জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটি ছিল সমগ্র বিশ্বের শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ভাষণ
মকিস মনসুর॥ জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটি ছিল সমগ্র বিশ্বের শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ভাষণ…মকিস মনসুর.
১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ১৩৬তম সদস্য হিসেবে জাতিসংঘে যোগদান করে। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য এই দিনটি একটি অন্যতম ঐতিহাসিক দিন। সংগঠনটির এ সদস্যপদ প্রাপ্তির পথটি বাংলাদেশের জন্য মোটেই সহজ কোনো বিষয় ছিল না। কেবল মাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রবল ব্যক্তিত্বর কারণেই বাংলাদেশের এ প্রাপ্তি খুব দ্রুত সম্ভব হয়ে ওঠে। আর এ যোগদানের এক সপ্তাহ পর একই মাসের ২৫ তারিখ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাঙ্গালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম বাংলায় ভাষণ প্রদান করে বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে নজিরবিহীন এক সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেন।
তবে জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের সূচনা হয় কিন্তু ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়। সে সময় তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ এবং শরণার্থীদের সহায়তা দানকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে প্রথম যুক্ত হয় জাতিসংঘ।১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতিসংঘে সদস্যপদ লাভ করলেও বাংলাদেশকে প্রথম জাতিসংঘ সংস্থায় সদস্যরূপে স্বাগত জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (ডব্লিউএইচও)। মূলত এর পরপরই বাংলাদেশ জাতিসংঘের বেশিরভাগ বিশেষায়িত অঙ্গ সংস্থার সদস্যপদ লাভ করতে থাকে।
মূলত স্বাধীনতার পরপরই জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের জন্য নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালাতে থাকে বাংলাদেশ। পরে ১৯৭২ সালে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির জন্য তৎপরতা চালায়।
তবে জুলফিকার আলী ভুট্রোর আমলে পাকিস্তান সরকারের প্ররোচনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীনের ভেটো প্রদানের কারণে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য পদ অর্জনে ব্যর্থ হয়।
অর্থাৎ সে সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে আরও বড় রাজনৈতিক লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হয়। পরে ১৯৭৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ওআইসি’র সদস্যপদ লাভ করে। মূলত এরপরে একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ এবং পরে ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় ভাষণ দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এত অল্প সময়ে এতগুলো মৌলিক কাজ সম্পাদন করাই ছিল জাতির পিতার জন্য বিশাল এক অর্জন।
বর্তমানে বাংলাদেশে সংগঠনটির অধীনে থাকা বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম ব্যাপক আকারে দেখা যায়। বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে জাতিসংঘের অন্তত ১০টির বেশি সংস্থা তাদের বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকার এবং জনগণের সঙ্গে একত্রিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
জাতিসংঘ অধীনে থাকা সংস্থাগুলোর কাজের ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, বিদ্যুৎ শক্তি, শিক্ষা, জরুরী সহায়তা, খাদ্য, দুর্যোগ, সুশাসন, স্বাস্থ্য, জেন্ডার ইস্যু, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, মানবাধিকার, অভিগমন, অংশীদারিত্ব, জনসংখ্যা, শরণার্থী, দারিদ্র, কর্মসংস্থান, পুষ্টি, শহরায়ন এবং জীবনধারণ।
বর্তমানে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্বে আরও সমুন্নত হয়েছে। দেশটি এখন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে বাংলাদেশের দুইবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও মানবাধিকার পরিষদের সদস্য পদ লাভ করেছিল এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কমিশন ও নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের চেয়ারম্যান পদেও দেশটি একবার ছিল।
অপরদিকে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে দেশটির লক্ষাধিক শান্তিরক্ষী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানে ক্রমশ অবদান রেখে চলেছে।
১৯৭৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সর্বসম্মত অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এর কয়েক দিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে প্রথমবারের মতো বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই ভাষণটি ছিল সমগ্র বিশ্বের অধিকারহারা শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ভাষণ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার একটি বলিষ্ঠ উচ্চারণ ও সাহসী পদক্ষেপ। জাতিসংঘে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর পূর্ণাঙ্গ ভাষণটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরতে চাই
জনাব সভাপতি
আজ এই মহামহিমান্বিত সমাবেশে দাঁড়াইয়া আপনাদের সাথে আমি এই জন্য পরিপূর্ণ সন্তুষ্টির ভাগীদার যে বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষ আজ এই পরষদে প্রতিনিধিত্ব করিতেছেন। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পূর্ণতা চিহ্নিত করিয়া বাঙালি জাতির জন্য ইহা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার অর্জনের জন্য এবং একটি স্বাধীন দেশ মুক্ত নাগরিকের মর্যাদা নিয়া বাঁচার জন্য বাঙালি জনগণ শতাব্দীর পর শতাব্দীব্যাপী সংগ্রাম করিয়াছেন, তাহারা বিশ্বের সকল জাতির সাথে শান্তি ও সৌহার্দ্য নিয়া বাস করিবার জন্য আকাঙ্ক্ষিত ছিলেন। যে মহান আদর্শ জাতিসংঘ সনদে রক্ষিত আছে আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই আদর্শের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করিয়াছেন। আমি জানি, শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সকল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়িয়া তোলার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আমাদের এই অঙ্গীকারের সাথে শহীদানের বিদেহী আত্মাও মিলিত হইবেন। ইহা বিশেষ আনন্দের ব্যাপার যে স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন সক্রিয় যোদ্ধা সভাপতি থাকাকালেই বাংলাদেশকে এই পরিষদের অন্তর্ভুক্ত করিয়া নেওয়া হইয়াছে।
জনাব সভাপতি, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনের সাফল্যের ব্যাপারে আপনাদের মূল্যবান অবদানের কথা আমি স্মরণ করিতেছি। যাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ বিশ্ব-সমাজে স্থানলাভ করিয়াছে এই সুযোগে আমি তাঁদেরকেও অভিবাদন জানাই। বাংলাদেশের সংগ্রামে সমর্থনকারী সকল দেশ এই সুযোগে আমি তাঁদেরকেও অভিনন্দন জানাই। বাংলাদেশের সংগ্রামে সমর্থনকারী সকল দেশ ও জনগণের প্রতি আমি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতেছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংহতকরণ, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন ও ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় বাংলাদেশকে যাঁহারা মূল্যবান সাহায্য দিতেছেন। তাঁহাদেরকেও আমরা ধন্যবাদ জানাই। জাতিসংঘে যাঁহারা আমাদের স্বাগত জানাইয়াছেন তাঁদেরকে আমি বাংলাদেশের পক্ষ হইতে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাইতেছি।
বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম হইতেছে সার্বিক অর্থে শান্তি এবং ন্যায়ের সংগ্রাম আর সেই জন্যই জন্মলগ্ন হইতেই বাংলাদেশ বিশ্বের নিপীড়িত জনতার পার্শ্বে দাঁড়াইয়া আসিতেছে। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পরে এই ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা হইতে দেখা যায় যে, এইসব নীতিমালার বাস্তবায়নে অব্যাহতভাবে কী তীব্র সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে হইতেছে। এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার লক্ষ লক্ষ বীর যোদ্ধার চরম আত্মদানের মাধ্যমে শুধুমাত্র জাতিসংঘ সনদ স্বীকৃত আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার পুনরুদ্ধার সম্ভব।
আগ্রাসনের মাধ্যমে বেআইনিভাবে ভূখণ্ড দখর, জনগণের অধিকার হরণের জন্য সেনাবাহিনী ব্যবহার এবং জাতিসংঘ বৈষম্য ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এখনো অব্যাহত রহিয়াছে। আলজিরিয়া, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ এবং গিনিবিসাউ এই সংগ্রামে বিরাট বিজয় অর্জন করিয়াছে।
চূড়ান্ত বিজয়ে ইতিহাস যে জনগণ ও ন্যায়ের পক্ষেই যায়, এইসব বিজয় এই কথাই প্রমাণ করিয়াছে। কিন্তু বিশ্বের বহু অংশে এখনো অবিচার ও নিপীড়ন চলিতেছে। অবৈধ দখলকৃত ভূখণ্ড পুরোপুরি মুক্ত করার জন্য আমাদের আরব ভাইদের সংগ্রাম অব্যাহত রহিয়াছে এবং প্যালেস্টাইনি জনগণের বৈধ জাতীয় অধিকার এখনো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয় নাই। উপনিবেশ বিলোপ প্রক্রিয়ার যদিও অগ্রগতি হইয়াছে কিন্তু এই প্রক্রিয়া এখনো চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছায় নাই, বিশেষ করিয়া আফ্রিকার ক্ষেত্রে এই সত্যটি স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। এই অঞ্চলের জিম্বাবুয়ে (দক্ষিণ রোডেশিয়া) এবং নামিবিয়ার জনগণ জাতীয় মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য দৃঢ়তার সাথে লড়াই করিয়া যাইতেছে। বর্ণবৈষম্যবাদ, যাহোক মানবতার বিরোধী বলিয়া বার বার আখ্যায়িত করা হইয়াছে তাহা এখানে আমাদের বিবেককে দংশন করা অব্যাহত রাখিয়াছে।
একদিকে অতীতের অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটাইতে হইতেছে, অপরদিকে আমরা আগামী দিনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হইতেছি। আজিকার দিনে বিশ্বের জাতিসমূহ কোন পথ বাছিয়া নিবে তাহা লইয়া সংকটে পড়িয়াছে। এই পথ বাছিয়া নেওয়ার বিবেচনার উপর নির্ভর করিবে আমরা ধ্বংসের ভীতি এবং আনবিক যুদ্ধের হুমকি নিয়া এবং ক্ষুধা, বেকার ও দারিদ্র্যের কষাগাতে মানবিক দুর্গতিকে বিপুলভাবে বাড়াইয়া তুলিয়া আগাইয়া যাইব অথবা আমরা এমন এক বিশ্ব গড়িয়া তোলার পথে আগাইয়া যাইব- যে বিশ্বে মানুষের সৃজনশীলতা এবং আমাদের সময়ের বিজ্ঞান ও কারিগরি অগ্রগতি আণবিক যুদ্ধের হুমকিমুক্ত উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের রূপায়ন সম্ভব করিয়া তুলিবে। এবং যে বিশ্ব কারিগরিবিদ্যা ও সম্পদে পারস্পরিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে সুন্দর জীবন গড়িয়া তোলার অবস্থা সৃষ্টি করিবে। যে অর্থনৈতিক উত্তেজনা সম্প্রতি সমগ্র বিশ্বকে নাড়া দিয়াছে তাহা একটি ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়িয়া তুলিয়া জরুরিভাবে মোকাবিলা করিতে হইবে। এই বৎসরের প্রথম দিকে এই পরিষদের বিশেষ অধিবেশন বর্তমান জটিল আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করিয়াছে।
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশকে মারাত্মকভাবে আঘাত হানিয়াছে। যুদ্ধের ধ্বংসলীলার উপর সৃষ্টি বাংলাদেশ পর পর কতিপয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হইয়াছে। আমরা সর্বশেষে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হইয়াছি তা হইতেছে এই বৎসরের নজিরবিহীন বন্যা। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সাহায্য করার ব্যাপারে সক্রিয় উৎসাহ প্রদর্শন করায় আমরা জাতিসংঘ, তার বিভিন্ন সংস্থা ও মহাসচিবের কাছে কৃতজ্ঞ।
আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বুমেদীন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুতেফ্লিকা বাংলাদেশের সাহায্যে আগাইয়া আসার জন্য জোটনিরপেক্ষ দেশসমূহের প্রতি আহবান জানাইয়াছেন। মিত্রদেশগুলো এবং বিশ্বের মানবিক সংস্থাসমূহও এ ব্যাপারে সাড়া দিয়াছে। এই প্রাকৃতিক বিপর্যায়ের ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিই শুধু ব্যাহত হয় নাই ইহার ফলে দেশে আজ দুর্ভিক্ষাবস্থার সৃষ্টি হইয়াছে। ইহাছাড়া বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির দরুন আমাদের মতো দেশগুলিতেই দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে হাজার হাজার ডলার শূন্যতার সৃষ্টি হইয়াছে। ইহার অর্থ এই দাঁড়ায় যে বার্ষিক মাথাপিছু একশ’ ডলারেরও কম আয়ের জনগণ বর্তমানে মারাত্মক সংকটের সম্মুখীন হইয়াছে। তাহারা বর্তমান স্তরের চাইতেও তাদের জীবনযাত্রার মান কমাইয়া আনিতে বাধ্য হইয়াছে।
বিশ্বখাদ্য সংস্থার বিবেচনায় শুধুমাত্র বাঁচিয়ে থাকার জন্য যে সর্বনিম্ন সামগ্রীর প্রয়োজন, তাহার চাইতেও কম ভোগ করিয়াছে যেসব মানুষ তাহারা আজ অনাহারের মুখে পতিত হইয়াছে। দরিদ্র দেশগুলোর ভবিষ্যৎ আরো অন্ধকার। শিল্পোন্নত দেশগুলোর রপ্তানি পণ্য, খাদ্য সামগ্রীর ক্রমবর্ধমান মূল্যের দরুন তাহা আজ ক্রমশ তাহাদের নাগালের বাহিরে চলিয়া যাইতেছে। খাদ্য উৎপাদনের স্বয়ম্ভরতা অর্জনের জন্য তাহাদের প্রচেষ্টাও প্রয়োজনীয় উৎপাদনের সহায়ক সামগ্রীর ক্রমবধৃমান মূল্যবৃদ্ধি ও দুষ্প্রাপ্যতার ফলে প্রচণ্ডভাবে বিঘ্নিত হইতেছে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির ফলে ইতিমধ্যেই দারিদ্র্য ও ব্যাপক বেকারের নিষ্পেষণ পতিত দেশগুলি তাহাদের পাঁচ হইতে ছয় শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধির হার সংবলিত পরিমিত উন্নয়ন পরিকল্পনাই ছাঁটাই করার ভয়ানক আশঙ্কার হুমকিতে পতিত হইয়াছে। এই মুদ্রাস্ফীতির ফলে কেবলমাত্র উন্নয়ন প্রকল্পের খরচই বহুগুণ বাড়িয়া যায় নাই, উপরন্তু তাহাদের নিজস্ব সম্পদ কাজে লাগাইবার জন্য তাহাদের সামর্থ্যও প্রতিকূলভাবে কমিয়ে গিয়াছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিশ্বের জাতিসমূহ ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করিতে না পারিলে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আরো চরমে উঠিবে, ইতিহাসে ইহার প্রমাণ পাওয়া যায়। মানুষের সেই দুঃখ-দুর্দশার আর কোন পূর্ববর্তী নজির পাওয়া যাইবে না। ইহার পাশাপাশি অবশ্য থাকিবে গুটিকয়েক লোকের অপ্রত্যাশিত সুখ-সমৃদ্ধি। শুধুমাত্র মানবিক সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়িয়া তোলা এবং এই মহাবিপর্যয় পরিহার করিবার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক।
একটি যথার্থ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়িয়া তোলার পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘকে এর আগে কোথাও এই ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করিতে হয় নাই। এই ধরনের ব্যবস্থায় শুধুমাত্র নিজ নিজ প্রাকৃতিক সম্পদের উপর প্রত্যেক রাষ্ট্রের সার্বভৌম অধিকারকে নিশ্চিত করাই নয়, ইহাতে একটি স্থায়ী এবং যথার্থ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য বিশ্বের দেশগুলির সাধারণ স্বার্থের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক কাঠামো প্রণয়নেরও ব্যবস্থা থাকিতে হইবে। এই মুহূর্তে আমরা প্রত্যেক মানুষের জন্য মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক ঘোষণায় স্বীকৃত মুক্তভাবে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সুবিধা ভোগের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার আন্তর্জাতিক দায়িত্বের কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে পুনরুল্লেখ করিতেছি। আন্তর্জাতিক ঘোষণা অনুযায়ী প্রত্যেকটি মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবারের কল্যাণের জন্য পর্যাপ্ত জীবনযাত্রার ব্যবস্থা নিশ্চিত করিতে হইবে।
আমরা এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন যে বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কট শুধুমাত্র শান্তি এবং আন্তর্জাতিক সমঝোতার পরিবেশেই সমাধান করা সম্ভব। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ যে, বর্তমান অস্ত্র প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণ করার জরুরি ব্যবস্থা নিতে হইবে। ইহাতে শুধুমাত্র এই ধরনের পরিবেশই সৃষ্টি হইবে না, ইহাতে অস্ত্রসজ্জার জন্য যে বিপুল সম্পদ অপচয় হইতেছে তাহাও মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত করা যাইবে।
বাংলাদেশ প্রথম হইতেই শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান ও সকলের প্রতি বন্ধুত্ব- এই নীতিমালার উপর ভিত্তি করিয়া জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করিয়াছে। কেবলমাত্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই কষ্টলব্ধ জাতীয় স্বাধীনতার ফল ভোগ করিতে আমাদেরকে সক্ষম করিয়া তুলিবে এবং সক্ষম করিয়া তুলিবে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ, অশিক্ষা ও বেকারের বিরুদ্ধে লড়াই করিবার জন্য আমাদের সকল শক্তি ও সম্পদকে সমাবেশ ও কেন্দ্রীভূত করিতে। এই ধারণা হইতে জন্ম নিয়াছে শান্তির প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি। এই জন্য সমঝোতার অগ্রগতি, উত্তেজনা প্রশমন, অস্ত্র সীমিতকরণ এবং শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান নীতির সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা- বিশ্বের যে কোন অংশে যে কোন প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হউক না কেন, আমরা তাহাকে স্বাগত জানাই। এই নীতির প্রতি অবিচল থাকিয়া আমরা ভারত মহাসাগরীয় এলাকা সম্পর্কে শান্তি এলাকার ধারণা, যাহা এই পরিষদ অনুমোদন করিয়াছে, তাহাকে সমর্থন করি। আমরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে শান্তি, স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ এলাকায় পরিণত করার প্রতিও সমর্থন জানাই।
আমরা বিশ্বাস করি যে, সমবেত উন্নয়নশীল দেশসমূহ শান্তির স্বার্থকে দৃঢ় সমর্থন করে। জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষা এবং শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিশ্বের বিপুল সংখ্যাগুরু জনগণের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কথা তাঁহারা প্রকাশ করিয়াছেন।
মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষা জন্য শান্তি অত্যন্ত জরুরি এবং তাহা সমগ্র বিশ্বের নর-নারীর গভীর আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন ঘটাইবে। এবং ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত শান্তিই দীর্ঘস্থায়ী হইতে পারে।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের অঙ্গীকার প্রমাণের জন্য উপমহাদেশে আপস-মীমাংসার পদ্ধতিকে আমরা জোরদার করিয়াছি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় বস্তুতপক্ষে এই উপমহাদেশে শান্তি কাঠামো এবং স্থায়িত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অবদান সৃষ্টি করিবে। ইহাছাড়া আমাদের জনগণের মঙ্গলের স্বার্থেই অতীতের সংঘর্ষ ও বিরোধিতার পরিবর্তে মৈত্রী ও সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। আমরা আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ভারত ও নেপালের সাথে শুধুমাত্র সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কই প্রতিষ্ঠা করি নাই, অতীতের সমস্ত গ্লানি ভুলিয়া গিয়া পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক করিয়া নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করিয়াছি। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীরণের জন্য আমরা কোন উদ্যোগ বাদ দেই নাই এবং সবশেষে ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দিকে ক্ষমা প্রদর্শন করিয়া আমরা চূড়ান্ত অবদান রাখিয়াছি। ঐ সকল যুদ্ধবন্দি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ মারাত্মক অপরাধ করিয়াছে। ইহা হইতেছে নতুন অধ্যায়ের সূচনা ও উপমহাদেশে ভবিষ্যৎ শান্তি ও স্থায়িত্ব গড়িয়া তোলার পথে আমাদের অবদান। এই কাজ করিতে গিয়া আমরা কোন পূর্বশর্ত আরোপ অথবা কোন দরকষাকষি করি নাই। আমরা কেবলমাত্র আমাদের জনগণের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের কল্পনায় প্রভাবিত হইয়াছি।
৬৩ হাজার পাকিস্তানি পরিবারের অবস্থা এখনো মানবিক সমস্যারূপে রহিয়া গিয়াছে। তাহারা পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করিয়াছে এবং নিজ দেশে ফিরিবার জন্য আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির কাছে নাম তালিকাভুক্ত করিয়াছে। যে দেশের প্রতি তাহারা আনুগত্য ঘোষণা করিয়াছে সেই দেশে তাহাদের যাইবার অধিকার আছে। আইন ও আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসারেই এই অধিকার তাহাদের উপর বর্তাইয়াছে। এই মানবিক সমস্যার অবিলম্বে সমাধান প্রয়োজন। আরো একটি জরুরি সমস্যা হইল সাবেক পাকিস্তানের পরিসম্পদ বণ্টন। পুনরায় বন্ধুত্ব স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত রহিয়াছে। আমরা আশা করি, উপমহাদেশের জনগণের কল্যাণের স্বার্থে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে এইসব অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হইবে, যাহাতে স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া সফল হইতে পারে।
শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অন্যের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী সকল দেশের সাথে সৎপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখিবে। আমাদের অঞ্চলে এবং বিশ্বশান্তির অন্বেষার সকল উদ্যোগের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকিবে।
জাতিসংঘ অসুবিধা ও বাধাবিঘ্ন সত্ত্বেও তাহার ২৫ বৎসরের কার্যকালে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মানবিক অগ্রগতির লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখিয়াছে। এক কথায় বলা যায়, বিরোধ ও মানবিক দুঃখ-দুর্দশা সত্ত্বেও জাতিসংঘ ভাবীকালের দিকে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে সমুজ্জ্বল রাখিয়াছে। বিশ্ব সংস্থার সুনির্দিষ্ট সাফল্য ও সম্ভাবনাময় দিক সম্পর্কে বাংলাদেশ যেরূপ উপলব্ধি করিয়াছে এমনটি আর কেউ করে নাই। ড. কুর্ট ওয়াল্ডহেইমের সম্ভাবনাময় নেতৃত্ব এবং তাঁর নিবেদিত প্রাণ সহকর্মীদের জন্যই বাংলাদেশে যুদ্ধের দাগ মুছিয়া ফেলিতে, যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে পূর্বাবস্থায় ফিরাইয়া আনিতে এবং ভারত হইতে ফিরিয়া আসা এক কোটি শরণার্থীকে পুনর্বাসিত করিতে জাতিসংঘ আমাদের দেশে ব্যাপক সাহায্য ও পুনর্গঠন কর্মসূচি গ্রহণ করিয়াছিল। এইসব শরণার্থী যুদ্ধের সময় ভারতে আশ্রয় নিয়াছিল। জাতিসংঘের মহাসচিব, তাঁর সহকর্মী এবং বিভিন্ন মানবিক সংস্থা যাঁহারা আমাদের দেশে বিরাট কর্মসূচিতে অংশ নিয়াছিল, তাঁহাদেরকে বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের পক্ষ হইতে কৃতজ্ঞতা জানাইতেছি।
আমরা বিশ্বাস করি জাতিসংঘের গঠনমূলক নেতৃত্ব উপমহাদেশের অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানে সহায়ক হইবে। আমি আগেই বলিয়াছি, সাম্প্রতিক বিপর্যকারী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য সংগ্রহের ব্যাপারে জাতিসংঘের প্রয়াসে আমরা কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়িয়াছে। বাংলাদেশ বিশেষ অসুবিধার জন্য এমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারে নাই, যাহার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আগাইয়া আসিতে পারে। জাতিসংঘ দুর্যোগ ত্রাণ সমন্বয় অফিস স্থাপন করিয়াছে। এই ব্যাপারে স্বল্প হইলেও একটি দৃষ্টান্ত সূচনা করিয়াছে। লক্ষ্য পূরণে উদ্যোগ সমন্বিত করার ব্যাপারে তাই জাতিসংঘের সদস্যদের একটি বিশেষ দায়িত্ব রহিয়াছে।
জনাব সভাপতি,
মানুষের অজয় শক্তির প্রতি বিশ্বাস, মানুষের অসম্ভবকে জয় করার ক্ষমতা এবং অজেয়কে জয় করার শক্তির প্রতি অকুণ্ঠ বিশ্বাস রাখিয়া আমি আমার বক্তৃতা শেষ করিতে চাই। আমাদের মতো যেইসব দেশ সংগ্রাম ও আত্মদানের মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে, এই বিশ্বাস তাহাদের দৃঢ়। আমরা দুঃখ ভোগ করিতে পারি কিন্তু মরিব না। টিকিয়া থাকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করিতে জনগণের দৃঢ়তাই চরম শক্তি। আমাদের লক্ষ্য স্ব-নির্ভরতা। আমাদের পথ হইতেছে জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও যৌথ প্রচেষ্টা। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সম্পদ ও প্রযুক্তিবিদ্যার শরিকানা মানুষের দুঃখ-দুর্দশা হ্রাস করিবে এবং আমাদের কর্মকাণ্ডকেও সহজতর করিবে ইহাতে কোনো সন্দেহ নাই। নতুন বিশ্বের অভ্যুদ্বয় ঘটিতেছে। আমাদের নিজেদের শক্তির উপর আমাদের বিশ্বাস রাখিতে হইবে। আর লক্ষ্য পূরণ এবং সুন্দর ভাবীকালের জন্য আমাদের নিজেদেরকে গড়িয়া তুলিবার জন্য জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমেই আমরা আগাইয়া যাইব। এখানে উল্লেখ্য যে ১৯৭২ সালের ৮ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সদস্য পদের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব ড. কুর্ট ওয়াল্ডহেইমের কাছে একটি আবেদনপত্র পাঠায়।
১০ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডনের ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় চীনসহ নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্য রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভের জন্য বাংলাদেশকে সমর্থন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে পত্র লেখেন।
সর্বোপরি ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ২৯তম অধিবেশনে ১৩৬ তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সদস্য করে নেওয়া হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে সংগঠনটির অধীনে থাকা বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম ব্যাপক আকারে দেখা যায়। বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে জাতিসংঘের অন্তত ১০টির বেশি সংস্থা তাদের বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকার এবং জনগণের সঙ্গে একত্রিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
জাতিসংঘ অধীনে থাকা সংস্থাগুলোর কাজের ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, বিদ্যুৎ শক্তি, শিক্ষা, জরুরী সহায়তা, খাদ্য, দুর্যোগ, সুশাসন, স্বাস্থ্য, জেন্ডার ইস্যু, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, মানবাধিকার, অভিগমন, অংশীদারিত্ব, জনসংখ্যা, শরণার্থী, দারিদ্র, কর্মসংস্থান, পুষ্টি, শহরায়ন এবং জীবনধারণ।
বর্তমানে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্বে আরও সমুন্নত হয়েছে। দেশটি এখন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে বাংলাদেশের দুইবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও মানবাধিকার পরিষদের সদস্য পদ লাভ করেছিল এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কমিশন ও নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের চেয়ারম্যান পদেও দেশটি একবার ছিল।
অপরদিকে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে দেশটির লক্ষাধিক শান্তিরক্ষী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানে ক্রমশ অবদান রেখে চলেছে। জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটি ছিল সমগ্র বিশ্বের শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ভাষণ.১৯৭৪ সালের এই দিনে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য পদ লাভের বাংলাদেশের গৌরবময় অর্জনের স্মতিময় এই দিবসে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে আমাদের সবার হোক দীপ্ত শপথ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা, বিশ্ব মানবতার বাতিঘর, ম্যাদার অব ইউমিনিটি মানণীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলার আলোর মিছিলকে এগিয়ে নিতে দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করে যাবো।
পরিশেষে বঙ্গবন্ধুর একটি চিরন্তন বানী তুলে ধরে লেখা শেষ করতে চাই বানীটি হচ্ছে.. রাজনীতি করতে হলে নীতি থাকতে হয়; সত্য কথা বলার সাহস থাকতে হয়; বুকে আর মূখে আলাদা না হওয়া উচিৎ..জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু.জয় হোক মানবতার.
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।।
(লেখক পরিচিতি:- ৯০ এর গন-আন্দোলনের বাংলাদেশের সাবেক ছাত্রনেতা বৃটেনের কমিউনিটি লিডার ও সাংবাদিক মোহাম্মদ মকিস মনসুর.যুক্তরাজ্য যুবলীগের সাবেক সহ সভাপতি. ইউকে ওয়েলস যুবলীগের সাবেক সভাপতি. ইউকে ওয়েলস ছাত্রলীগ সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছাড়া ও যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় সদস্য, ওয়েলস আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি. জাস্টিস ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড ১৯৭১ ইউকের সভাপতি. জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত-বার্ষিকী মুজিববর্ষ সার্বজনীন উদযাপন নাগরিক কমিটি ইউকে ওয়েলসের যুগ্ম আহবায়ক এবং হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন ইন ইউকের সভাপতি এবং বৃটেনের কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল ম্যাদার ল্যাংগুয়েজ মনুমেন্ট ফাউন্ডার্স ট্রাষ্ট তথা শহীদ মিনার কমিটির সেক্রেটারি.সহ ইউকে বিডি টিভির চেয়ারম্যান. ও ডেইলি সিলেট এন্ড দৈনিক মৌলভীবাজার মৌমাছি কন্ঠের সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন.)
মন্তব্য করুন