জিপিএ-৫ পেয়েও অজানা শঙ্কায় কুলাউড়ার কুলসুমার মুখ মলিন
কুলাউড়া অফিস॥ সারা দেশে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা যখন আনন্দে ভাসছে তখন অজানা শঙ্কা এসে ভর করছে কুলাউড়া নবীন চন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী কুলসুমা আক্তারের মাথার ওপর। ভিটে-বাড়ি নেই, পরের ঘরে বসবাস, নিত্যদিনের অভাব অনটন, পিতৃহীন গৃহকর্মী মায়ের চোখের জলে যার দিন শুরু হয় হোক সে মেধাবী কিংবা অদম্য তার পড়ালেখা কতদূর এগিয়ে যাবে স্বয়ং ঈশ^র হয়তো জানেন কিন্তু কুলসুমার চোখে অনিশ্চয়তার করূণ দৃষ্টি।
জন্মের দেড় বছর পর পিতা মারা যাওয়ার পর দারিদ্রতার কষাঘাতে পিষ্ট হতে হতে বড় হওয়া কলসুমার মুখে জিপিএ-৫ এর আনন্দ ভর করতে পারেনি। ভূমিহীন দরিদ্র মা খোরশেদা বেগম পেশায় একজন গৃহকর্মী। অন্যের ঘরে কাজ করে কোন রকম সংসার চলে। কলসুমার পিতা জাহেদ মিয়া মারা যাওয়ার পর মা খোরশেদা বেগম অনেক কষ্ট করে তাদের দু’বোনকে বড় করেন।
কুলসুমা জানায়, ৭ম শ্রেণিতে পাসের পর ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য স্কুলের ফি’র টাকা ছিলোনা। ওইসময় বিষয়টি জানতে পেরে কুলাউড়ার সামাজিক সংগঠন সোশ্যাল কেয়ার অব ন্যাশনের শাওন, উজ্জ্বল, মাহিন ও জাফর ভাই আমার স্কুলের ভর্তি ফি এবং বই খাতা কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। উনারা আমাকে বলেন, তুমি পড়াশোনা করো, তোমার পড়ার খরচের যাবতীয় দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। এ নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা করনা। তাদের অনুপ্রেরণা এবং আমার স্কুলের সেলিম স্যার ও জয়নাল স্যার এবং খালাতো ভাই সাইফুল ইসলাম নাসিরের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমি এবার জেএসসিতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি। সে আরও বলে, আমি ভবিষ্যতে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে প্রকৌশলী হতে চাই। ক্লাস নাইনে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হবো। এজন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। যদিও বড় ভাইয়েরা আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন তবুও ভবিষ্যতে আমার উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। তাছাড়া মাথা গোঁজার ঠাই নেই পরের ঘরে আশ্রিতা হিসেবে থাকি। আমার স্বপ্ন কি শুধুই স্বপ্ন থেকেই যাবে? আমি কি আমার পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবো?
কুলসুমার মা খোরশেদা বেগম জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই মেয়েকে নিয়ে অনেকটা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন তিনি। মাথা গোঁজার ঠাই ছিলনা। তখন কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজের সাবেক প্রভাষক ফরিদা বেগম আমাদেরকে উনার বাসায় আশ্রয় দেন। বর্তমানে উনি স্বপরিবারে দেশের বাইরে থাকেন। উনার বাসা দেখভাল করার জন্য প্রতি মাসে কিছু টাকা দেন। ঐদিয়ে কোন রকম সংসার চলে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি।
ছোট মেয়েটা (কুলসুমা) পড়াশুনায় খুব ভালো। অন্যদের সহযোগিতায় এবারের জেএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। কিন্তু অভাব-অনটনের সংসারে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার যোগানো যেখানে কষ্টকর সেখানে তার পড়াশোনার খরচ কিভাবে চালিয়ে যাবো সেই দুশ্চিন্তায় আছি।
সামাজিক সংগঠন সোশ্যাল কেয়ার অব ন্যাশনের সভাপতি খায়রুল কবির জাফর, সহ-সভাপতি মোহাইমিনুল ইসলাম মাহিন ও প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আজিজুল ইসলাম উজ্জল জানান, আমাদের সহযোগীতা ও কুলসুমার অক্লান্ত পরিশ্রমে সে জেএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে অনেক মেধাবী। তার স্বপ্ন পূরণের পথে দারিদ্রতার সকল বাধা উপক্রম করে সে এই সফলতা অর্জন করেছে। ভবিষ্যতেও আমরা আমাদের সাধ্যমত তার পাশে থাকবো। ভবিষ্যতে কুলসুমার উচ্চতর পড়াশোনায় যাতে দারিদ্রতা কোন বাধা হয়ে দাড়াতে না পারে সেজন্য আমাদের সাথে সমাজের সকল বিত্তবান ব্যাক্তিদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন