জুড়ী উপজেলায় অর্ন্তভূক্তির প্রতিবাদে বড়লেখার দুই ইউনিয়নবাসী আবারো ফুসে উঠছে
আবদুর রব॥ বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ (দ.) ও সুজানগর ইউনিয়ন জুড়ী উপজেলায় অর্ন্তভূক্তির বিষয় চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এমন খবরে আবারো ফুসে উঠছে এ দুই ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। তারা বড়লেখা উপজেলায় অর্ন্তভূক্ত থাকতে প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করছে।
২ মার্চ বৃহস্পতিবার দক্ষিণভাগ (দ.) ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। উপজেলা ঘোষণার গেজেটের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করে এ দুই ইউনিয়ন প্রায় ১ যুগ ধরে বড়লেখা উপজেলার সাথে বহাল রয়েছে।
জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলাকে ‘এ’ গ্রেডে উন্নীত করতে ২০০৩ সালে তৎকালিন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২০০৪ সালের ২৬ আগষ্ট প্রশাসনিক পুনঃবিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভায় জুড়ীকে উপজেলা ঘোষণা করে মৌলভীবাজার জেলাকে ‘এ’ গ্রেডে উন্নীত করা হয়। জেলার কুলাউড়া উপজেলার জায়ফরনগর, গোয়ালবাড়ী সাগরনাল ও ফুলতলা ইউনিয়ন এবং বড়লেখা উপজেলার পুর্বজুড়ী, পশ্চিম জুড়ী, সুজানগর ও দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নকে নিয়ে নতুন জুড়ী উপজেলা ঘোষণা করা হয়। জেলায় ৮ ইউনিয়ন নিয়ে নতুন উপজেলা গঠনের গেজেট প্রকাশের পর ৬ ইউনিয়নে আনন্দ উল্লাস শুরু হলেও বড়লেখার দক্ষিণভাগ (দ.) ও সুজানগর ইউনিয়নবাসীর মধ্যে ক্ষোভের আগুন জ্বলতে শুরু করে। ভৌগলিক কারণে এ দুই ইউনিয়ন জুড়ীর সাথে অর্ন্তভুক্ত হতে চায়নি। এসময় দুই ইউনিয়নবাসী বড়লেখা উপজেলায় বহাল থাকতে বিক্ষোভ-মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ চালিয়ে যান। বড়লেখায় বহাল থাকতে দক্ষিণভাগ (দ.) ও সুজানগর ইউনিয়নবাসীর পক্ষে দুই ইউপি চেয়ারম্যান হাইকোর্টে রিট করেন। রীটের প্রেক্ষিতে ২০০৫ সালের ১০ জানুয়ারী বিচারপতি আব্দুল মতিন ও বিচারপতি এএফএম আব্দুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ এ দুই ইউনিয়নকে জুড়ীতে অর্ন্তভূক্তির গেজেট স্থগিত করেন। ফলে এ দুই ইউনিয়নের প্রশাসনিক যাবতীয় কর্মকান্ড বড়লেখায় পুর্নবহাল হয়। প্রায় ১২ বছর ধরে এ দুই ইউনিয়ন বড়লেখায় থাকলেও গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে জুড়ী উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের সাথে এগুলোকে যুক্ত করে একটি ওয়ার্ড গঠিত হয়। সম্প্রতি একটি মহল প্রচারণা চালাচ্ছে দক্ষিণভাগ ও সুজানগর ইউনিয়ন জুড়ীতে চলে গেছে। এসব প্রচারণায় দুই ইউনিয়নের অর্ধলক্ষ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ, হতাশা ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণভাগ (দ.) ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় ডা. আইনুল ইসলাম, ডা. জগদিশ চন্দ্র পাল, ইউপি মেম্বার ছওয়াব আলী, সাহেদুল ইসলাম সুমন, দেলোয়ার হোসেন দুলাল, আমিনুল ইসলাম, সাইদুর রহমান প্রমূখ বক্তারা বলেন, মৌলভীবাজার জেলা ‘এ’ গ্রেডে উন্নীত হয়েছে, জুড়ী উপজেলাও বহাল রয়েছে। তাতে কোন সমস্যা হয়নি। তবে এখন আমাদেরকে নিয়ে টানাটানির কি প্রয়োজন পড়লো। জনগনের সুবিধার জন্য সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নবাসীকে জুড়ীর সাথে অর্ন্তভূক্ত করায় এ অঞ্চলের মানুষজন যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সর্বক্ষেত্রে মারাত্মক দুর্ভোগের সম্মুখিন হবে। ২০০৪ সালে গেজেট প্রকাশের সাথেই এলাকাবাসী রীট মামলা করে এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। আদালতের নির্দেশে দুই ইউনিয়নের অর্ন্তভুক্তি স্থগিত থাকে। বক্তারা আরো বলেন, প্রায় ১ যুগ পর এতদঅঞ্চলের মানুষকে পুনরায় অন্য উপজেলায় চাপিয়ে দিলে তুমুল গণ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সুজানগরের ইউপি চেয়ারম্যান নছিব আলী জানান, সম্প্রতি তার ইউনিয়নকেও জুড়ীতে অর্ন্তভূক্ত হওয়ার খবরে ইউনিয়নের লোকজনও প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন। তারা বলেছেন, জুড়ী উপজেলা সুজানগর ইউনিয়ন থেকে অত্যন্ত দুরবর্তী। বড়লেখা উপজেলা সদর কাছাকাছি হওয়ায় যোগাযোগসহ সর্বক্ষেত্রে ইউনিয়নবাসী সুবিধা ভোগ করছেন।
মন্তব্য করুন