চা-শ্রমিক সংঘের সভায় বক্তারা অবিলম্বে সকল চা-বাগানের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, রেশন ও বোনাস প্রদানের দাবি  

April 7, 2025,

স্টাফ রিপোর্টার : এনটিসি কোম্পানী ১২ টি চা-বাগান, দেউন্দি টি কোম্পানীর ৪ টি চা-বাগান, বড়জান টি কোম্পানী, ফুলতলা চা-বাগানসহ বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি-রেশন ও পূর্ণ উৎসব বোনাস প্রদানের দাবি জানিয়েছেন চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ।

রোববার ৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরস্থ কার্যালয়ে চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভা থেকে এই দাবি জানানো হয়। চা-শ্রমিক সংঘ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি শ্যামল অলমিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হরিনারায়ন হাজরা, সহ-সাধারণ সম্পাদক সুভাষ গৌড়, সাংগঠনিক সম্পাদক নারী চা-শ্রমিক নেত্রী লক্ষèীমনি বাক্তি, সদস্য সুনীল কর, সামরতি মৃধা প্রমূখ।

সভায় বক্তারা বলেন দেশের চা-শিল্পের ইতিহাসে চা-শ্রমিকরা বর্তমানে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছেন। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির এই সময়ে অনেক বাগানের চা-শ্রমিকরা কাজ করেও মাসের পর মাস প্রাপ্য মজুরি-রেশন ও উৎসব বোনাস পাচ্ছেন না। বিশেষ করে এনটিসির ১২ টি চা-বাগান, দেউন্দি টি কোম্পানীর ৪ টি বাগান, বড়জান টি কোম্পানীর চা-বাগানসহ বিভিন্ন বাগানের চা-শ্রমিকরা কাজ করেও প্রাপ্য সাপ্তাহিক মজুরি ঠিকমত পাচ্ছেন না।

এছাড়াও দীর্ঘদিন যাবত জুড়ী উপজেলার ফুলতলা চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি-রেশন বন্ধ রয়েছে। শুধু তাই বিগত ফাগুয়া (লাল পূজা) উৎসবেও বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকদের প্রাপ্য উৎসব বোনাস প্রদান করা হয়নি। চা-বাগান মালিকদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি এবং চা-শিল্পে সরকার ঘোষিত নিন্মতম মজুরির গেজেট (এস. আর.ও. নং ২৪৬-আইন/২০২৩) অনুযায়ী ফাগুয়ায় সকল চা ও রাবার-শ্রমিকরা উৎসব বোনাস হিসেবে ৩,৭১২.৮০ টাকা পাওয়ার অধিকারী। কিন্ত বিভিন্ন বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের উৎসব বোনাসের পরিবর্তে কর্মে হাজিরার উপর নির্ভর করে উৎসাহ বোনাস প্রদান করে শ্রমিকদের বঞ্চিত করা হয়।

বক্তারা বলেন, এমনিতে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির সময়ে চা-শ্রমিকরা দৈনিক মাত্র ১৭৮.৫০ টাকা মজুরিতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়, তার উপর যদি কাজ করেও ঠিকমত মজুরি-বোনাস না পায় তাহলে যে কি অবস্থা হয় তা বর্ণনাতীত! তদপুরি দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির পর গত ২০২৩-২০২৪ মেয়াদে চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়নি, এমন কি ২০২৫-২০২৬ মেয়াদেরও ৩ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও মজুরি বৃদ্ধি করা হচ্ছে না। এরকম পরিস্থিতিতে চা-শিল্পের শ্রমিকরা দুঃসহ সময় পার করছেন। শুধু শ্রমিকরা নয় অনেক বাগানের কর্মচারীদের (স্টাফদের) মাসিক বেতনও পরিশোধ করা হচ্ছে না, এমন কি অবসরগ্রহণকারী কর্মচারীরাও প্রাপ্য আইনানুগ পাওনাদি পাচ্ছেন না।

সভা থেকে চা-শ্রমিক নেতারা সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও উৎপাদনে সক্রিয় থাকার প্রয়োজনে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ৬ সদস্যের পরিবারে ভরণ পোষণের খরচ হিসাব করে ২০২৩-২০২৪ এবং ২০২৫-২০২৬ মেয়াদের জন্য নিন্মতম মজুরি নির্ধারণ এবং একটি পরিবারের সাপ্তাহিক প্রয়োজনের অনুপাতে চাল, আটা, ডাল, তেল, চিনি, সাবান, চা-পাতাসহ পূর্ণ রেশন প্রদান, ভূমির অধিকার প্রদান, চা-শিল্পে নৈমিত্তিক ছুটি (বছরে ১০ দিন) কার্যকর ও অর্জিত ছুটি প্রদানে বৈষম্যসহ শ্রম আইনের বৈষম্য নিরসন করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মজুরি ও উৎসব বোনাস প্রদানে সকল অনিয়ম বন্ধ করে শ্রমআইন মোতাবেক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক প্রদান, বকেয়া মজুরিসহ নিয়মিত সকল চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি-রেশন পরিশোধ, প্রতি মাসের পিএফ চাঁদা ফান্ড অফিসে জমা প্রদান এবং ৯০ দিন কাজ করলেই সকল শ্রমিককে স্থায়ী করার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান জানান।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com