জুড়ীতে দুই শিশু শিক্ষার্থী অমানবিক নির্যাতনের শিকার
হারিস মোহাম্মদ॥ জুড়ীতে দুই শিশু অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের বেলাগাও গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। নির্যাতনের শিকার দুই শিশু পূর্ব বেলাগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা হলেন, বেলাগাও গ্রামের আলমগীর মিয়ার ছেলে ইব্রাহিম (৯), একই গ্রামের সারজান মিয়ার ছেলে রবিউল হাসান (৯)।
জানা যায়, নির্যাতনের শিকার ওই দুই শিশু একই গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে আনোয়ার হোসেন আকাশের বাড়ীর পাশে মঙ্গলবার বিকেলে খেলছিল। শিশুদের খেলাধুলায় ঘুম ভেঙে যায় আনোয়ার হোসেন আকাশের। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে যান তিনি। ক্ষিপ্ত হয় শিশুদেরকে মারতে আসলে শিশুরা দৌড়াতে থাকে। শিশুরা দৌড়ে পার্শ্ববর্তী ইউছুফনগর গ্রামে চলে গেলে আকাশ মোটরসাইকেল দিয়ে তাদের পিছু নেয়। এক পর্যায়ে ইউসুফ নগর মসজিদের সামনে গিয়ে তাদের পাকড়াও করে বাশের বেত দিয়ে পিটাতে থাকে। আকাশের হাত থেকে বাঁচতে শিশু দুটি পা ধরে ক্ষমা চাইলেও নির্যাতনের থেকে রেহাই পাননি। শিশুদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন জড়ো হলে আকাশ তাদেরকে সেখানে ফেলেই চলে আসেন। খবর পেয়ে শিশু দুটির পরিবার তাদেরকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে রাতে থানা পুলিশ ও মামলা থেকে বাঁচার জন্য আনোয়ার হোসেন আকাশ স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেমকে নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। দুই শিশু নির্যাতনের ঘটনাটি জানাজানি হলে পুরো গ্রামের মানুষ নিন্দার ঝড় ওঠে।
নির্যাতনের শিকার ইব্রাহিমের মা শাহিনা বেগম জানান, আমার ছেলে যদি কোন দোষ করে থাকে আমাদেরকে বলতে পারতো। আমাদেরকে না বলে আমার ছেলে ইব্রাহিমকে অমানবিক নির্যাতন করেছে আনোয়ার হোসেন আকাশ। তার তার পা ধরেও আমার ছেলে অমানুষিক নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি। তার মত এমন ডাকাত এই এলাকায় নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তিরা জানান, আনোয়ার হোসেন আকাশ আমরা জানতাম একজন শিক্ষক ও সমাজকর্মী। কিন্তু সে শিক্ষক ও সমাজকর্মীর আড়ালে একজন ভয়ঙ্কর নির্যাতনকারী। শুধু এ ঘটনা নয় সে আরো অনেক ঘটনা এলাকায় প্রতিনিয়ত ঘটাচ্ছে। ভয়ে এলাকার কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে নির্যাতনকারী আনোয়ার হোসেন আকাশের মুঠোফোনে ফোন দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষয়টি জানতে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেমের মুঠোফোনে বারবার ফোন দেওয়া হল তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে আলাপকালে পূর্ব বেলাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি সেলিম আহমেদ ও প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, নির্যাতনের বিষয়টি আমাদেরকে কেউ জানায়নি। খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
নির্যাতনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুসিকান্ত হাজং বলেন, শিশু নির্যাতন একটি অমানবিক কাজ। শিশু শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুড়ী থানার ওসি এস.এম মাইন উদ্দিন বলেন, বিষয়টা আমি জানলাম। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।
মন্তব্য করুন