জুড়ীতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, তিনদিনের ভিতরে আওয়ামীলীগ সভাপতির কাছে অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ
জুড়ী প্রতিনিধি॥ জুড়ীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সদ্যবিলুপ্ত উপজেলা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় এবার নেতাকর্মীদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন অভিভাবক সংগঠন উপজেলা আওয়ামীলীগ।
উভয় পক্ষের নেতাকর্মীকে সংঘর্ষের সময় ব্যবহৃত অস্ত্র আগামী তিনদিনের মধ্যে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির কাছে জমা দিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বিরোধ মিটমাটে রোববার ১১ জুন রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমঝোতা বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকায় আওয়ামীলীগের উপজেলা কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমানের বাড়িতে ছাত্রলীগের দুইপক্ষকে নিয়ে সমঝোতা বৈঠক হয়।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির সভাপতি মাসুক মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাস, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের সদস্য বদরুল ইসলামসহ ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় দেড় ঘন্টা এ বৈঠক চলে।
প্রসঙ্গত, পূর্ব বিরোধের জের ধরে গত ৭ জুন দুপুর ২টায় জুড়ীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সদ্যবিলুপ্ত উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাহাব উদ্দিন সাবেল গ্রুপের নেতা হুমায়ুন রশীদের নেতৃত্বে ১৫-২০টি মটরসাইকেল নিয়ে একটি মিছিল উপজেলার চৌমুহনী থেকে ভবানীগঞ্জ বাজারস্থ নিউমার্কেট এলাকায় আসে।
অপরদিকে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ভূঁইয়া উজ্জ্বল গ্রুপের নেতা জায়ফরনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি মিছিল জুড়ী কলেজ থেকে নিউমার্কেট আসে।
মিছিল দুটি একই এলাকায় এসে পৌঁছালে দেশীয় অস্ত্রসহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দু’পক্ষের নেতাকর্মীরা। তখন উভয়ের পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে শ্রমিকসহ উভয়পক্ষের প্রায় ১৫ জন আহত হন।
সংঘর্ষের সময় পরিবহন শ্রমিকদের ওপর হামলা ও দুটি অটোরিকশা ভাংচুরের অভিযোগে উত্তেজিত শ্রমিকরা জুড়ী-লাঠিটিলা সড়কটি আধাঘন্টা অবরোধ করেন।
এসময় ছাত্রলীগের নেতাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র থাকায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিংকু রঞ্জন দাস সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, ব্যক্তিগত দ্বন্ধের কারণে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
এখানে দলীয় কোন বিষয় ছিলনা। দু’পক্ষকে শক্তভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যাতে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কাজ তারা যেন আর না করে।
বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। তাই জরুরী বৈঠক ডেকে তাদের দুইপক্ষকে সতর্ক করে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি।
সামনে যেহেতু জাতীয় নির্বাচন তাই তাদেরকে সুন্দরভাবে সংগঠন পরিচালনা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে সংঘর্ষে জড়ালে সংগঠন থেকে তাদের বহিষ্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মাসুক মিয়া সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।
আমরা সেটি সমাধান করে দিয়েছি এবং তাদের কাছে থাকা অস্ত্রগুলো আমাদের কাছে জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। জুড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ূন কবির বলেন, এ ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। কোনো মামলা হয়নি।
মন্তব্য করুন