জাতীয় কন্যা শিশু দিবস : ইসলামে কন্যা শিশুর অধিকার এবং মর্যাদা
এহসান বিন মুজাহির॥ ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার সারাদেশে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস পালিত হয়েছে। ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয় । বাংলাদেশে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস পালিত হয় ৩০ সেপ্টেম্বর।
ইসলাম ধর্মে কন্যা সন্তানের অধিকার এবং মর্যাদা অপরিসীম। সন্তান-সন্ততি ছেলে কিংবা মেয়ে উভয়েই মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে
মহানেয়ামত ও শ্রেষ্ঠ উপহার। ইসলাম উভয়কেই আলাদা অধিকার ও মর্যাদা দিয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজে অনেক পরিবারে কন্যা সন্তান জন্ম নিলে ইতিবাচক চোখে দেখা হয় না। অনেকে আবার কন্যা সন্তানের মায়ের ওপর অসন্তুষ্টি হন। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে কন্যা সন্তান জন্ম হওয়াকে অপছন্দ করা হতো। কন্যা সন্তানের পাষ- পিতারা কন্যা সন্তানকে জীবিত অবস্থায় মাটিতে পুতে ফেলতো। ইসলাম এমন বর্বর কাজকে প্রচ-ভাবে অপছন্দ করে। এমন কাজে আল্লাহ তাআলা ভীষণ অসন্তুষ্ট হন। অথচ ইসলাম ধর্ম কন্যা সন্তানের ব্যাপারে সুসংবাদ প্রদান করেছে। রাসূল (সা.) কন্যা সন্তান লালন-পালনে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন। ইসলাম কন্যা সন্তান হত্যার প্রাচীন প্রথাকে প্রচ-ভাবে নিন্দা করে করে ঘোষণা করে, ‘তোমরা দারিদ্রের ভয়ে সন্তানদের (কন্যা সন্তানদের) হত্যা করো না। তোমাদেরকে এবং তাদেরকে আমিই রিজিক দিয়ে থাকি। (সূরা বনি ইসরাঈল : ৩১)।
পবিত্র কুরআন কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখ অন্ধকার হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে নাকি তাকে মাটির নিচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখো, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট। (সুরা আন নাহল : ৫৮-৫৯)।
বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত যে, কন্যা সন্তানের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পরিবারে সুখ ও বরকত দান করেন
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দু’টি কন্যাকে তারা সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করবে, কিয়ামতের দিন আমি এবং সে এ দু’টি আঙ্গুলের মতো পাশাপাশি আসবো (অতঃপর তিনি তার আঙ্গুলগুলো মিলিত করে দেখালেন)। (মুসলিম : ২৬৩১)।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার তিনটি কন্যাসন্তান থাকবে এবং সে তাদের কষ্ট-যাতনায় ধৈর্য ধরবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুহাম্মদ ইবন ইউনূসের বর্ণনায় এ হাদীসে অতিরিক্ত অংশ হিসেবে এসেছে) একব্যক্তি প্রশ্ন করলো, হে আল্লাহর রাসুল, যদি দু’জন হয়? উত্তরে তিনি বললেন, দু’জন হলেও। লোকটি আবার প্রশ্ন করলো, যদি একজন হয় হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন, একজন হলেও।’ (বাইহাকি, শুয়াবুল ঈমান : ৮৩১১)
হজরত আয়েশা (রা.) এর নিকট একদা এক মহিলা দু‘টি কন্যা সন্তানসহ আসলেন। তিনি তাদেরকে তিনটি খেজুর দিলেন। মহিলা দুই সন্তানকে দুটি খেজুর দিলেন। আর একটি খেজুর নিজে খাওয়ার জন্য মুখে দিতে যাবেন, এমন সময় বাচ্চারা সেটিও খেতে চাইলো। মহিলা খেজুরটি দুই টুকরা করে সন্তানদেরকে দিয়ে দিলেন। যা হজরত আয়শা (রা.) কে অবাক করলো। তিনি বিশ্বনবী (সা.) কে ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন, হে আয়েশা ! আল্লাহ তায়ালা এ স্ত্রীলোকটিকে এর বিনিময়ে জান্নাত দান করবেন অথবা এর বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন (মুসলিম : ৩৬৩১।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলনে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করনে, ‘যার ঘরে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলো, অতঃপর সে ওই কন্যাকে কষ্ট দেয়নি, মেয়ের ওউপর অসন্তুষ্টও হয়নি এবং পুত্র সন্তানকে তার ওপর প্রধান্য দেয়নি, তাহলে ওই কন্যার কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবশে করাবেন।’ (মুসনাদ আহমদ : ১/২২৩)
কন্যা সন্তান হলে সন্তুষ্টি এবং পুত্র সন্তান হলে অসন্তুষ্টি হওয়া যাবে না। কন্যা হোক কিংবা পুত্র হোক সবই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর অটল থাকা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য। কোরআন এবং হাদিস থেকে প্রমাণিত হলো ইসলাম কন্যা শিশুকে অপরিসীম মর্যাদা এবং অধিকার দিয়েছে। লেখক : সাংবাদিক, শিক্ষক এবং কলামিস্ট
মন্তব্য করুন