চা বাগানের সাহেব

November 27, 2023,

রবিউল ইসলাম খান॥ চা বাগান!  অন্য এক জগৎ!  চা বাগানের গুরুত্বপূর্ণ পদ হচ্ছে ব্যবস্থাপক, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে ম্যানেজার,  এই ম্যানেজারদের আবার টি প্লান্টার বলা হয়।

চা বাগানের ভেতরের গল্প অনেকেরই অজানা। চা বাগান দেখতে যতটা সুন্দর ঠিক তেমনি এর ভেতরের গল্প এতটা সুন্দর কিংবা ভালো নয়। হঠাৎ করে বেড়াতে যাওয়া কিংবা দুইদিনের জন্য বেড়াতে যাওয়া রোমাঞ্চকর। কারো মুখে শুনা গল্প কিংবা উপন্যাসে পড়া চা বাগানের গল্প যে কাউকেই আকর্ষণ করে। এক কাপ ধোঁয়া-উড়া চা উৎপাদনে যাদের মেধা ও অবদান অক্লান্ত, যারা চা শিল্পের অন্যতম প্রাণ,যাদের কর্মনিষ্ঠায় গড়ে উঠে পাহাড়ের টিলায় টিলায় সারি সারি সবুজের মেলা এবং  ‘সিনেনসিস ক্যামেলিয়া’ নামক উদ্ভিদের জন্ম। বলছি সেই টি প্ল্যান্টার কিংবা চা বাগানের ম্যানেজার বা সাহেবদের গল্প। যদিও এদের নিয়ে তেমন একটা মানুষের সচারাচর ধারণা নেই। যারা চা সেক্টরের সাথে জড়িত কিংবা যাদের আত্মীয়-স্বজন কাজ করেন চা বাগানে তারা হয়তো চা বাগানের ভিতরের এই গল্পটা জানেন।

চা বাগানের ব্যবস্থাপক বা ম্যানেজারদের চা বাগানের ভাষায় বলা হয় সাহেব। চা বাগানের ইতিহাস ১৫০ বছরেরও পুরাতন। এদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত একজন হন এই চা বাগানের সাহেব। প্রেম আর ভালোবাসার এই চা শিল্পের জন্য একজন সাহেব কাজ করে যান অবিরাম। কোয়াশা ভরা ভোর সকাল ৬ টায় শুরু উনার কর্মঘন্টা। গুনতির মাধ্যমে শুরু হয় সারা দিনের কর্ম। চা বাগানের ভাষায় গুনতি হলো সারাদিন চা বাগানে কি কাজ হবে তার যে পরিকল্পনা তা সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়া। অবশ্য আগের দিনেই সকল কাজ শেষে মাস্টারিং করে রাখা হয়। মাস্টারিং অর্থাৎ পরের দিনের কর্ম পরিকল্পনা। আর গুনতিতে শুধু কোনো সমস্যা হলে অথবা আবহাওয়া পরিবর্তন হলে সেই কর্ম পরিকল্পনা বদলানো হয়।  একজন সাহেবের আছে পরিবার, আত্মীয়-স্বজনকে দূরে রেখে জীবন ও যৌবন বিসর্জন দেওয়ার গল্প। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পোড়া, ঘাম জড়া শরীর নিয়ে তিনি কাজ করে যান তিনি চা বাগানের জন্য। তার কর্ম জীবন কাটে নিঃসঙ্গতা আর একাকিত্বে। চা শ্রমিকের কাজ তদারকি কিংবা তাদের সমস্যায় তিনি থাকেন পাশে। সারাদিন রোদে পোড়ে, বৃষ্টিকালে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করে যান। সারাদিন কর্মঘন্টা আর রাতে অফিস সবকিছুই ব্যস্ত সময় পাড় করেন তিনি। সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার। সেই রবিবারেও তিনি অনেক সময় কাজের কারণে চা বাগান থেকে বের হতে পারেন না। চাপ সহ্য আর পরিস্থিতি সামাল দিয়ে যান প্রতিনিয়তই। ‘সিনেনসিস ক্যামেলিয়া’ নামক উদ্ভিদের যত্ন কিংবা পরিচর্যার কারিগর তিনিই। সবুজ এর গালিচা তৈরির মেধাও উনার। আমাদের হাতে এক কাপ আসার পিছনে আছেন পর্দার আড়ালে থাকা এই হিরোরা। চা বাগানের নতুন সৃষ্টিশীল কাজের কৃতিত্ব তাদেরই। তারা আমাদের দেন ঘুম-ঘুম ভাব দূর করার কিংবা ক্লান্ত বিকালের এক কাপ চা উপহার।

চায়ের প্রতিটি কাপ গল্প বলে। চায়ের প্রতিটি কাপ একটি কাল্পনিক সমুদ্রযাত্রার প্রতিনিধিত্ব করে। চায়ের কাপ মনের চাপ নিরাময়ক। সেই চায়ের জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন কিছু এক কাজ মেধাবী টি প্ল্যান্টার বা চা বাগানের ম্যানেজাররা।

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইলো আমার আত্মীয় দুইজন টি প্ল্যান্টার একজন মৌলভী চা বাগানের ম্যানেজার এসএনএম মাহবুব আলম মিসবাহ সাহেব ও আরেকজন সাতগাঁও চা বাগানের এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার নাজমুল হাসান জুয়েল সাহেব সহ সকল চা বাগানের টি প্ল্যান্টার অর্থাৎ ম্যানেজার-জেনারেল ম্যানেজার,ডেপুটি ম্যানেজার ও এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারদের প্রতি। চা বাগানের সকল টি প্ল্যান্টারদের কর্মনিষ্ঠার প্রদযাত্রা এগিয়ে যাক, সর্বোপরি চা শিল্পের উন্নতিতে এদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখুক এবং আমাদের চা শিল্প সুন্দর ভবিষ্যৎ নিয়ে সূদুর এগিয়ে যাক এই কামনা করি।

লেখক : মোঃ রবিউল ইসলাম খান  রবিন। শিক্ষার্থী, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট- খাদিম নগর, সিলেট। মোবাইল: ০১৭৬৫-৩৮২০১৬।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

১টি মন্তব্য “চা বাগানের সাহেব”

  1. অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার লেখাটি অত্র পত্রিকায় প্রকাশিত করার জন্য।

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com