জুড়ীতে বিজিবির তালিকায় ১৩ চোরাকারবারীর নাম
হারিস মোহাম্মদ॥ মৌলভীবাজারের জুড়ীতে ৫২ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-র অধীনস্ত ফুলতলা বিওপি ৫২-সি কোম্পানীর তালিকায় ১৩ জন চোরাকারবারীর নাম উঠে এসেছে। এই তালিকায় মাদক পাচারকারী, মানব পাচারকারী, পশু পাচারকারী ও চোরাকারবারীসহ ফুলতলা ইউনিয়নের ১৩ জনের পূর্ণ নাম ঠিকানা প্রকাশ পেয়েছে। সম্প্রতি বিজিবি ফুলতলা বিওপি হতে এই তালিকা ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করে বিজিবির পক্ষ থেকে মাদক, মানবপাচার ও চোরাকারবার রোধে তাদের কঠোর অবস্থানের কথা জানানো হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, “ফুলতলা বিওপি’র বিভিন্ন চোরাকারবারীদের নামীয় তালিকা ৫২/ সি, কোম্পানী, ফুলতলা” শিরোনামের এই তালিকা পাবার পর ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জুড়ী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমেদ তালিকায় উল্লেখিত ১৩ জনকে রোববার ২৩ অক্টোবর দুপুর ১২ টায় ইউনিয়ন পরিষদে বিজিবির চোরাকারবারীদের নামের তালিকা সংক্রান্ত
এক সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করেন। ফুলতলা বিওপির দুইজন বিজিবি সদস্যের উপস্থিতিতে ওই সভায় চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুক আহমেদ ভারত-বাংলাদেশে অবৈধ চোরাচালান থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে দেন।
বিজিবি ফুলতলা বিওপি কর্তৃক সরবরাহকৃত চোরাকারবারীদের নামের তালিকায় যারা আছেন তারা হলেন, মাদক চোরাকারবারী ফুলতলার দক্ষিণ সাগরনাল গ্রামের মোঃ সাদেক মিয়া (৩০), কোনাগাঁও গ্রামের মোঃ মোকাদ্দস মিয়া (৩২), ফুলতলা বাজারের মোঃ তাজুল ইসলাম (৩৫), গবাদিপশু ও মাদক চোরাকারবারী কোনাগাঁও গ্রামের মোঃ মোখলেছ মিয়া (৩২), গবাদিপশু চোরাকারবারী পূর্ব বটুলি গ্রামের মোঃ বাবলু মিয়া (৩৫), মোঃ সেলিম মিয়া (৩২), চোরাকারবারী মোঃ জয়নাল মিয়া (৩০), চোরাকারবারী মোঃ আব্দুল বারেক (২৫), গবাদি পশু চোরাকারবারী মোঃ সাইফুল ইসলাম (৪০), মাদক চোরাকারবারী মোঃ রুমেল মিয়া (৩০), বিরেনতলা গ্রামের মাদক চোরাকারবারী মোঃ হায়দার আলী (৩২), ফুলতলা গ্রামের মোঃ সোহেল আহম্মদ (২৮), পূর্ব বটুলি গ্রামের মোঃ ডালিম মিয়া ।
ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদ সংশ্লিষ্ট বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, বিজিবির পক্ষ থেকে ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদে চোরাকারবারীদের নামের তালিকা দেয়া হযয়েছে। এ তালিকায় থাকা ১৩ জন চোরাকারবারীদের ডেকে রোববার ইউনিয়ন পরিষদে এক সভায় মিলিত হন ইউপি চেয়ারম্যান মাসুক আহমেদ। এ সভায় সকল ইউপি সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।
ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন সেলিম বলেন, ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের নিয়ে আজকে আমরা একটি সভা করেছি। এ সভায় বিজিবির প্রতিনিধিও ছিলেন। আমরা ব্যবসায়ীদের বলেছি, আমরা সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করি। আমাদের মান-সম্মান যাতে বজায় থাকে। আমরা যাতে কোন অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সীমান্তের তার ভেড়া কাটতে না যাই, আমরা যাতে আমাদের গরু ছাগল সীমান্তের তার বেড়ার ওপারে না নিয়ে যাই। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিজিবি ও ইউনিয়ন পরিষদের সমন্বয়ে এই এলাকায় সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকবে।
ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুক আহমেদ বলেন, সীমান্তে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও চোরাচালান রোধে আজ (রোববার) ব্যবসায়ী ও বিজিবি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারত থেকে যাতে মাদকদ্রব্য বা অন্য কোনো কিছু অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসতে না পারে, আর বাংলাদেশ থেকেও যাতে ভারতে অবৈধভাবে কিছু পাচার হতে না পারে সে ব্যাপারে সভায় ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। বিজিবি কর্তৃক সরবরাহকৃত তালিকার ব্যাপারটি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা সীমান্ত এলাকার সম্ভাব্য কিছু মানুষকে ডেকে চোরাচালান থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করে দিযেছি।
ফুলতলা বিওপি ৫২/ সি কোম্পানীর সুবেদার জয়নাল আবেদীন এই তালিকার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল শাহ আলম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, বিজিবি সীমান্তে চোরাকার বারীদের যে কোনো তৎপরতা রোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে । বিভিন্ন চৌকিতে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি টহল জোরদার করা হযেছে। ফুলতলা বিওপি ৫২/ সি কোম্পানীর চোরাকারবারীদের তালিকার বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।
মন্তব্য করুন