জীবনের শেষবেলা পর্যন্ত মানবিক কাজে থাকতে চান সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা আছকির মিয়া
বিকুল চক্রবর্তী॥ মো: আছকির মিয়া মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর সেনানী। স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে আজো নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন মানবিক ও সমাজসেবামুলক কর্মকান্ডে। শুধু সামাজিক কাজ নয় একজন ন্যায় বিচারকও। যে কারনে শ্রীমঙ্গল উপজেলা তথা পাশবর্তী এলাকার জঠিল বিবাদসহ নানাবিদ সমস্যার সমাধানে বরাবরই ডাক পরে এ মুক্তিযোদ্ধার।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা জন্মগ্রহন করেন ১৯৪৭ সালে। ১৯৬৮ সালে এস এস সি পাস করে ভর্তিহন মৌলভীবাজার সরকারী কলেজে। কলেজে ভর্তি হয়েই পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। এক বছর পর ১৯৬৯ সালে শ্রীমঙ্গল মহাজেরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। একই বছরে দেশব্যাপী গণঅভুত্থান শুরু হলে যোগদেন সে আন্দোলনে। মুক্তিযোদ্ধা আছকির মিয়া জানান, ওই সময় থেকেই তার রাজনৈতিক কর্মব্যস্ততা ব্যপক আকারে বাড়তে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালে স্বেচ্ছা সেবকলীগের ভুনবীর ইউনিয়ন সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নৌকা মার্কার পক্ষে দিনরাত কাজ করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষনে ছয়তারা টুপি মাথায় বাঁশের লাঠি নিয়ে স্বেচ্ছা সেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২৫ শে মার্চ ঢাকায় গণহত্যা ও ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করার পর জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও দেশকে শত্রুমুক্ত করার শপতে বলিয়ান হন। শুরু হয় যুদ্ধে যাওয়ার সাংগঠনিক কাজ। মুক্তিকামী মানুষদের যুদ্ধে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন অনেক সহকর্মীসহ ভারতে যান। গেরিলা প্রশিক্ষন শেষে মুজিববাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে একজন গেরিলা যুদ্ধা ও গাইড হিসেবে দেশে প্রবেশ করে অনেকগুলো চুরাগুপ্তা হামলা করেন। এতে শত্রুবাহিনীর ব্যুহ দূর্বল হলেও তার জীবনে এক মার্মান্তিক ঘটনার অবতারনা ঘটে। অনেকটা অশ্রুসিক্ত নয়নে মুক্তিযোদ্ধা আছকির মিয়া বলেন, দেশে অপারেশন করতে এসে পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে শহীদ হন শ্রীমঙ্গল শহরের ১০ নং এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সমীর সোম, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মো. আব্দুল মুকিত, মৌলভীবাজার বর্ষিজোড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদ, সাবিয়া এলাকার কৃপেশ রঞ্জন কর রানু, রাজনগরের সুদর্শন দেব ও জুড়ির বটুলী এলাকার সূখময় পাল। এই সহযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের ঘটনা তিনি আজো ভুলতে পারেন নি। তিনি বলেন, আত্ম বিসর্জন দেয়া এই যোদ্ধাদের দেশপ্রেম কেমন ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করে বুঝানোর মতো নয়। এই রকম সাহসী বীরদের কারনেই আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে তিনি পুনরায় শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন এবং পরের বছর ১৯৭৩ সালে পিটিআই প্রশিক্ষন নেন।
আছকির মিয়া জানান, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যার পর তাঁর জীবনের ঝুঁকি আসে এসময় তিনি শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে বেশ কিছুদিন আত্ম গোপনে ছিলেন। পরে ১৯৭৬সালে ভুনবীর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশনিয়ে নির্বাচিত হন। এ সময় তাকেঁ জেলেও যেতে হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে তিনি শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পাটির শ্রীমঙ্গল উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৯৬ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে জাতীয় পাটির হয়ে সংসদ নির্বাচনেও প্রতিদন্ধিতা করেন।
আছকির মিয়া জানান, ২০০২ সালে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীণ সময়ে তিনি জাতীয় পাটি থেকে রিজাইন দিয়ে প্রায় ২৫০ জন নেতাকর্মী নিয়ে ঢাকায় জননেত্রী শেখ হাসিনা হাতে ফুল দিয়ে পুনরায় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রীয় হন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি নির্বাচিত হন এবং ২০১৮সালে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
আছকির মিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা, এলাকার প্রবীণ মুরব্বি, রাজনীতিবিদ বা জনপ্রতিনিধিই নন তিনি একজন শিক্ষানুরাগীও। তিনি জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন ১৯৮৭ সালে তিনি শ্রীমঙ্গল উদয়ন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে তৎকালীন সময়ে ব্যপক উন্নয়ন করেন। উদয়ন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পাশাপাশি তিনি শ্রীমঙ্গল ডুবাগাও দাখিল মাদ্রাসা, রাজপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। শ্রীমঙ্গল উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ কলেজেরও একজন দাতা সদস্য। বর্তমানে তিনি ভুনবীর দশরত উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আছকির মিয়া জানান, তিনি তরুণ বয়স থেকে এ পর্যন্ত মানুষের পাশে, সামাজিক ও শিক্ষামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। জীবনের এ বেলায় এসে তিনি পুনরায় শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে আরো ব্যপকভাবে জনগণের সেবা করতে চান।
মন্তব্য করুন