জুড়ীতে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও থমকে আছে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বর্ডার হাট কার্যকক্রম
হারিস মোহাম্মদ॥ জুড়ীতে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও থমকে আছে ভারত বাংলাদেশের যৌথ বর্ডার হাট কার্যক্রম।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের বটুলী এলাকার নো ম্যানস ল্যান্ডে বর্ডার হাটের বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটির যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হলেও এখন পর্যন্ত উদ্বোধন না হওয়ায় মানুষের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের সমঝোতা চুক্তির অংশ হিসেবে বিটুলী সীমান্তে ‘বর্ডার হাট’ করার সিদ্ধান্ত হয়।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের পশ্চিম বিটুলী সীমান্ত পিলার ১৮২৭ এর নো ম্যানস ল্যান্ডে এ বর্ডার হাটের বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটির যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, স্থানীয় মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দুই দেশের প্রয়োজন মাফিক আমদানী-রপ্তানির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করার লক্ষ্যে যৌথ চুক্তির মাধ্যমে বর্ডার হাট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় নতুন ৬টি বর্ডার হাট চালুর বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এ ৬টি বর্ডার হাটের একটি মৌলভীবাজারের জুড়ীর বটুলী বর্ডার হাট।
গতবছরের ৪ এপ্রিল এ সীমান্ত বর্ডার হাটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার কথা থাকলেও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের কারণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন থমকে গেছে।
বর্ডার হাটটি উদ্বোধন হলে দু-দেশের সীমান্তে বসবাসরত মানুষের মাঝে সেতুবন্ধন সহ ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানা যায়, এ সীমান্ত হাটে কাপড়, সাবান, সবজি,ফল, মসলা, শিশুদের জিনিসপত্র, গৃহস্থালির নানা জিনিসপত্র, কৃষিজাত পণ্য, চাল, ডাল, তেল, ঘি, মশার কয়েল, প্লাস্টিকের আসবাবপত্র, অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসপত্র, জুতা, খেলনা, বিভিন্ন ধরনের শাড়ী, গামছা, লুঙ্গি, জুয়েলারি সামগ্রী, বেকারী পন্য, সিরামিকস ও কসমেটিকস সামগ্রী বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সীমান্ত হাটে বাংলাদেশ-ভারতের সর্বোচ্চ ৫০ জন করে মোট ১০০ জন ব্যবসায়ী পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।
উভয় দেশের ১৫০ জন করে মোট ৩০০ জন ক্রেতা বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। ব্যবসায়ীদের বাড়ি সীমান্ত এলাকার ৫ কিলোমিটারের মধ্যে হতে হবে। হাটকে ঘিরে পূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সীমান্ত হাটের অনুমোদিত মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ক্রেতা-বিক্রেতার পরিচয়পত্র ইস্যু করা হবে। হাটে প্রবেশের জন্য উভয় দেশের দুই দিকে থাকবে দুটি গেট। এছাড়া থাকবে ওয়াচ টাওয়ার, শৌচাগার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জানানো হয়, দুই দেশের সীমান্তবর্তী জনগণের স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সহজলভ্য করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটবে।
সীমান্ত হাটে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা চানাচুর, চিপস, আলু, তৈরি পোশাক, মাছ, শুঁটকি, মুরগি, ডিম, সাবান, শিম, সবজি, গামছা ও তোয়ালে, কাঠের টেবিল ও চেয়ার, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহূত লোহার তৈরি পণ্য নিয়ে আসবেন।
আর ভারতীয় ব্যবসায়ীরা নিয়ে আসবেন ফল, সবজি, মসলা, মরিচ, হলুদ, পান, সুপারি, আলু, মধু, বাঁশ ইত্যাদি।
ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম সেলু বলেন, বটুলি সীমান্তে বর্ডার হাটটি চালু হলে সীমান্তবর্তী এ ইউনিয়নের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। তিনি বাজার চালুর বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিস্টপ কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, জেলায় যোগদানের পর বর্ডার হাটের স্থানটি তিনি পরিদর্শন করেছেন। হাটটি চালুর ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই এ বর্ডার হাটের কাজ শুরু হবে।
মন্তব্য করুন