চায়ের দেশের ‘চা জাদুঘর’
ওমর ফারুক নাঈম॥ চায়ের রাজধানী খ্যাত পর্যটন নগরী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রয়েছে শত বছরের চা বাগানের ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে গড়ে উঠা চায়ের দেশের ‘চা যাদুঘর’। চায়ের বিভিন্ন জাত, চা-চাষ সম্পর্কিত নানা উপাদান ও চা চাষের ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে শ্রীমঙ্গলের টি-বোর্ডের উদ্যোগে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। ছোট ছোট চারটি কক্ষ, দুটি পাশাপাশি, দুটি কয়েক গজ দূরে। সেখানে একদিকে রয়েছে নির্যাতনের হাতিয়ার, অন্যদিকে শ্রমিকদের ব্যবহৃত নানান যন্ত্রপাতি।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ২০০৯ সালে ব্রিটিশ কারিগর নামক স্থানে উদ্বোধন করা হয় এই চা যাদুঘরটি। এখানে রয়েছে ব্রিটিশ শাসন আমলে চা-বাগানে ব্যবহার হওয়া বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, চা শ্রমিকদের ব্যবহৃত বিশেষ কয়েন, বাগান লাগোয়া ব্রিটিশ বাংলোয় ব্যবহৃত শতাধিক আসবাবপত্র, ব্রিটিশ আমলের ফিল্টার, চা গাছের মোড়া-টেবিল, প্রোনিং দা, প্লান্টিং হো, রিং কোদাল ইত্যাদি।
এছাড়াও এখানে রয়েছে ব্রিটিশ আমলে চা শ্রমিকদের ব্যবহৃত খুন্তি, কোদাল, চয়ন যন্ত্র, কাটার, কোদাল, ত্রি-ফলা টাইপের কোদাল, মহিলা শ্রমিকদের ব্যবহৃত মাদুলী, নুপুর, ঝুমকা, নানা ধরনের রুপার গহনা ইত্যাদি এ জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। স্থান পেয়েছে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে ব্যবহৃত রৌপ্য তাম্র মুদ্রা। চা যাদুঘরে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপাদমস্তক প্রতিকৃতি। খালি চেয়ার-টেবিলের পেছনে সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা পরিহিত বঙ্গবন্ধু ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। বিশাল ছবিটা দেখে মুগ্ধতা ছুঁয়ে যায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭-৫৮ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। আর সেই সুবাদে এসেছিলেন শ্রীমঙ্গলের নন্দবানী চা বাগানে। তৎকালিন সময়ে বঙ্গবন্ধু যে চেয়ারে বসে মিটিং করেছিলেন সেই চেয়ারটি অতি যতœ সহকারে রাখা হয়েছে এখানে। রাখা হয়েছে মিটিংয়ের সেই টেবিলটিও।
চা যাদুঘরটিতে আরো রয়েছে নেপচুন চা বাগান থেকে সংগৃহীত কেরোসিনের কুপি দিয়ে চালিত মাঝারি ফ্রিজ, মাথিউড়া চা বাগান থেকে প্রাপ্ত হাতে ঘোরানো টেলিফোন সেট। আরও রয়েছে ব্রিটিশ আমলের টারবাইন পা¤প, সার্ভে চেইন, হস্তচালিত নলকূপ, লিফট পা¤প, সিরামিকের পানির ফিল্টার, সিরামিক জার, ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রাচীন বৈদ্যুতিক পাখা, পুরনো রেডিও টেলিফোন সেট, প্রনিং দা, টাইপ রাইটার, প্রাচীন পিএইচ মিটার ও চা প্রসেসিং যন্ত্রপাতি।
চা বাগানের ইতিহাস,ঐতিহ্য সবার কাছে তুলে ধরতে শ্রীমঙ্গলের এই চা যাদুঘরটির আরো উন্নয়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত দর্শনার্থীরা।
মন্তব্য করুন