জন প্রতিনিধি থেকে সফল সবজি চাষি
শংকর দুলাল॥ একটি টেলিভিশন চ্যানেলের কৃষকের বাজেট অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে ইউপি সদস্য/প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে কাছে থেকেই সেই অনুষ্ঠান দেখেছিলেন রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর ইউপি সদস্য এম মামুনুর রশিদ। ওই অনুষ্ঠানেই তিনি কৃষির প্রতি উদ্বুদ্ব হন। এছাড়াও বাড়ির আশেপাশে ‘অনেকেই সবজি চাষ করেন কিন্তু আমি পারবনা কেন’ এই জেদ চেপেছিল মনে। সেই জেদ থেকের্ই শুরু অতঃপর সফল কৃষক হয়ে ওঠেন এম মামুনুর রশিদ। তিন বছর আগে অল্প কিছু জমিতে সবজি চাষ শুরু করে এখন তিনি সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে প্রায় ১৯জাতের সবজি চাষ করছেন। তার খামারের একেকটি মিষ্ঠি কুমড়া ১৫-২০ কেজি ওজনের হয়। খামার থেকেই সবজি নিয়ে যায় পাইকাররা। সফল মামুনুর রশিদ বড়কাপন গ্রামের মোঃ রেনু মিয়ার ছেলে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এম মামুনুর রশিদ নিজে তার সবজি খামারে কাজ করছেন এবং শ্রমিকদের বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে দিচ্ছেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম বছর তিনি এক বিঘা জমিতে টমেটো, ঝিঙা, বরবটি, করলা সহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করেছিলেন। শুরুটা দক্ষতা জনিত কারণে তেমন ভাল হয়নি। আত্মপোষন ছাড়া আনুমানিক ২৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি রাজনগর কৃষি বিভাগের সাথে পরামর্শ করে তাদের সহযোগীতায় এবং শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন সবজি বীজ বিক্রেতা ও কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের নিকট থেকে পরামর্শ নিয়ে পূনরায় চাষ শুরু করেছিলেন। তাদের পরামর্শ মতো কাজ করে পরবর্তীতে তিনি সফল হন। এবছর তিনি আরো ৪ বিঘা সহ মোট ৫ বিঘা জমিতে টমেটো, বেগুন, ঝিঙ্গা, শসা, করলা, মিষ্টি কুমড়া, পুইশাক, হাইব্রিড কচু, মুকি, বড়বটি, চিচিঙ্গা, নালিতা, ডুগি, লালশাক, বনঢুলা, ফুলকপি সহ প্রায় ১৯ জাতের সবজি চাষ করেছেন এবং বিগত ৫ মাসে এ পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন বলে জানান। উল্লেখ্য যে ৫ বিঘা জমিতে এসব সবজি চাষ করতে তার ব্যয় এখন পর্যন্ত ৩ লাখ টাকা। উপজেলার সফল সবজি চাষি হিসেবে বিগত ১০-১২ এপ্রিল উপজেলা কৃষি প্রযুক্তি মেলায় এম মামুনুর রশীদকে দ্বিতীয় শ্রেষ্ট চাষি হিসেবে সনদপত্র ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
মামুনুর রশিদ জানান, রাজশাহি কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে তিনি মিষ্টি কুমড়ার বীজ সংগ্রহ করেন। একেকটি কুমড়া ১৫-২০ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। হাইব্রিড জাতের টমেটোর চারা রোপন করেছেন। এসব সবজির দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে। এখন চারজন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করছেন তার সবজি খামারে। এছাড়াও বাড়িতে উন্নত জাতের ৮টি গরুর একটি খামার রয়েছে। পাশাপাশি ৪ বিঘা জমিতে ব্যুরো আবাদ করে আশানুরুপ ফসল পেয়েছেন। কীটনাশক ও সার কম ব্যবহার করে নিজের তৈরী কীটনাশক ও জৈব সারের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি। পোকার আক্রমন থেকে সবজি বাঁচানোর জন্য কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন নিরাপদ প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন। তিনি আরো জানান, এবছর এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকা এবং ২লাখ ৫০হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। তিনি এবার তার খামার থেকে মোট ১০ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন বলে জানান। এম মামুনুর রশিদ আরো বলেন, জনপ্রতিনিধি হয়েছি বিধায় জনগনের কাজে দৌড়াতে হয়। বিভিন্ন সমস্যা, বিচার-সালিশ করেও নিজ খামারে সময় দিতে হয়। আগামী বছর তিনি আরো বেশি জমিতে সবজি চাষ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
এব্যাপারে রাজনগর উপজেলা কৃষি কমকর্তা শেখ আজিজুর রহমান বলেন, আমি তার খামার গুলো কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। তিনি কম সময়ে সবজি চাষে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে সফল হয়েছেন এবং আমরা তাকে বিগত কৃষি প্রযুক্তি মেলায় সম্মানিত করেছি। আশারাখী আগামীতে তিনিও জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত সফল কৃষক হবেন। তাকে পরামর্শ দিয়েছি আগাম জাতের সবজি চাষ করার জন্য। এতে বেশি লাভবান হওয়া যাবে। এছাড়াও তাকে দেখে আরো অনেক কৃষক সবজি চাষে উদ্বুদ্ব হবে।
মন্তব্য করুন