চা শ্রমিক ও শব্দকর অধ্যূষিত ৬টি ওয়ার্ডে কোন কার্ড বিতরণ হয়নি ॥ বিভিন্ন স্থানে বাতিল অর্ধশতাধিক কার্ডধারী সদস্য কমলগঞ্জে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর আওতায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ১০ টাকা কেজি দরে হত-দরিদ্রের মাঝে চাল বিতরণ নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৯টি ইউনিয়নের অধিকাংশ ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান, মেম্বাররা সচ্ছল ও স্বজনদের মধ্যে কার্ড বিতরণ করেছেন। আলীনগর ইউনিয়নের চা শ্রমিক, শব্দকর অধ্যুষিত ৬টি ওয়ার্ডে কোন কার্ড বিতরণ করা হয়নি। দেশব্যাপী ১০ টাকা কেজির চালে কার্ড বিতরণে অনিয়মে সরগরম হয়ে উঠলে কমলগঞ্জ প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছে। ইতিমধ্যে কার্ড প্রাপ্ত অর্ধশতাধিক ব্যক্তির নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে নাম পরিবর্তন।
স্থানীয়দের অভিযোগে কয়েকটি স্থানে সরজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চেয়ারম্যান, মেম্বারদের পরিচিত স্বজন ও স্বচ্ছল অনেকেই ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড পেয়েছেন। প্রথমে বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে জনপ্রতিনিধিরা ইচ্ছে মতো কার্ড বিতরণ করেছেন। দেশব্যাপী তোলপাড় দেখা দেয়ায় এখন কমলগঞ্জ প্রশাসনও অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তু শুরু করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন ডিলার জানান, রোববার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডিলারদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন। সভায় ডিলারদের বক্তব্যে অনেক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তারা বলেছেন, কার্ড নিয়ে চাল নিতে দেখা গেছে অনেক বিত্তবান, ভূমির মালিক, দলীয় অবস্থাশালী ব্যক্তিবর্গ। অথচ হত দরিদ্র অসংখ্য লোক রয়েছেন যারা এখনও কার্ড পাননি। চেয়ারম্যান, মেম্বার হতদরিদ্রদের কোন তোয়াক্কাই করছেন না। আলীনগর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য উত্তম কুমার ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাম ভরস বলেন, তাদের ওয়ার্ডে একটি কার্ডও বিতরণ করা হয়নি। অথচ দরিদ্র চা শ্রমিক ও শব্দকর সম্প্রদায়ের লোকজনও বসবাস করছেন। এভাবে ইউনিয়নের ৬ টি ওয়ার্ডে কোন কার্ড বিতরণ করা হয়নি।
কমলগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্রে জানা যায়, নয়টি ইউনিয়নে ৬ হাজারেরও বেশি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু অনিয়মের খবরও বেরিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে মুন্সিবাজার ইউনিয়নে কার্ড প্রাপ্ত ৩৮ জনের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন লোকের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে নাম পরিবর্তন চলছে।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ শরীফ মোল্লা কিছু অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আসলে এ বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে তদন্ত চলছে। কোথাও কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে ৩৮ জনের নামের তালিকা থেকে বাতিল বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা এড়িয়ে বলেন, কয়েকদিন পর সংবাদ প্রকাশ করলে সকল তথ্য পাবেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি অনিয়ম বিষয়ে তদন্ত করে দেখছে। তাছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে নাম পরিবর্তনও হচ্ছে। সব মিলিয়ে জোর তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন