরে প্রতিষ্টিত হয়। দিল্লি, কান্দাহার, লাহোর এবং মুলতানের সুদক্ষ রাজমিস্ত্রিদের এ নির্মান কাজ করেন। এছাড়াও বাগদাদ, শিরাজ এবং বোখারার অনেক দক্ষ নির্মাতা তাজমহলের বিশেষ কাজগুলো করেন। তাজমহলে আলো প্রবাহী অস্বচ্ছ সাদা মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। যা রাজস্থান থেকে আনা হয়েছিল। তাছাড়া লাল, বাদামি পাথর, বৈদুর্যমনি, সবুজ-নীলাভ, নীলকান্তমনি, সাদা রঙের মূল্যবান পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। যা তাজমহলকে সুন্দর্যেও রূপ দিয়েছে। সে দিন এরম ত আগ্রা তাজমহল দেখা শেষ করে দিল্লি ফেরার পালা। দিল্লি ফেরার পতে মাথুরা, রাম কৃষ্ণের জন্মস্থান, বিন্দাবন ঘুরে দেকে আসলাম। রাত ২.৩০ মিনিটে দিল্লি হোটেল এ আসলাম। অনেক কান্ত থাকায় ভালই একটা ঘুম হলো। কলকাতা ফেরার ট্রেন বিকেল এ ছিল তাই সকালে বেরিয়ে পড়লাম লালকেলা ও জামা মসজিদ দেখতে। লাল কেলা মোঘল স¤্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত একটি দূর্গ। স্থাপত্য ও চিত্রকলার উৎকর্ষে একটি গুরুত্বপূর্ন নিদর্শন। লাল কেল্লার অলকরণ ও শিল্পকর্ম অতি উচ্চমানের। কেল্লার প্রাচীর মসৃন এবং দৃঢ়। লাল কেলা ঢুকতে আচ্ছাদিত বাজার পথ পড়ে। ভেতরে অনেক বিশালজায়গা নিয়ে বিস্তিত। প্রতœতান্তিক জাদুকর, মুক্তিযোদ্ধ জাদুঘর সহ অনেক নিদর্শন রয়েছে। তারপর দেখতে দেখতে চলে গেলাম মুঘল আমলের ঐতিহাসিক দিল্লি জামে মসজিদ এ। যেখানে একসাথে ২৫ হাজার লোক একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। সময়ের অভাবে আর বেশী বেড়ানো হলো হল না। আমাদের ফেরার সময় হয়ে উঠেছিল কলকাতায়। অনেক রকমের খাবার পাওয়া যায় দিল্লিতে। পরিচিত চিকেন টিক্কা, শিক কাবাব, ঘিরি ও গুর্দার কাবাবতো আছেই। তার সাথে কাকরি, টেংরি, কস্তুরি, হারিয়ালি কতশত বাহারি কাবাব। দিল্লিবাসী পথচলিত মানুষ প্ল্রাস্টিকের প্লেটে কয়েকটুকরো কাবাব মুখে পুরেই রওয়ানা হয়ে যাচ্ছে গন্তব্যে। আমরা বিকেলের ট্রেনে করে চলে আসি কলকাতায়। আমাদের ভ্রমন ছিল ১১ দিনের তাই কলকাতায় আরও ৩ দিন থাকতে হবে। তাই ভালো করে কলকাতা শহর আরো দেখে নিলাম। ভিক্টোরিয়া পার্ক, ভিক্টোরিয়া মিউজিয়াম, ইন্ডিয়া মিউজিয়াম, ঘুরে ঘুরে দেখা হল। কলকাতা পার্কটি দেখে মনে হল প্রাকৃতিক লিলাভূমি। প্রাকৃতি প্রেমিকদের জন্য দর্শনীয় স্থান। সব মিলিয়ে সারাদিন আলস্যে কাটিয়ে দেওয়ার মত একটি জায়গা। ঘুরার ফাকে ফাকে কেনাকাটাও করে নিলাম। কলকাতায় শট ডিসটেন্স এ হেটেই পার হয়, টানা রিকসা চলে মার্কেট এরিয়ায়। বড় রাস্তায় অনুমতি নেই। তাই ব্যবহার করতে হয় ট্যাক্সি। এছাড়াও রয়েছে এসিবাস,লোকাল বাস, ট্রেন, ট্রাম, মেট্রোরেল। মেট্রো কথা না বললে নয় কারন অতি দ্রুত সময়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করা যায়। যা আমিও অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছি। কলকাতার চা না খেলেই নয়, চায়ের কাপগুলো মাটির তৈরি খাওয়ার পর ভেঙ্গে ফেলতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে অসাধারন একটি ভ্রমন ছিল ইন্ডিয়া। পরিশেষে বাংলাদেশে ফিরে আসা।
কীভাবে যাবেন:-
ঢাকা থেকে প্লেন অথবা ট্রেন করে কলকাতা যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস এ করে দিল্লি যেতে পারেন। আর দিল্লিতে অনেক ট্রাভেল এজেন্সি আছে তাদের সাহায্য নিয়ে আগ্রা তাজমহল ঘুরে দেখে আসতে পারেন।
কোথায় থাকবেন:- কলকাতা ও দিল্লিতে অনেক বড় ও মাঝারি হোটেল রয়েছে। আপনার পছন্দমত হোটেল নিতে পারেন বা আগে থেকেই অনলাইনে বুকিং দিয়ে রাখতে পারেন।
মন্তব্য করুন