জুড়ীর আশ্রয়কেন্দ্রে এলো ‘প্লাবন’
স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা সোহেল-আলেখা দম্পতি। সোহেল মিয়া ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান। বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হাকালুকির তীরবর্তী এলাকাগুলো বন্যায় তলিয়ে গেছে। নিজেদের বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় চার দিন আগে সোহেল তাঁর গর্ভবতী স্ত্রীসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন জুড়ী মডেল উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে।
বুধবার সকালে ওই আশ্রয়কেন্দ্রেই আলেখার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান। বন্যা-প্লাবনে জন্ম হওয়ায় নাম রাখা হয়েছে ‘প্লাবন’। বুধবার রাতেই খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবজাতক ও মা দুজনেই সুস্থ আছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া বানভাসি বিভিন্ন বয়সী মানুষ নবজাতককে দেখতে ভিড় করেছে। খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রসূতি ও নবজাতককে দেখতে আসেন। তাঁরা মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ফারহানা রহমান বলেন, ‘তাঁরা নবজাতক ও প্রসূতির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন, উভয়েই সুস্থ আছে। তাদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়েছে।’
নবজাতকের বাবা সোহেল মিয়া জানান, গত সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে তাঁর স্ত্রী প্রথমবার প্রসবব্যথা অনুভব করেন। জুড়ী থানার পুলিশের সহযোগিতায় দ্রুত তাঁকে পুলিশের ভ্যানে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিন্তু বিদ্যুৎ, পানি, নার্স না থাকার কথা বলে রোগীকে পাশের কুলাউড়া বা বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে বলেন সেখানকার দায়িত্বরত এক চিকিৎসক। তবে কুলাউড়া বা বড়লেখায় যাওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ বিভিন্ন এলাকার সড়ক বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া রাত বেশি হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেও কোনো গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারেননি। তেলের সংকটে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সও বিকল হয়ে পড়ে আছে বলে জানান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লোকজন। নানা দুশ্চিন্তায় সেখানেই রাত কাটে তাঁদের। পরদিন মঙ্গলবার সকালে তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে আসেন।
সোহেল মিয়া বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে আসার পর ছালেহা বেগম নামের পরিচিত এক ধাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁর সহযোগিতায় আলেখার সন্তান প্রসব হয়। বড় আশা করে সরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলাম, কিন্তু ডাক্তারের কথাবার্তা শুনিয়া বড় কষ্ট পাইছি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সমরজিৎ সিংহ বলেন, ‘বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছি, বন্যার্ত মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি। প্রসূতি আলেখার স্বজনদের অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’
মন্তব্য করুন