জুড়ীতে পিতার বিরুদ্ধে মেয়ের অভিযোগ, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে মামলার ভয় দেখাচ্ছেন
হারিস মোহাম্মদ॥ জুড়ীতে এবার সেই মাসুক মিয়ার বিরুদ্ধে নিজ মেয়েকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাবা মাসুক মিয়ার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন মেয়ে মাহমুদা আক্তার ফাহিমা (১৭)।
এদিকে নিজ মেয়েকে নির্যাতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সচেতন মহল অভিযুক্ত মাসুক মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিবাদ করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদা আক্তার ফাহিমা বলেন, গত এক বছর যাবত আমার বাবা আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছেন। আমার শরীরে নির্যাতনের অনেক ক্ষত রয়েছে।
আমি নারী না হলে কাপড়গুলো খুলে নির্যাতনের ক্ষতগুলো সবাইকে দেখাতাম। আমি চাই আমার মতো কেউ যেন বাবা কতৃক আর এমন নির্যাতনের শিকার না হয়।
তিনি বলেন, চলতি বছরের ১৯ মে আমার বিয়ে হয় কুলাউড়া উপজেলার দানাপুর গ্রামের রজব আলীর ছেলে ছাফওয়ানের সাথে।
বিয়ের পরও আমার বাবার নির্যাতন থেকে আমি রেহাই পাচ্ছি না। তিনি আমাকে বারবার জোর করে বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন করছেন।
গত কয়েকদিন আগে আমাকে বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন শুরু করলে আমি ৯৯৯-এ কল করে পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার হয়ে স্বামীর বাড়িতে আসি।
বর্তমানে আমাকে আর না নিতে পারায় আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে মামলা ও হামলার ভয় দেখাচ্ছেন। আমি প্রশাসন ও সরকারের কাছে আমার ও শ্বশুর বাড়ীর লোকজনের নিরাপত্তা চাই।
ফাহিমা আরও বলেন, গতবছর আমার বাবা মাসুক মিয়া আমাদের বাড়িতে আমার এক বান্ধবীকে ধর্ষণ করেন। এ ধর্ষণ মামলায় তিনি জেলও খেটেছেন। আমি আমার পাষণ্ড পিতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে ফাহিমার স্বামী ছাফওয়ান অভিযোগ করে বলেন, বিগত পাঁচ মাস পূর্বে জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের বীরগোগালী (রানিমুড়া) গ্রামের মাসুক মিয়ার মেয়ে মাহমুদা আক্তার ফাহিমার সাথে বিয়ে হয়।
বিয়ের পর থেকে আমার শ্বশুর নানা অজুহাতে আমার স্ত্রীকে এসে নিয়ে যেত। স্বামী হিসেবে আমি সাথে যেতে চাইলে তিনি আমাকে সাথে নিতেন না। এমনকি রাত ২/৩ টায় গাড়ি নিয়ে এসে আমার স্ত্রীকে জোর করে নিয়ে যেতেন।
আমরা বাঁধা দিলে আমাদের কোন বাঁধাই তিনি শুনতেন না। বরং আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতেন। সেখানে নিয়ে তিনি আমার স্ত্রীকে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করতেন।
গত কয়েক দিন আগে আমার তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বাড়িতে ফেরার পর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আমরা দেখতে পাই।
পরে তাকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার করাই। বর্তমানে আমার শ্বশুর আমার স্ত্রীকে জোর করে উঠিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি আমাদেরকে মামলা হামলার হুমকি দিচ্ছেন।
আমাদের পুরো পরিবার এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। আমি পাষন্ড শ^শুর মাসুক মিয়ার বিচার চাই।
উল্লেখ্য, গতবছরের ১৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে এসএসসি পরীক্ষার্থী চাচাতো বোনকে নিজ বাড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে মাশুক মিয়াকে গ্রেপ্তার করে জুড়ী থানা পুলিশ।
ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরীর আপন বড় ভাই বাদী হয়ে জুড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। সেই মামলার বিচার আদালতে এখনও চলমান আছে।
অভিযুক্ত মাসুক মিয়া বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমি এই ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি পেতে চাই। কুলাউড়া থানার ওসি মো. আব্দুছ ছালেক বলেন, এ ব্যাপারে থানায় কোনো অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন