চার দিন ধরে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাজনগরে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিয়ে!
হোসাইন আহমদ॥ রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চার দিন ধরে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখে অবসরপ্রাপ্ত ফার্মাসিষ্ট ডাঃ রমেন্দ লাল রায় (রায় বাবু) এর ছেলে (বর) শ্রীমান রাজীব রায় এর বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। যার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই ইউনিয়নে হতদরিদ্র রোগীরা। দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে প্রতিনিয়ত ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে। আবার কেউ কেউ যাচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
জানা যায়, বরের মা বানী বালা দেব ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা হিসেব নিয়োজিত। সরেজমিন এলাকায় গেলে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ফটকে অত্যাধনিক বিভিন্ন রংঙের কাপড় দিয়ে একটি গেইট বাঁধা হয়েছে এবং পুরো কমপ্লেক্স লাইটিংও করা হয়েছে। কমপ্লেক্সের ভীতরে চলছে গান, দামাইল, গীত, জোকারসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের রীতি অনুযায়ী নানা কর্মকান্ড। হাসপাতালের বারান্দায় অতিথিদের আপ্পায়নের জন্য বাধা হয়েছে বড় প্যান্ডেল। অতিথিদের উপস্থিতি ও গান বাজনায় সরগম হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। অপরিচিত কেউ গেলে ভাবতেই পারবে না যে এটা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মনে হবে এটা কারো পৈত্তিক বাড়ি।
৫ ফেব্রুয়ারী সোমবার দুপুরে প্রতিবেদক রোগী সেজে চিকিৎসা নিতে গেলে দায়িত্বরত উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ডাঃ উজ্জ্বল দাসকে পাওয়া যায়নি। বর শ্রীমান রাজীব রায় বলেন, “আজকে এখানে চিকিৎসা নিতে আসছেন। দেখছেন না এখানে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। যান ফার্মেসী থেকে ঔষধ নিন”।
এসময় প্রতিবেদক স্থানীয় লোকদের সাথে কথা বললে জানা যায়, দুতলা বিশিষ্ট কমপ্লেক্সের নিচ তলা হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করলেও উপর তলায় স্বপরিবারে থাকেন অবসরপ্রাপ্ত ফার্মাসিষ্ট ডাঃ রমেন্দ লাল রায়। প্রায় ৫ বছর আগে তিনি অবসরে যান। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউনিয়নের মানুষ চিকিৎসা নিতে আসলে দু-একজনকে ঔষধ দিয়ে বাকীদের ঔষধ নেই বলে বর্তমান উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার বিদায় করে দেন। অভিযোগ রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বরাদ্দকৃত ঔষধ গুলো অবসরপ্রাপ্ত ফার্মাসিষ্ট নিজের ফার্মেসীতে বিক্রি করেন। আজাদের বাজারে এসআর ফার্মেসী নামে ডাঃ রমেন্দ লাল রায়ের একটি ফার্মেসীও রয়েছে।
এই কোয়াটারটি কার নামে বরাদ্দ জানতে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনার কার্যালয়ে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হেডক্লার রতন দাসের সাথে যোগাযোগ করলে কেউই বলতে পারেন না। পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা বানী বালা দেবের নামে বরাদ্দ থাকলে আমরা বেতন থেকে কেটে রাখতাম।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) প্রানেশ চন্দ্র সীল বলেন, পাঁচগাঁওয়ে আমাদের অফিস থেকে বানী বালা দেবকে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে কোয়াটার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কিনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলতে পারবেন।
অবসরপ্রাপ্ত ফার্মাসিষ্ট ডাঃ রমেন্দ লাল রায়ের ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দিলে উনার ছেলে (বর) শ্রীমান রাজীব রায় ফোন রিসিভ করে বিয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, বিয়ের কারনে চিকিৎসার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বিয়ের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অনুমতি নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন মৌখিকভাবে অনুমতি নেয়া হয়েছে।
পাঁচগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ডাঃ উজ্জ্বল দাস এর মুঠোফোনে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
মন্তব্য করুন