চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নিম্নাঞ্চল এলাকার মানুষ কমলগঞ্জে ভারী বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলে তৃতীয় দফা বন্যা। ক্ষতিগ্রস্ত ১৪ ’শ পরিবার
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ শনিবার ২২ এপ্রিল রাতে আবার প্রবল বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা সদরের ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের পুরাতন ভাঙ্গন ছাড়াও কোনাগাঁও এলাকা দিয়ে নতুন করে আরও একটি ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানিতে নিমজ্জিত থাকায় উপজেলার দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৩ এপ্রিল রোববার পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। উজানে ভারী বর্ষণের ফলে কমলগঞ্জে ৩য় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। নতুন করে প্রায় ৫০০শ’ হেক্টর বোরো ফসল, সবজি ও মসলা ক্ষেত বিনষ্ট হয়েছে। চারটি ইউনিয়নের ১৪’শ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নিম্নাঞ্চল দিয়ে বন্যার পানি চলে যাওয়ায় তিনটি ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিস্তীর্ন মাঠ নিমজ্জিত হওয়ায় গো-খাদ্য সংকটে ভোগছেন এলাকার কৃষকরা।
সরেজমিন বন্যা কবলিত এলাকায় গেলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, শুক্রবার ২য় দফা বন্যার পানি শেষ হতে না হতেই শনিবার ভারী বর্ষণের ফলে ধলাই নদীর পুরনো দু’টি স্থান কমলগঞ্জ পৌরসভার গোপালনগর ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বাদে করিমপুর গ্রামের ভাঙ্গন ছাড়াও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের কোনাগাঁও এলাকা দিয়ে নতুন করে আরও একটি ভাঙ্গন দেখা দেয়। তিনটি ভাঙ্গন দিয়ে প্রবেশ করা ঢলের পানি কমলগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়কের গোপাল নগর ও বাসুদেবপুর এলাকার সড়ক উপচে ঢল ও নদীর পানি গ্রামাঞ্চলসহ ও নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করে। ফলে নতুন করে তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চলের শমশেরনগর, মুন্সীবাজার, পতনঊষার ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রাম। গ্রাম্য রাস্তাঘাট ও বিস্তীর্ন এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় যাতায়াত ও গো-খাদ্য সংকট সহ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ।
তিন সপ্তাগের মাঝে তিনবারে নদী ভাঙ্গরে পাহাড়ি ঢলের পানিতে বারো ক্ষেত হারিয়ে নি:স্ব হয়ে যাওয়া কৃষকরা ব্যাংক ঋনসহ ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। কৃষক অহিদুল ইসলাম, মানিক মিয়া, তাহিদ আলী বলেন, এপ্রিলের প্রথম দফা বন্যায় বোরো ক্ষেত সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায়। বন্যার পানির কারণে সম্পূর্ণরূপে বোরো ক্ষেত, সবজি ও মসলা ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন করে গো-খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষক তোয়াবুর রহমান তবারক বলেন, বোরো, সবজি ও মসলা ক্ষেত বিনষ্ট হওয়ায় নিম্নাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ব্যাংক ঋণ ও ঋনের সুদ নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন। ঋণের সুদ ও ঋণ পরিশোধ করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। গোপালনগর ও বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষকরা জানান, বোরো সম্পূর্ণরুপে বিনষ্ট হওয়ার পর তৃতীয় দফার পানিতে এখন আউশের বীজতলা নিমজ্জিত হয়ে বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন আহমদ বলেন, বন্যার পানিতে নতুন করে ৫০০ হেক্টন নয় ৩৫০ হেক্টর বোরো ক্ষেত ও ৫০ হেক্টরের সবজি ক্ষেত বিনষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেন। আর কিছু কিছু স্থানে আউশের বীজতলা নিমজ্জিত হয়েছে। পানি নেমে গেলে এই বীজ তলা রক্ষা করা যেতে পারে। এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গকুল চন্দ্র দেবনাথ জানান, পানিতে রাস্তাঘাট ও বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা নিমজ্জিত থাকায় কমলগঞ্জের করিমপুর ও বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রোববারের অনুষ্ঠিত ২০১৭ সনের ১ম সাময়িক পরীক্ষার পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, নদী ভাঙ্গনের ফলে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করে কমলগঞ্জ পৌরসভা, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, মুন্সীবাজার ইউনিয়ন, পতনউষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের ১৪’শ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের জন্য প্রাথমিকভাবে ২০ মে:ট: চাল বরাদ্ধ করা হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, তৃতীয় দফা ধলাই নদীর ভাঙ্গন এলাকা দিয়ে পাহাড়ি উজানী ঢলের পানিতে ক্ষয় ক্ষতির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলা প্রশাসন এ দিকে সার্বক্ষনিক নজরদারী করছে। ধলাই, লাঘাটা নদীসহ সবগুলো পাহাড়ি ছড়ার পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বৃষ্টিপাত বন্ধ না হলে অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে।
মন্তব্য করুন