জমে উঠেছে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণা
হোসাইন আহমদ॥ সাধারণ মানুষের দৌড়গোড়ায় সেবা ও গ্রাম-অঞ্চলের অবকাঠামুগত উন্নয়নের জন্য জেলা পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। বিভিন্ন স্থাপনা, রাস্তা ঘাট, মসজিদ, মন্দির, স্কুল, কলেজ, ব্রীজ-কালভার্টসহ অন্যন্যা স্থাপনা নির্মাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এগুলোর সফলতা অনেকটাই নির্ভর করে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের উপর।
আগামী ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের নির্বাচনের সম্ভাব্য দিন নির্ধারন করা হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে ময়দানে নিজেদের প্রার্থীতা জানান দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেকেই কেন্দ্রীয় সংগঠনের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্য ফেইসবুকের তাদের সমর্থক ও ভক্তরা ফেষ্টুন, ব্যানার ও লিফলেট বানিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই নির্বাচন সচেতন মহলের আলোচ্য সূচিতে পরিণত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রাথীর মধ্যে রয়েছেন বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ ফিরোজ,
সাবেক বিট্রিশ কাউন্সিলার ও যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীরের সহ-সভাপতি ও মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এম এ রহিম শহিদ (সিআইপি), এডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব, সাবেক এমপি এম এম শাহীন, জেলা আওয়ামীলীগরে সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল, জেলা জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী মাহবুবুল আলম শামীম।
সাধারণ সদস্য পুরুষ প্রার্থীদের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে এমসিএস এর চেয়ারম্যান ও সমাজ সেবক হাসান আহমেদ জাবেদ, সৈয়দ গৌছুল হোসেন। কুলাউড়া থেকে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, বদরুল ইসলাম বদর, আব্দুল মতলিব, নানু মিয়া, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ, অধ্যাপক মোঃ শাহজান ও মানিক মিয়া। বড়লেখা থেকে লুকমান আহমদ, আব্দুল লতিফ, ইমান উদ্দিন, সুব্রত কমার দাস ও ফখরুল ইসলাম। কমলগঞ্জ থেকে আশিদ আলী, মোঃ হেলাল উদ্দিন, মোশাররফ হোসেন ও গোলাম মুগ্নি তৈমুছ। রাজনগরের ইয়াসিন তালুকদার, রওলক আহমদত অপু, এহতেসামুল হক সাজ্জাদ, ফজর আলী ও লুৎফুর রহমান গেদু। শ্রীমঙ্গল থেকে সাংবাদিক বিকুল চক্রবতীর্, মুছাব্বির আলী মুন্না। মহিলা সদস্য হিসেবে রহিমা আক্তার ও শিরিন আক্তার চৌধুরী মুন্নি, ডলি বেগম, শাহনাজ আক্তার, আজিবুন বেগম ।
নির্বাচনে সম্ভাব্য কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থীদের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী সাবেক বিএনপি নেতা ও ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এম শাহীন। গেল কয়েকদিন ধরে এমন গুঞ্জন ছড়াচ্ছে তার নিজ নির্বাচনী এলাকা (কুলাউড়া-কমলগঞ্জ আংশিক)সহ পুরো জেলায়। সবকিছু ঠিকঠাক হলেই তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়বেন দৃঢ়তার সঙ্গে এমনটিই জানাচ্ছেন তারা।
বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক আজিজুর রহমান বলেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে জেলা পরিষদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি। নির্বাচন হলে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চাইব। মনোনয়ন পেলে ভোটে অংশ নেব।
বহু গুণের অধিকারী ক্ষমতাশীল দলের জনপ্রিয় নেতা এম এ রহিম শহিদ বলেন, স্বাধীনতা উত্তর সময়ে দেশ ও দলের জন্য অনেক ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করেছি। সে সময় মৌলভীবাজারের প্রতিটি স্কুলে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করি। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার কারণে কারাবরণ করতে হয়েছে। ৭ মে ২০০৭ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার সফর সঙ্গী হয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে আগমন করলে ১৮ দিন কারাবরণ করতে হয়। তিনি মৌলভীবাজারকে আগামী দিনে আধুনিক ও মডেল জেলা হিসেবে গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুলের নামও আলোচনার টেবিলে রয়েছে। তার ভক্ত ও সমর্থকরা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এভারের নির্বাচনে তারা তাদের প্রিয়নেতাকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান।
জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি সৈয়দ শাহাব উদ্দিন আহমদ বলেন, আমাদের জেলা ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী মাহবুবুল আলম শামীম সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। এছাড়াও সাধারণ সদস্য পুরুষ ও মহিলা পদে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। পরিস্থিতির আলোকে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রার্থী চুড়ান্ত করা হবে।
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, মৌলভীবাজারের ৭টি উপজেলার ৬৭টি ইউনিয়ন, ৫টি পৌরসভা ও ৭টি উপজেলা মিলে ৯৪৩ জন নির্বাচকমন্ডলীর সদস্য (ভোটার) রয়েছেন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একজন, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের পাঁচজন নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠন হবে। সব মিলিয়ে ২১টি পদের জন্য এখন পর্যন্ত এ জেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থী মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নিজেদের প্রার্থীতার জানান দিয়ে এখন থেকেই তারা যে যার মতো কৌশলে নির্বাচকমন্ডলীর (ভোটারদের) মন জয় করতে চালাচ্ছেন গণসংযোগ। ব্যানার, ফেস্টুন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জানান দিচ্ছেন। চলছে ঘরোয়া বৈঠক। আসন্ন এই নির্বাচন হবে দেশের প্রথম বারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন। জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের ১৫টি ওয়ার্ডের চূড়ান্ত সীমানা নির্ধারণ ও নির্বাচকমন্ডলীর সদস্যদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান তালিকা তৈরি করে তা ১৬ই আগস্ট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন সামনে রেখে জেলা পরিষদ আইন ২০০০, জেলা পরিষদ ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণ বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী এবং একই আইনের সংশোধিত ৫ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মৌলভীবাজারের নির্বাচকমন্ডলীর সদস্যদের তালিকা চূড়ান্ত করে ৫১৯ (৯৫) স্মারকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
সীমানা ও নির্বাচকমন্ডলীর সদস্য নির্ধারণের পর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্য (পুরুষ ও মহিলা) পদে প্রার্থীরা মাঠে নামছেন। সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে প্রার্থীদের সংখ্যা।
মন্তব্য করুন