জুড়ী উপজলা পরিষদ নির্বাচনে ৮ শতাংশ ভোট কারচুপির অভিযোগ
হারিস মোহাম্মদ॥ ৮ মে অনুষ্ঠিতব্য ষষ্ঠ জুড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময়ের শেষে ৮ শতাংশ ভোট বাড়িয়ে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরাজিত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মোঈদ ফারুক।
সোমবার ২০ মে উপজেলা পরিষদের নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। এরসাথে নির্বাচনে কুচক্রি মহলের ষড়যন্ত্র, ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি ও ভোট জালিয়াতির কারণে তাঁকে পরাজিত দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ৩০ এপ্রিল নির্বাচনের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে প্রথম আলো পত্রিকায় “এবার মোঈদের আছে ৭০ লাখ টাকার ‘প্রাডো’ গাড়ী” শীরোণামে একটি মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিত সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে নির্বাচনকালিন সময়ে ভোটারদের কাছে আমার সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে এবং নির্বাচনে এর প্রভাব পড়েছে। সংবাদে বুঝানো হয়েছে গত নির্বাচনের পর আমি এ প্রাডো গাড়ীর মালিক হয়েছি। নির্বাচন চলাকালিন সময়ে আমি নির্বাচনি কাজে ব্যাস্ত থাকায় এ বিষয়ে যথাযত পদক্ষেপ নিতে পারিনি। আমি আপনাদের মাধ্যমে এ সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি প্রথম আলো পত্রিকায়ও আমি এর প্রতিবাদ জানাব। মুল বিষয় হল ২০০৯ ইং সালে আমি এ গাড়িটি ক্রয় করি এবং ২০১৮ ইন সালের নভেম্বর মাসে আমি গাড়ীটি বিক্রির জন্য জনৈক ক্রেতার কাছে ২০ লক্ষ টাকা বায়নার মাধ্যমে বিক্রি করি। পরবর্তিতে সে ক্রেতা সম্পুর্ণ টাকা পরিশোধে অক্ষম হওয়ায় আমি বায়নার টাকা ফেরত দিয়ে গাড়ীর মালিকানা বুঝে পাই। যেহেতু ২০১৯ ইং সালের নির্বাচনের পূর্বে আমি গাড়ীর মালিকানায় ছিলাম না তাই তখনকার হলফনামায় আমি উল্লেখ করিনি। এবারের নির্বাচনে গাড়ীটি আমার মালিকানায় থাকায় হলফনামায় উল্লেখ করেছি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, ‘জুড়ী একটি ছোট উপজেলা। নির্বাচনে ৪৪টি কেন্দ্রের কোনটাই এরকম দূর্গম নয় যে, যেগুলোতে পূর্বের দিন ব্যলট পেপার পাঠানো লাগবে। তবুও কারচুপি ও জালিয়াতি করা সহজ হবে এরকম প্রান্তিক ৭ টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনের পূর্বের দিন ব্যালট পেপার পাঠানো হয়। সমমান অন্যান্য কেন্দ্রের নির্বাচনের ফলাফলের সাথে এগুলোর বেশ অমিল পাওয়া গিয়েছে। বিকাল চারটায় কন্ট্রোল রুমের প্রেরণ করা তথ্য অনুযায়ী গড়ে ভোট কাস্টিং হয়েছে ৩৯ শতাংশ। তবে এ ৭টি কেন্দ্রের মধ্যে গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫১.২৯, দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৯.৫৯, এলবিনটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫৪.৯৬, রাজকি চা-বাগান বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৩.৭৫, ফুলতলা চা-বাগান বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫২.২৫ শতাংশ ভোট কাস্টিং দেখানো হয়েছে। এগুলোতে পূর্বের রাতে ব্যালটে সীল মেরে বাক্সভর্তি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের অনেক ভোটারগন মনে করছেন।’
তিনি বলেন ‘ভোটগ্রহণের সময়ে কেন্দ্র থেকে প্রিজাইডিং অফিসারগণ নিয়মানুযায়ী প্রতি দু’ঘন্টা পরপর উপজেলা পরিষদে স্থাপিত কন্ট্রোলরুমে মোট কাস্টিংসহ ভোট গ্রহনের তথ্য প্রেরণ করেছেন। নির্ভরযোগ্য সুত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ি ভোট গ্রহণ শেষে বিকাল চারটায় সহকারি রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় (কন্ট্রোল রুম) থেকে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রেরিত ‘ভোট গ্রহন সম্পন্ন প্রতিবেদন’এ ভোটগ্রহণের শতকরা হার ৩৯ শতাংশ উল্লেখ করা হয় কিন্তু প্রাথমিক বেসরকারি ফলাফলে প্রায় ৪৭ শতাংশ ভোট কাস্টিং দেখানো হয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, অতিরিক্ত ৮ শতাংশ ভোট ‘ঘোষিত জয়ী প্রার্থী’র পক্ষে দেখানো হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘ফলাফলে বাতিলকৃত মোট ভোটের সংখ্যায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৮৪৮টি ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৮৭৩টি ভোট বাতিল দেখানো হয়েছে। তবে চেয়ারম্যান পদে ১৪৭২ টি ভোট বাতিল দেখানো হয়েছে, যা গভীর সন্দেহের অবকাশ রাখে। প্রায় ৪শত বাতিল ভোট ‘ঘোষিত জয়ী প্রার্থী’র পক্ষে দেখানো হয়েছে।’
মোঈদ ফারুক অভিযোগ করেন, ‘চা-বাগান কেন্দ্রগুলোতে সহজ সরল চা-শ্রমিকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রায় প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতি করা হয়েছে। আমাদের এজেন্ট ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে নির্বাচন চালাকালীন শেষ মুহুর্তে এসব কেন্দ্রগুলোর কাস্টিং ভোট ও গণনার পরের কাস্টিং ভোটের মধ্যে বিস্তর ফারাক দেখা যায়। সাগরনাল চা-বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৩.৩৪ শতাংশ ভোট কাস্টিং দেখানো হলেও সমমনা সোনারুপা চা বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫৮.৪৩, কাপনা পাহাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫৪.০৬, রত্না চা বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫৬.৯৪, এলবিনটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫৪.৯৬, ফুলতলা চা বাগান বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫২.২৫, ধামাই এ সি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬২.৫৯ শতাংশ ভোট কাস্টিং দেখানো হয়। ভোটারদের উপস্থিতি ও ফলাফলের হিসাবের সাথে যা কোনোক্রমেই মানানসই নয়।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণে থাকা অনেক গণমাধ্যমকর্মী, নির্ভরযোগ্য সূত্র, আমাদের কর্মী ও এজেন্টদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এরকম করে ৪৪ টি কেন্দ্রের প্রায় ২৩ টি কেন্দ্রে ভোট কারচুপি ও জালিয়াতি হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রতিয়মান হয়েছে। যাতে ‘ঘোষিত জয়ী প্রার্থী’র লোকজন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। ৮ মে সন্ধ্যায় কন্ট্রোলরুম থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সময় বেশ কিছু অমিল ও অনিয়ম দেখার পর আমি সেখানে গিয়ে আপত্তি জানাই এবং ফলাফল ঘোষণা স্থগিত রাখতে অনুরোধ করি। তখন সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা এ বিষয়ে আমাকে রিটার্নিং কর্মকর্তার সাথে আলাপ করতে বলেন। তখনই আমি মৌখিকভাবে ও ই-মেইলের মাধ্যমে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করলে তিনি আমলে নেননি। জুড়ী উপজেলা নির্বাচনে এরকম ‘ট্যাকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ অতীতে হয়নি উল্লেখ করে অবাদ ও সুষ্ঠ একটি পূণঃনির্বাচনের দাবী করেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য দিতে অপারগতা জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন