চাবি নিতে না পারায় প্রান গেল মা ও মেয়ের
এমদাদুল হক॥ প্রতিদিনের মতো দরজা জানালা বন্ধ করে ঘরের প্রধান ফটকে লোহার গেইটে তালা লাগিয়ে পরিবারের ৩ সদস্য মা, মেয়ে ও ছেলে একটি টিন সেডের ঘরের ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে ঘুমান। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, শেষ রাতে হঠাৎ আগুনের ছোবলে তাদের ঘুম ভেঙ্গে গেলে বের হওয়ার জন্য ঘরের ভেতর ছুটাছুটি করেন।
এক পর্যায়ে তারা বারান্দায় প্রধান ফটকে লোহার গেইট দিয়ে বের হওয়ার জন্য ছুটে আসেন। লোহার ঐ গেইটের ভেতর ও বাহির দিকে ২টি তালা দেয়া ছিলো। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে রুম থেকে বারান্দায় দৌড়ে বের হওয়ার সময় ১টি তালার চাবি আনলেও আরেকটি চাবি আনতে ভুলে যান মা রোকেয়া বেগম। কিন্তু পেছনে ফিরে আবার রুমের ভেতরে গিয়ে অপর চাবিটি আনার সুযোগ তখন ছিলোনা। কারণ রুমটির ভেতরে তখন আগুনের ভয়াবহ তান্ডব চলছিলো।
রাজনগরের ভুজবল গ্রামে অগ্নিকান্ডের সময় উদ্ধারকারী প্রতিবেশী শামসুল হকের কাছ থেকে উদ্ধার অভিজ্ঞতা শুনতে গিয়ে জানা গেলো এমন তথ্য। তিনি আরও বলেন, আমরা উদ্ধার করতে এসে তালাটিও ভাঙতে কষ্ট হচ্ছিলো। কারণ সেটা ভেতরের দিকে লাগানো ছিলো। ফলে বাহির থেকে তালাটি ভাঙ্গা কঠিন হয়ে পড়ে।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমরা উদ্ধার করতে এসে ভেতরের তালার জন্য বেগ পেতে হয়েছে। একদিকে তালা ভাঙতে পারছিলাম না, অন্যদিকে অগ্নিদগ্ধদের বেঁচে থাকার জন্য ছুটাছুটি ও কষ্ট সহ্য হচ্ছিলো না। আমাদের চোখের সামনেই মেয়ে শাহিনা বেগম ছটফট করে মারা যায়। অনেক চেষ্টার পর আমরা তালা ভেঙ্গে আহত অবস্থায় মা রোকেয়া বেগম ও ছেলে মুন্না আজিজকে উদ্ধার করি। পরে তাদেরকে হাসপাতালে প্রেরণকালে যাত্রাপথেই মারা যান রোকেয়া বেগম।
কথাগুলো বলতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না কেউ। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ভুজবল গ্রামে মৃত ওয়াছির মিয়ার ঘরে ২৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে অগ্নিকান্ড নিমেষেই কেড়ে নিলো দু’টি তাজা প্রাণ। ১টি তালার চাবি হয়তো তখন বেঁচে থাকার শেষ চাবি ছিল।
মন্তব্য করুন