চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর অভিনব খায়েস ও ঘোষনা,- সিনহাকে পেলে মারব থাপ্পড়, দেশে কি গুন্ডাতন্ত্র

August 20, 2018,

মুজিবুর রহমান মুজিব॥ আধুনিক বিশ্বে একটি কল্যানকামী আধুনিক রাষ্ট্রে মিডিয়া রাস্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসাবে খ্যাত ও স্বীকৃত। প্রসঙ্গঁত উল্লেখ্য রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ ক. লেজিসলেছার, খ. জুডিসিয়ারি ও গ. এক্সিকিউটিব। ডক্টর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন সেনা সমর্থিত বিগত দীর্ঘ মেয়াদী তত্তাবধায়ক সরকারামলে রাষ্ট্রের সর্ব্বোচ্চ আইন প্রনয়নকারি সংস্থা জাতীয় সংসদ এর অবর্তমানে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জাতির দর্পন ও বিবেক হিসাবে কাজ করে ছিল। বর্ত্তমান বিদায়ী দশম জাতীয় সংসদ এর বিগত পাঁচই জানুয়ারীর বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত নির্বাচনটি অংশগ্রহন মূলক ছিলনা, ভোটার বিহীন ও ছিল। দশম জাতীয় সংসদ দেশে প্রচলিত সাংবিধানিক সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় তালগোল পাকিয়ে বিরোধী দল থেকে একাধিক মন্ত্রী, কতিথ বিরোধী দল জাপা প্রধান সাবেক রাষ্ট্রপতি পতিত স্বৈরাচার অবঃ লেঃ জেঃ এইচ এম এর্শাদ কে মন্ত্রীর মর্য্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বানিয়ে, বেহুদা বেতন ভাতা কামিয়ে এখন লেজে গুবরে অবস্থা। না ঘরকা না ঘাটকা। প্রধানমন্ত্রীর করুনা নির্ভর বিরোধী দলীয় নেত্রী, এর্শাদপতিœ বেগম রওশন এর্শাদের জাতীয় সংসদে তার ক্ষমতা নিয়ে আহাজারি ও বিলাপ পত্র পত্রিকায় বহুল আলোচিত। সমালোচিত। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে বিরোধী দলীয় নেতা বিকল্প সরকার। কোন কারনে সংসদ নেতা সংসদে সংখ্যা গরিষ্টতা হারালে বিরোধী দলীয় নেতাকে সংখ্যা গরিষ্টতা প্রমান পূর্বক সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়। এটাই সংসদীয় সংস্কৃতি। সংসদীয় রীতিনীতি। কিন্তু আমাদের দেশেĪ
সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার প্রলাপ-বিলাপ আক্ষেপ ও আহাজারি মোতাবেক পরিস্কার পরিচ্ছনভাবেই প্রতিভাত বর্ত্তমান দশম জাতীয় সংষদ নিস্প্রান। নিস্প্রভ ও অকার্য্যকর।
নিস্প্রান সংসদের অকার্য্যকারিতার মাঝে বাংলাদেশের মিডিয়া ভূবন আশার আলো, দেশ ও জাতির প্রকৃতই বিবেক ও দর্পন। প্রিন্ট মিডিয়ার সাথে সাথে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌকর্য্য-সৌন্দর্য মিডিয়া ভূবনকে পূর্নতা দিয়েছে। তালাশ, চোখ-জাতীয় গনমুখী অনুষ্টান গুলি সামাজিক সমস্যা-অসঙ্গতিকে জাতির চোখে আঙ্গুঁল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। একজন হানিফ সংকেত, কনক ছরোওয়ার, অখীল পোদ্দার, আর মুন্নী সাহার টিভি জার্নালিজম তাদের মেধা, মনন, প্রজ্ঞা ও পরিশ্রম এবং দেশ প্রেম ও সমাজ সচেতনতারই বহিঃ প্রকাশ।
বাংলাদেশ প্রতিদিন-দেশের বহুল প্রচারিত একটি জাতীয় দৈনিক। মেধাবী সম্পাদক নইম নিজাম সম্পাদিত এই জাতীয় দৈনিকটি পাঠক প্রিয়তাও পেয়েছে দারুন।
১৬ই আগষ্ট সংখ্যার প্রতিদিনে দ্বিতীয় পৃষ্টায় চতুর্থ কলামে নিজস্ব প্রতিবেদক প্রেরিত সংবাদটির শিরোনাম “সিনহাকে পেলে মারব থাপ্পড়ঃ চবি ভিসি”। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদকের সংবাদ এর সারমর্ম মতে পনেরোই আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়স্থ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে পনেরোই আগষ্ট দুপুরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় আলোচনা কালে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যলয়ের মাননীয় উপাচার্য্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন -“তাকে কোথাও পেলে আমি দুই থাপ্পড় মারব-” চবি ভিসি তার বক্তৃতায় বলেন সিনহাকে থাপ্পড় মারার কাজে কেই তাকে আটকে রাখতে পারবেনা। তার ঘোষনা শয়তানকে যেভাবে পাথর মারে সেভাবে থাপ্পড় মারব-জীবন দিয়ে হলেও ওটা করব-”।
বিশ^ায়নের এই যুগে বিশ^মানের বিদ্যায়তন বিশ^বিদ্যালয়। বিশ^ বিদ্যালয় দেশে প্রচলিত প্রাতিষ্টানিক শিক্ষাব্যবস্থার সর্ব্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। বারো আওলিয়ার মুল্লুক বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় একটি ঐতিহ্যবাহী বিশ^বিদ্যালয়। একাত্তোরের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় এর সংগ্রামী ছাত্র শিক্ষক সমাজের গৌরবোজ্জল ভূমিকা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ঐতিহাসিক অধ্যায়। দেশের বরেন্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বৃন্দ ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসির গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতির বিবেক-দেশ বরেন্য শিক্ষাবিদ-মননশীল লেখক শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আবুল ফজল সাহেব চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসির দায়িত্ব আন্তরিকতা ও কৃতিত্বের সাথে পালন করে চীর স্মরনীয় হয়ে আছেন।
বলাই বাহুল্য একজন মাননীয় ভিসি একটি বিশ^বিদ্যালয় এর ছাত্র শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারি সকলের মহান অভিভাবক। তিনি ছাত্র-শিক্ষককে হিতোপদেশ-সৃজনশীল জীবন গঠন লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হওয়ার দিক নির্দেশনা দিবেন। ছাত্র-শিক্ষকের কাছে তিনি হবেন অনুকরনীয়-অনুসরনীয়। কিন্তু দূঃখ ও দূর্ভাগ্যজনক ভাবে মাননীয় চবি ভিসি ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরীর একজন প্রাক্তন প্রধান বিচার পতির গালে থাপ্পড়ের ঘোষনা কোন অবস্থাতেই শিক্ষক সুলভ নয় বরং গায়ের জোর, গোয়ারর্তমী-গুন্ডা তন্ত্রের বহিঃ প্রকাশ ঘটেছে। কারো গায়ে হাত তোলা কোন বীরত্ব ও বাহাদুরি নয় বরং অভদ্রতা, বেআদবি, বদতমিজি, ও বাড়াবাড়ির নামান্তর। একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যাক্তির উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্টানে উচ্চপদে আসীন থেকে এমন ইতর সুলভ আচরন ও আস্ফালন অসুস্থ মন মানষিকতার নগ্ন বহিঃ প্রকাশ। জনাব চৌধুরী উচ্চপদের সঙ্গেঁ সম্মানিত ও সম্ভ্রান্ত পদবীর অধিকারী- চৌধুরী বংশের সন্তান তিনি। সামন্ত যুগে চৌধুরী, খান বাহাদুর, রায় বাহাদুর, খান সাহেব খেতাব প্রাপ্ত জমিদার জোতদার-মিরাশদার-ভূ-স্বামী- গন তাদের রায়ত প্রজাগনকে ক্ষেত্র বিশেষে কতেক ব্যাতিক্রমবাদে ঝুলুম নির্য্যাতন করতেন- চড় থাপ্পড় মারতেন। পঞ্চাশ সালে East Bengal estate acquisition and tenancy act of ১৯৫০- র আওতাও জমিদারি উচ্ছেদ এবং একাত্তোর সালের স্বাধীনতা এবং বাহাত্তোর সালের মহান সংবিধানের বিধি বিধান মোতাবেক নাগরিক হিসাবে সকলের সমান অধিকার। দেশে প্রচলিত আইন, কাউকে নিজের হাতে আইন তুলে নিতে অনুমোদন দেয়না-এটা বেআইনী। একজন মাননীয় ভিসি নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারেন না তাঁর থাপ্পড় মাড়ার এমন ঘোষনা আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার-দেশে প্রচলিত আইন আদালত এর প্রতি হুমকি, অবজ্ঞ্যা ও অনাস্থার ও বহিঃপ্রকাশ বটে। এই রকম প্রকাশ্য ঘোষনা আইনের ১০৭ কিংবা ৫০৬ ধারায় দন্ডনীয় অপরাধও বটে। সংবাদে আরো প্রকাশ চবি ভিসি মিঃ চৌধুরী জাস্টিস সিনহা সাহেবকে শয়তানকে যেভাবে পাথর দিয়ে মারা হয় সেভাবে মারার ঘোষনাও তিনি দিয়েছেন। পবিত্র হজে¦র মাস জিলহজ¦ মাসে পাথর মারার ঘোষনা দিয়ে চবি ভিসি জনাব চৌধুরী মুসলমানদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন। পবিত্র হজ¦ এর একটি রুকন প্রস্থর নির্মিত শয়তান মূর্তিতে প্রস্থর নিক্ষেপ। এই প্রস্থর নিক্ষেপ এর ও একটি নিজস্ব ত্বরিকা-প্রথা আছে, কিঞ্চিত ক্ষোভ সহ ঘৃনা প্রকাশ করে প্রস্থর নিক্ষেপ করতে হয়। এটি পবিত্র হজ¦ ব্রতের একটি আনুষ্টানিক বিধান। সেটা পালন করা হয় পবিত্র মক্কা মোয়াজ্জেমার নির্ধারিত স্থানে। এই নিয়ে কোন রং তামাশা কিংবা খেলা-মেলার কোন বিধান নেই। জনাব চৌধুরী একজন অমুসলিমকে পবিত্র হজে¦র সময় হজ¦ ব্রতের আনুষ্টানিকতা নিয়ে হালকা ও চটুল মন্তব্য করে ধর্মানুরাগি মুসলিম সমাজের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন যা আইনের ২৯৫ ধারায় দন্ডনীয় অপরাধ বটে।
প্রসঙ্গত অধিক উল্লেখ্য যে, আলোচনা সভাটি ছিল স্বাধীনতার মহান স্থপতি, বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেয়াল্লিশতম শাহাদাত বার্ষিকী উপলেক্ষে। পচাত্তোর সালের পনেরোই আগষ্ট কতেক বিপথগামী সেনা সদস্য দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র ও উর্দ্ধতন মহলের আস্কারায় বঙ্গঁবন্ধু ও তাঁর পরিবার বর্গকে বত্রিশ নম্বরের বাড়িতে নির্মমভাবে হত্যা করে। আলোচনা সভাটি ছিল এতদসংক্রান্ত শোকাবহ ঘটনা বিষয়ক। পঁচাত্তোরের পরে জন্ম নেয়া একজন মেধাবী শিক্ষর্থী কিংবা অর্ধশত বর্ষীয় একজন পন্ডিত প্রবর শিক্ষক দেখেন নি-শুনেন নি কারা বঙ্গঁবন্ধুর ঘাতক কেন এই মহান নেতাকে নির্মমভাবে স্বপরিবারে খুন করা হল। সেই সব বিশ^াস ঘাতক আধুনিক মীরজাফরদের কথা ও কাহিনী বলার কথা মাননীয় ভিসি মহোদয়কে। ১৫ইং আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসের বক্তৃতায় চবি ভিসি প্রফেসর চৌধুরীর বলা উচিত ছিল বঙ্গঁবন্ধুর আজীবনের বন্ধু, তাঁর মন্ত্রী সভার বানিজ্য মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ মন্ত্রী থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি হয়ে -“পনেরোই আগষ্টের সারথী হয়ে এসেছি বলে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দিয়েছিলেন। চবি ভিসি সাহেবের এ প্রজন্মকে বলা উচিত ছিল পনেরোই আগস্ট রাতে কতেক জুনিয়র সেনা সদস্য-অফিসার কর্তৃক বত্রিশ নম্বরের বাসভবনে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গঁবন্ধু তৎকালীন সেনাবহিনী প্রধান জেনারেল শফিউল্লা বীর উত্তমকে বলেছিলেন – Shafiullah, few miscreants attack সব ংধাব সব জবাবে ব্যার্থ ও অপদার্থ সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ বলছিলেন – Sir don’t say miscreants, they are the member of Bangladesh army-” দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির জীবন রক্ষায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কেউ এগিয়ে আসেন নি, শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর গর্ব ও গৌরব কর্নেল জামিল মহামান্য রাষ্ট্রপতির জীবন রক্ষায় এগিয়ে এসে নিজের অমূল্য জীবন উৎসর্গ করেন-শহীদ হন। চবি ভিসির বলা উচিত ছিল পনেরোই আগস্টে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের পর তার ভাষায় পনেরোই আগষ্টের সারথী খুনী খন্দকার মুশতাক বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির পদ দখল করলে তিনি বাহিনীর প্রধান নূতন রাষ্ট্রপতি খুনী খন্দকার মুশতাক ও তার সরকারের প্রতি অনুগত্য প্রদর্শন করেছিলেন। অথছ এই কে.এম. শফিউল্লা পাক আর্মির মেজর থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যুগ দিয়ে বীর বিলমে লড়াই করেন। এই মেজরকেই বঙ্গঁবন্ধুর সরকার বীর উত্তম উপাধি দিয়েছিলেন- সেনা প্রধান বানিয়েছিলেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জনাব চৌধুরীর এ প্রজন্মকে বলা উচিত ছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গাঁলি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত বাঙ্গাঁলি কুটনীতিবিদ মিঃ সমর সেন নবীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মুশতাক এর সঙ্গেঁ সাক্ষাত করে তাঁর সরকারের সমর্থন জানিয়ে যে দেঁতো হাসি হেসেছিলেন তা অশ্লীল না হলেও অশালীন ছিল। প্রফেসর চৌধুরীর বলা উচিত ছিল বঙ্গঁবন্ধুর সরকারের কট্টর ও কঠোর সমালোচক সিরাজ সিকদারের পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি এবং East Pakistan Communist Party- E.P.C.P (গ.খ) এর চৈনিক অতিবাম হক তোহা সাহেবরা বাংলাদেশের স্বাধীনতকেই মানতেন না, বলতেন বাংলাদেশ ভারতের অঙ্গরাজ্য। আরো বলা উচিত ছিল তখন বঙ্গবন্ধু সরকার ও আওয়ামীলীগের একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সমালোচক ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ আর আন্ডার গ্রাউন্ডে ছিলেন লেঃ কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমের নেতৃত্বাধীন গনবাহিনী- জানা যায় যার উপপ্রধান ছিলেন বর্ত্তমান জাসদ (ইনু) প্রধান হাসানুল হক ইনু- যিনি মাননীয় তথ্য মন্ত্রী ও বটেন। বি.এন.পি, জাতীয় পার্টির তখন জন্মই হয়নি, জামাত-শিবির তখন নিষিদ্ধ ছিল বিধায় বঙ্গঁবন্ধু হত্যায় তাদের প্রসঙ্গঁ আসাটাই অপ্রাসঙ্গিঁক। সর্ব্বোপরি বঙ্গঁবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শেষে রায় কার্য্যকর হওয়ার পর মামলার মেরিট ও ফলাফল নিয়ে আক্ষেপ করা আদালত অবমাননার নামান্তর। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের উক্ত সংবাদে দেশের কতেক মামলা এবং বিদেশে জাস্টিস সিনহার অবস্থান যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর ভ্রাতার সঙ্গেঁ সাক্ষাত ও আলোচনা প্রসঙ্গঁ ও এসেছে।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মিঃ সুরেন্দ্র কুমার সিনহা চাকরির মেয়াদান্তে এখন অবসরে আছেন। চার দশকের অধিক কাল তিনি আইনাঙ্গঁনে ছিলেন। আওয়ামীলীগ সরকারামলে ৯৯ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় একজন সিনিয়র আইনজীবী হিসাবে তিনি হাইকোর্ট ডিভিশনের অস্থায়ী বিচারপতি নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ২০০১ সালে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে নিরংকুশ সংখ্যা গরিষ্টতা নিয়ে চারদলীয় জোট সরকার গঠিত হলে তার চাকরি স্থায়ী হয়। পরবর্ত্তী পর্য্যায়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে মিঃ সিনহা আ্যপিলেন্ট ডিভিশনে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। এক সময় জৈষ্টতা অনুযায়ী তিনি বাংলাদেশের মান্যবর প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন। তার এই নিয়োগ প্রাপ্তি সর্বদলীয় আইনজীবী সমাজ কর্তৃক প্রশংসিত হয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথকিকরন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত কতেক বিষয়ে সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেঁ তার দূরত্ব অতঃপর মত পার্থক্য সৃষ্টি হলে চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই তিনি ছুটি নিয়ে বিদেশ যেতে বাধ্য হন। তার চাকরি কালীন সময় কোন মামলার ফলাফল নিয়ে মতামত দেয়ার মালিক রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা এটর্নী জেনারেল অব বাংলাদেশ। হাইকোর্টে কোন মামলায় কোন পক্ষ হারলে মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট এর অ্যাপীলেন্ট ডিভিশনে আইনী আশ্রয় নেয়ার আইনগত বিধান আছে। অ্যাপীলেন্ট ডিভিশনেও হেরে গেলে -রিভিউ- এর বিধান আছে। এসব আইনের আইনী প্রক্রিয়া-সভা সমাবেশের ভাষনের বিষয় নয়। জাস্টিস সিনহা কোন হাইব্রীড-হাই প্রোফাইলের নেতা ছিলেন না, একটি পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি কমলগঞ্জ উপজেলাধীন মনীপুরী অধ্যুসিত পল্লীগ্রাম তিলকপুর থেকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি হলেও তিনি আইনের উর্দ্ধে নন, তিনি কোন ফৌজদারী অপরাধ করলে তদন্ত ও বিচারান্তে প্রমানিত হলে শাস্তি পেতে পারেন, তৎপূর্ব কাল পর্য্যন্ত তাঁকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা, থাপ্পড় মারার ঘোষনা দেয়া আপত্তিকর, অপমানজনক, মানসম্মানের হানিকর এবং গায়ের জোর ও চাপার জোরের নমুনাই নয় মুর্খতার সামিলও বটে। বাংলাদেশের সদ্য অবসর প্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জাস্টিস এস.কে সিনহা বিদেশে অবসর জীবন যাপন করছেন। প্রবাসে বসবাস করে জাস্টিস সিনহা যদি দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র, ঘটনা দূর্ঘটনা করে থাকেন তাহলে তা নিন্দনীয় অপরাধ তবে তা তদন্ত করে দেখার মালিক সরকার, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এবং আইন মন্ত্রনালয় আইনী দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কানাডায় বাংলাদেশের হাই কমিশন আছে। মান্যবর হাই কমিশনার আছেন, গুয়েন্দা বিভাগ আছেন। তারাই এসব দেখভাল করবেন। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীনে চাকরি রত বড় কর্তা চবি ভিসি চৌধুরীর কাজ নয় জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্টানে থাপ্পড়-মারার-চটুল- হালকা ঘোষনা দিয়ে জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য্য, গুরুত্ব, আবেগ ও আবহ বিনষ্ট করা। চবি ভিসি মিঃ চৌধুরী জাতীয় শোক দিবসের শোকাবহ অনুষ্ঠানে মামলা মোকদ্দমা-চড়-থাপ্পড় প্রসঙ্গঁ এনে পনেরোই আগষ্টের চেতনা বিরোধী কাজ করেছেন। তার এই অশালীন ও হালকা বক্তব্য প্রত্যাহার করা উচিত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সংবাদে জাস্টিস এস.কে সিনহাকে শুধুমাত্র সিনহা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কাউকে অসম্মান করা কোন বাহাদুরি ও বীরত্বের কাজ নয়। বিজ্ঞ বিচারপতিগন অবসরে গেলেও নামের পূর্বে বিচারপতি অমুক লিখতে পারেন, লিখে থাকেন। মিঃ জাস্টিস এস.কে সিনহা কোন দন্ডপ্রাপ্ত বিবাদী কিংবা তার জজিয়তি জীবন বেআইনী ও বাতিল হয়ে যায়নি, তাই তাকে শুধুমাত্র -সিনহা- না বলে মিঃ জাস্টিস সিনহা বলা উচিত।
দুঃখ ও দূর্ভাগ্যজনকভাবে আজ কাল আমাদের জাতীয় জীবন থেকে মান সম্মান আদব তমিজ লেহাজ মায়া মমতা লোপ না পেলেও হ্রাস পাচ্ছে। অতি সম্প্রতি রাজধানীর দুজন শিক্ষার্থী ঘাতক বাস চালকের চাপায় করুন মৃত্যো হলে দুই মরহুমের সহপাঠী স্বজনরা We want justice বলে রাস্তায় নামে, রাস্তায় ব্যানার টাঙ্গাঁয়-“রাষ্ট্রের মেরামত চলছে”। কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীর শোকে শোকাভিভূত হয়ে সমগ্র ঢাকাবাসি যখন কাঁদছিলেন তখন বাস মালিক শ্রমিক নেতা নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান তখন দাঁত বের করে হাসছিলেন, দুজনের করুন মৃত্যু প্রসঙ্গেঁ নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। খোদ মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে রনেভঙ্গঁদেন একাত্তরের বীর শাহজাহান খান। বক্তব্য প্রত্যাহার করতঃ মাফ চান। সম্পতি আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. হাছান মাহমুদ বলে বসেন -‘‘এত দিন ডক্টর কামালকে ভদ্রলোক বলেই জানতাম’’- সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের মর্ম মতে এখন ডক্টর কামাল ভদ্রলোক নহেন- যা অত্যন্ত দূঃখ জনক ও আপত্তিকর। ডক্টর কামাল হোসেন বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবের বিশ^স্থ সহকর্মি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনবিদ শিক্ষাবিদ- একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান- সর্ব্বোপরি তার পিতৃতুল্য গুরুজন। লাগাম ছাড়া এবং বেফাঁস বলাবলিতে ইদানিং সবাইকে টেক্কা দিয়েছেন খোদ শাসকদলের সেক্রেটারি সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব। তার বক্তব্যে একটা নিজস্ব ষ্টাইল ও ঢং আছ-টেনে টেনে রসিয়ে রসিয়ে কথা বলেন তিনি। দলের সম্পাদক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি তার প্রতিপক্ষকে তেমন আক্রমনাত্মক বক্তব্য দিতেন না। সম্পাদক হওয়ার পর তার প্রতিপক্ষকে আক্রমনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। একবার কাউয়া তত্ব দিয়ে তিনি দারুন আলোচিত হন। পত্র পত্রিকায় কাউয়া তত্ব দিয়ে উপসম্পাদকীয় ও লিখা হয়। সম্প্রতি ওবায়দুল কাদের সাহেবকে বি.এন.পি ও মির্জা ফখরুল ফেবিয়ায় পেয়েছে-এছাড়া যেন আর তার কোন কথা ও কাজ নেই, অথছ তিনি ব্যাক্তিগতভাবে মানুষ হিসাবে বিনয়ী ও স্বজ্জন। সম্প্রতি তাঁর -“ওয়ান ইলেভেনের গন্ধ পাচ্ছি-” উক্তি জাতীকে ভাবিয়ে তুলেছে। অথছ শাসক দলের সম্পাদক, সরকারের গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন ব্যাক্তি হিসাব তিনিত ওয়ান ইলেভেনের চিন্তা করতে পারেন না, গন্ধ পেলে তা কঠোর হস্তে দমন করা উচিত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ওয়ান ইলেভেন মানে নবেম্বর মাসের এগারো তারিখ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমদ দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ইয়াজ উদ্দিন আহমদ দ্বারা দেশে জরুরী আইন জারী করান। ডক্টর ফখর উদ্দীন আহমদ এর নেতৃত্বাধীন তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্টা করান, দুই নেত্রীকেই কারাবদ্ধ করেন, দুই বছর ক্ষমতাসীন ছিলেন। বিদেশে এই সরকারকে A government of three uddins বলা হত। বর্ত্তমান অবস্থায় শাসক দলের স্বয়ং সম্পাদক এর এমন অনাকাঙ্খিত মন্তব্য তার নিজের পায়ে কুড়াল মারা নয় মুন্ডু ছেদেরই সমান যা অচিন্তনীয় তবুও তিনি বলেছেন।
জাতীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তিবর্গের কথাবার্তায় দেশ ও জাতির ভাগ্য নির্ধারিত হয়। তাই জাতীয় নেতৃত্ব ও ব্যাক্তিত্ব বর্গের বক্তব্য দায়িত্ববান ই হওয়া উচিত।
আশা করা যায় চবি ভিসি ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী সাহেব তার এসব দায়িত্ব জ্ঞানহীন ও অনভিপ্রেত মন্তব্য প্রত্যাহার করতঃ দূঃখ প্রকাশ করবেন।
[ষাটের দশকের সাংবাদিক। মুক্তিযোদ্ধা। সিনিয়র এডভোকেট হাই কোর্ট। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব]

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com