জুড়ীতে এক নারীর হাতবাঁধা লাশ উদ্ধার, পরিবারের সুখের মাতম

November 2, 2022,

হারিস মোহাম্মদ॥ নিখোঁজের ৩ দিন পর এক নারীর মরদেহ হাতবাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘঠনাটি ঘঠেছে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী শিলুয়া চা-বাগানের তালগাং নদীতে।

জানা যায়, স্থানীয় শিলুয়া চা বাগানের চা শ্রমিক আরমান আলীর মেয়ে শাহানা আক্তার ২৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টায় তার মোবাইলে হঠাৎ একটি ফোন আসলে বাড়ীতে কাউকে কিছু না বলেই শাহানা বাড়ী থেকে একা বের হয়ে গেলে আর বাড়ী ফিরেনি।

মেয়ে নিখোঁজের ঘঠনায় তার বাবা আরমান আলী (৯০) স্থানীয় জুড়ী থানায় ৩ দিনের মধ্যে কোন জিডি (সাধারন ডায়রী) না করেই বিভিন্ন কবিরাজ, ও সাধক-গনকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে মেয়েকে খুঁজতে ধরনা দিতে থাকেন।

নিখোঁজের ৩ দিন পর গত শনিবার (২৯/১০) বিকেলে ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃ সীমান্তবর্তী তালগাং নামক নদীর পানির স্রোত দিয়ে একটি নারীর লাশ ভেসে থাকতে দেখে লোকজন স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করলে বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে জুড়ী থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ মোশাররফ হোসেনের নির্দেশে পুলিশের এসআই বাদল লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজারে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারী হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।

লাশ উদ্ধারের পর এটি স্থানীয় বাগানের নিখোঁজ শাহানার মরদেহ কিনা শনাক্তের জন্য তার পিতা আরমান আলীকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলে আরমান  আলী প্রথমে ফুলে ফেঁপে উঠা বড় আকৃতির দেহ দেখে প্রথমে শনাক্ত করতে না পারলেও কিছুক্ষণ পরে লাশের পোশাক দেখে এটি তার মেয়ের লাশ বলে শনাক্ত করেন।

শাহানার পরিবার সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় একটি যুবকের সাথে তার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। শাহানাদের পরিবার একটি মুসলিম পরিবার এবং শাহানার প্রেমিক একই পাড়ার একটি হিন্দু (সনাতনধর্ম) পরিবারের সন্তান।

২০১৭ সালে পাতরখলা চা-বাগানে শাহানার বিয়ে দেন তাঁর পিতা। বিয়ের ২ মাসের মধ্যেই স্বামীর-স্ত্রীর মধ্যে  ঝগড়া হলে শাহানা চলে আসে তার পিত্রালয়ে। শাহানার ৫ বোনের মধ্যে সে চতুর্থ এবং তার কোন ভাই নেই। তার বৃদ্ধ পিতা আরমান আলী (৯০) স্থানীয় চা-বাগানের নিয়মিত শ্রমিক।

শাহানার পরিবার আরো জানায়, শাহানার বিয়ের পর থেকেই একই বাগানের একটি হিন্দুধর্মের  যুবকের সাথে শাহানার সম্পর্ক জানাজানি হলে পারিবারিক ভাবে তাকে (শাহানা) অনেক শ্বাসন এবং বুঝানোর পরও তারা কেউ কাউকে ছাড়তে পারেনি। এঘঠনায় শাহানার পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়। এমনকি প্রেমিকের ২/১ বার হামলা ও নির্যাতনের স্বীকার হোন শাহানার বৃদ্ধ পিতা।

বুধবার সরে জমিনে পরিদর্শনে গেলে শাহানার পরিবার জানায়, এটি সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিত হত্যা । শাহানা আক্তার ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলো এবং এই ঘটনা পরিবারে জানাজানি হলে শাহানা এ বিষয়ে তার প্রেমিককে জানায়। শাহানার প্রেমিক (ছদ্মনাম-২৮) বিষয়টি ধামাচাপা দিতে শাহানাকে ঐ দিন বাড়ি থেকে ডেকে শিলুয়া সীমান্তবর্তী বিজিবি ক্যাম্প থেকে প্রায় ৩০০ ফুট দূরে ভারত-বাংলার জিরো পয়েন্ট স্থানে হত্যা করে লাশ  শ্মশান ঘাঠ এলাকায় নিয়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় রাখে এবং পরদিন সুযোগ বুজে বস্তা থেকে লাশ বের করে পার্শ্ববর্তী তালগাংয়ে চলন্ত পানির মধ্যে একটি খুটির সাথে বেঁধে রেখে পালিয়ে যায়। শাহানার পুরো পরিবারের চলছিল শোকের মাতম। তাদের কান্না যেন কিছুতেই থামছিলো না।

লাশ উদ্ধারের সময় লাশের থেকে ২০ ফুট দুরত্বে একটি ফিডের খালি এলোমেলো বস্তা দেখা যায়। ধারনা করা হচ্ছে প্রথমে তাকে হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দি অবস্থায় ১ দিন রাখে যার কারনে লাশের হাত ও পা বাঁকানো। লাশ উদ্ধার কাজে জড়িত লেংড়া (৩৮) জানায় লাশের ঘাড়ের মধ্যখানে ২-৩ ইঞ্চি পরিমান গভীর দা অথবা ছুরির আঘাত রয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোসব্বির আলী জানান, মেয়েটির সাথে স্থানীয় একটি ছেলের সম্পর্ক রয়েছে বলে আমি শুনেছি। শাহানা নিখোঁজের ঘঠনা আমি শুনিনি তবে লাশের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় বিজিবির উপস্থিতিতে পুলিশকে খবর দেই। এটি একটি পরিকল্পিত ডাবল মার্ডার। অপরাধী যেই হোকনা কেনো তাকে আইনের আওতায় আনা হোক।

এবিষয়ে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা জুড়ী থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম জানান, ঘটনার খবর পেয়ে  তাৎক্ষণিক ভাবে  উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছি। এ বিষয়ে নিহতের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চলছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com