চড়ুই পাখির কিছু কথা, শহরে বা গ্রামে ওরা মানববসতির কাছাকাছি থাকতে চায় (ভিডিওসহ)
বিশেষ প্রতিনিধি॥ এক বনে বাস করত দু’টি পাখি চড়ুই ও বাবুই। তারা দু’জন পাশাপাশি দু’টি গাছে বসবাস করত। বাবুই পাখিটা ছিল একটু অহঙ্কারী। চড়ুই পাখি ছোট বলে তাকে পছন্দ করত না। কিন্তু চড়ুই পাখিটা ছিল খুব সাদাসিধা। মাঝে মাঝে চড়ুই পাখিটা বাবুই পাখির খবর নিত কেমন আছে, কি খাচ্ছে এই সব। কিন্তু বাবুই অহঙ্কার করে তাকে তাড়িয়ে দিত কিন্তু চড়ুই পাখি কিছু মনে করত না। এভাবেই মাসের পর মাস চলে যায়। চৈত্র মাসের শেষের দিকে। একদিন চড়ুই পাখি বাবুই পাখির বাসায় গিয়ে বলল, ভাই বাবুই কেমন আছ? এ কথা শুনে বাবুই বলল, আমি ভালো আছি তুই আমার বাসায় কেন এসেছিস এখুনি চলে যা। চড়ুই পাখি কিছু মনে না করে বলল, ভাই বাবুই সামনে তো বৈশাখ মাস, বৈশাখ আসার আগের আমাদের বাসাটা ভালো করে ঠিক করে নিলে হতো না? বাবুই পাখি বলল, আমার বাসা তোর চেয়ে অনেক ভালো আমার কথা তোর ভাবতে হবে না তুই চলে যা। আমার বাসায় আর কোনোদিন আসবি না। এ কথা বলে চড়ুই পাখিকে তাড়িয়ে দিলো। চড়ুই পাখি খুব কষ্ট পেয়ে চলে এলো। তার কিছু দিন পরে বৈশাখ মাসে হঠাৎ করে একদিন সকাল থেকে আকাশটা মেঘলা মেঘলা। এমন দেখে চড়ুই পাখি তার নিজের বাসাটা খুব ভালো করে ঠিক করে নিলো। আর বাবুই পাখি নিজের বাসায় বসে দেখে আর মনে মনে হাসে আর বলে বোকা ভীতু চড়ুই মেঘ দেখে ভয়ে বাসা ঠিক করছে। চড়ুই পাখি দুপুর হতে হতে তার বাসা ঠিক করে নিলো। আর বাবুই পাখি বসে রইল। বিকেল হতেই চারিদিকে কালো মেঘে ঘিরে এলো। হঠাৎ বাতাস শুরু হলো। তাই দেখে চড়ুই পাখি বাবুই পাখিকে ডেকে বলল, ভাই বাবুই তোমার বাসা তো ঠিক করলে না আমার বাসায় এসো। কিন্তু অহঙ্কার করে বাবুই পাখি এলো না। হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়ে গেল, চড়ুই পাখি তার বাসায় আরামে শুয়ে রইল। অন্য দিকে তুমুল বাতাসে বাবুই পাখির বাসাটা হেলেদুলে নড়তে থাকল। এক সময় একটা জোরে বাতাস এসে বাবুই পাখির বাসাটা ভেঙে নিচে পড়ে গেল, সেই সাথে বাবুই পাখিও নিচে পড়ে গেল। নিচে পড়ে বাবুই পাখির ডানা খুব আঘাত পেল আর বাবুই পাখি খুব জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকে। অনেকক্ষণ পরে থেমে গেল ঝড়। তখন চড়ুই পাখি বাইরে এলো। এসে বাবুই পাখির বাসাটা খুঁজতে থাকে কিন্তু খুঁজে পাচ্ছিল না। হঠাৎ দেখে গাছের নিচে আধমরা হয়ে পড়ে আছে। তখন চড়ুই পাখি তার কাছে গিয়ে বাবুই পাখিকে তার নিজের বাসায় নিয়ে এলো। এসে বাবুই পাখির খুব যত্ন করল নিজে গিয়ে খাবার এনে বাবুই পাখির মুখে তুলে খাইয়ে দিলো। তখন অনেক যত্ন করার পর বাবুই পাখি অনেকটা সুস্থ হয়ে গেল। তখন বাবুই পাখি তার ভুল বুঝতে পারল আর চড়ুই পাখির কাছে ক্ষমা চাইল। বলল, তোর কথা অবহেলা আর অহঙ্কার করে খুব বড় ভুল করেছি তাই আজকে আমার এই পরিস্থিতি। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি আমায় ক্ষমা করে দে। চড়ুই পাখি বলল, তোমার ভুল বুঝতে পেরেছ তাতেই খুশি। তখন বাবুইপাখি বলে, তাহলে আজ থেকে আমরা দু’জন বন্ধু ঠিক আছে? চড়ুই পাখি বলল, ঠিক আছে। তারপর দু’জন বন্ধু হয়ে মিলেমিশে থাকতে লাগল।
চড়ুই পাখির কিছু তথ্য :
সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এরা বিস্তৃত, প্রায় ৩ কোটি ৪৮ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস। বেশ বিস্তৃত ও সংখ্যায় অগণিত হলেও বিগত কয়েক দশক ধরে বেশ কিছু জায়গায় এর সংখ্যা কমে আসছে।
তবে এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি বলে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।
চড়ুই ছোটখাটো পাখি। সাধারণত দৈর্ঘ্যে মাত্র ১৬ সেমি (৬.৩ ইঞ্চি) ও ওজনে ২৪৩৯.৫ গ্রাম (০.৮৫–১.৩৯ আউন্স) হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক ও স্ত্রী চড়ুইের দেহ মন্দা বাদামি ও ধূসরে মেশানো। পুরুষ পাখির দেহ উজ্জ্বল কালো, বাদামি ও ধূসর চিহ্নযুক্ত।
চড়ুই পাখির আদি আবাস ইউরোপ, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও এশিয়ায় হলেও বেশ কিছু অঞ্চলে দুর্ঘটনাবশত অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রজাতিটি ছড়িয়ে পড়েছে।
আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকায় এভাবেই এ পাখিটির আগমণ ঘটেছে। ফলে পৃথিবীতে বন্য পাখিদের মধ্যে পাতি চড়ুইই সবচেয়ে বেশি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
মানববসতির আশেপাশে সহসাই পাতি চড়ুইয়ের দেখা মেলে। শহরে বা গ্রামে, মানববসতির কাছাকাছি যেকোন পরিবেশে এরা নিজেদের স্বাচ্ছন্দে মানিয়ে নিতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশে খাপখাইয়ে নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা থাকলেও সাধারণত জনহীন বনভূমি, তৃণভূমি ও মরুভূমিতে এরা বসবাস করে না।
শস্যদানা ও আগাছার বীজের প্রধান খাদ্য হলেও সুযোগ পেলে পোকামাকড়, উচ্ছিষ্ট ও নানান রকমের খাবার পেলে ছাড়ে না। বিড়াল, বাজ, প্যাঁচাসহ বিভিন্ন প্রজাতির শিকারী পাখি এবং স্তন্যপায়ী এর প্রধান শত্রু।
চড়ুইয়ের প্রাচুর্য ও মানব-সহচার্যের কারণে বিভিন্ন লেখালেখি ও অন্যান্য মাধ্যমে এর উপস্থিতি প্রকট। কোথাও কোথাও এটি ক্ষেতখামারের বালাই হিসেবে চিহ্নিত। তবে এদের সফলভাবে নির্মূল করা বেশ কষ্টসাধ্য। খাদ্য ও পোষা পাখি হিসেবে এর মোটামুটি কদর রয়েছে। – সংগৃহীত
মন্তব্য করুন