জুড়ীতে পাহাড়ি ঢলে জুড়ী নদী সহ কয়েকটি ছড়ার বাঁধ ভেঙে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
এম মছব্বির আলী : মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জুড়ী নদী ও কয়েকটি পাহাড়ি ছড়ার প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করে সাগরনাল, গোয়ালবাড়ী এবং ফুলতলা ইউনিয়নের ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। এসব এলাকার অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে তিনটি ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এলাকাবাসী জানান, গত ২দিনের টানা ভারী বর্ষণে জুড়ী নদী, রাঘনা ছড়া ও ধলাই ছড়ার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এতে সাগরনাল ইউনিয়নের উত্তর সাগরনাল, উত্তর বড়ডহর, দক্ষিণ বড়ডহর, বরইতলি, কাশিনগর, হোসেনাবাদ, কাপনা পাহাড় চা-বাগান ও জাঙ্গালিয়া, গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের মন্ত্রীগাও, পূর্ব শিলুয়া, যোগীমোড়া ও পশ্চিম শিলুয়া এবং ফুলতলা ইউনিয়নের কোনাগাও, ফুলতলা বস্তি, বটুলি ও ধলাইর হাওর ও জায়ফরনগর ইউনিয়নের বির্স্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় লোকজন নিরাপদ আশ্রয় নেন।
এদিকে ভারী বর্ষনে মনতৈল ও গুচ্ছগ্রামে টিলা ধসে ৫০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আহত হন শিশু সহ ৬ জন। আহতরা হলেন মনতৈল গ্রামের আক্কেল আলী (৫৫), তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৪০), ছেলে আল ইসলাম (১২) ও মেয়ে সাহিদা বেগম (১০), সিরাজ মিয়া (৬০), তাঁর ছেলে মন্নান মিয়া (১২) আহত হন। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠান।
ফুলতলা ইউপির চেয়ারম্যান ফয়াজ আলী বলেন, ঢলের তোড়ে তাঁর এলাকার ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। ১১টি কাঁচা ঘর ভেসে গেছে।
গোয়ালবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন আহমদ বলেন, তাঁর এলাকার বিভিন্ন গ্রামের দুই শতাধিক বাড়িঘর ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তত ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী।
সাগরনাল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তাঁর এলাকার কমপক্ষে ৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী। বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। অন্তত শতাধিক খামারের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে ত্রাণসামগ্রী চাওয়া হয়েছে।
জায়ফরনগর ইউপির চেয়ারম্যান মাছুম রেজা বলেন, গুচ্ছগ্রাম ও মনতৈল গ্রামে টিলা ধসে ৫০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমপক্ষে ২ হাজার মানুষ পানিবন্দী।
দক্ষিণ সাগরনাল গ্রামের বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, সকালে ঘুম থেকে জেগে বাড়ির উঠানে পানি দেখেন। দুপুর গড়ানোর আগেই উঠান ছাড়িয়ে বসতঘরে উঠতে থাকে। সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পাশের শুকনো পাকার সড়কে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন।
একই এলাকার তানজির আহমদ বলেন, ঢলের পানিতে তাঁর পোলট্রি খামার তলিয়ে যাওয়ায় চার হাজার মোরগের বাচ্চা মরে গেছে। কোনাগাও গ্রামের আক্কেল আলী বলেন, ‘ঘরো কোমর পানি। পরিবারর লোকজনরে আত্মীয় বাড়িত পাঠাই দিছি। গরু-ছাগল ফুলতলা বাজারের রাস্তায় নিয়া রাখছি।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাছির উল¬াহ খান ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
নির্বাহী অফিসার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য তাৎক্ষণিক ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন