জেলার একমাত্র রেলওয়ে চিকিৎসালয়টি বেহাল দশায়
ইমাদ উদ দীন॥ ১৮ টি রেলওয়ে স্টেশনের কয়েক হাজার মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণের ভরসাস্থল এই চিকিৎসালয়। কিন্তু নানা সমস্যা আর সংকটে এখন বেহাল দশায় প্রাচীনতম প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের অন্যতম এই চিকিৎসালয়টির স্বাস্থ্য সেবার কার্যক্রম। সরজমিনে কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন চিকিৎসালয়টিতে গেলে স্থানীয় সেবা গ্রহীতা ও চিকিৎসালয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপে তারা জানালেন চিকিৎসালয়টির নানা দূর্দশা আর দূর্ভোগের কথা। দেখা গেল ছোট্ট একটি জরার্জীণ কক্ষে সহকারী সার্জন না থাকায় মিড ওয়াফ আছিয়া খাতুন রোগীদের ব্যাস্থাপত্র দিচ্ছেন। জানা গেল প্রতিদিনই ওরকম প্রায় ৩৫-৪০ জন রোগী ওখান থেকে বিনামূল্যে ঔষুধ ও চিকিৎসাপত্র নিয়ে থাকেন। আর এসবগুলো রোগী চিকিৎসাপত্র আর ঔষুধ প্রদান তিনি একাই সামাল দেন। জানালেন আগে রোগীর সংখ্যা বেশী থাকলেও এখন নেই সেই আগের অবস্থা। তাই কোন জটিল রোগী ওখানে এলে তারা তাদের রেফার করছেন কুলাউড়া কিংবা মৌলভীবাজার সরকারী হাসপাতালে। একসময় সিলেট বিভাগের মধ্যে চিকিৎসা সেবায় খ্যাতি পাওয়া জেলার একমাত্র কুলাউড়ার প্রাচীনতম রেলওয়ে জংশন স্টেশনের চিকিৎসালয় এখন নানা সমস্যা ও চিকিৎসক-সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম। দীর্ঘদিন থেকে সহকারী সার্জন ওখানে না বসায় চিকিৎসাসেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে আসা এখানকার ১৮ টি স্টেশনের রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্য ও রেলওয়ের যাত্রীরা। এছাড়া বহু আগের নির্মিত ওই চিকিৎসাকেন্দ্রটি জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরজমিনে দেখা গেল হাসপাতালটির ছাদ ও দেয়ালের বিভিন্ন অংশে চির ফাটল ধরায় বৃষ্টি হলেই ভবনজুড়ে পানি পড়ে। এতে করে বিভিন্ন কক্ষে থাকা আসবাবপত্র, ওষুধসহ জরুরী জিনিসপত্র বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়। স্যাঁতসেঁতে এ ভবনের কক্ষে প্রবেশ করলে এটিকে চিকিৎসা কেন্দ্র বলে মনে হয় না। অথচ এ হাসপাতালটি একসময় ছিল সিলেটের অন্যতম সুনাম ও সুখ্যাতি সম্পন্ন প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র। প্রতিনিয়তই এর আওতাধীন রেলওয়ে এলাকার সুবিধাভোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হতো ওই চিকিৎসাকেন্দ্রে। জানা যায় ১৯৪৮ সালে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত কুলাউড়া রেলওয়ে চিকিৎসালয়ের আওতাধীন চিকিৎসাসেবা প্রদানের এলাকা ছিল কুলাউড়াসহ শাহবাজপুর, মুড়াউইল, বড়লেখা, কাঁঠালতলী, দক্ষিণভাগ, জুড়ী, ছকাপন, বরমচাল, ভাটেরা, লংলা, টিলাগাঁও, মনু, শমশেরনগর, ভানুগাছ, শ্রীমঙ্গল সাতগাঁও ও রশিদপুর রেলওয়ে স্টেশন। হাসপাতালের ওই তিন দিকের ১৮টি স্টেশনের প্রায় এক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের প্রায় ৫ হাজার লোকের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার গ্রহণের এটিই ছিল একমাত্র চিকিৎসালয়। এছাড়া এসব রেলওয়ে স্টেশনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পরিবারের সদস্যদেরও চিকিৎসাসহ দুর্ঘটনার শিকার যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়ার কথা এই চিকিৎসালয় থেকে। কিন্তু বৃহৎ এলাকার রেলওয়ে একমাত্র এই চিকিৎসালয়টিতে বর্তমানে নেই কোনো চিকিৎসক। প্রতিদিনই রেলওয়ে এলাকা থেকে আসা ৪০-৫০ জন রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন ওই চিকিৎসালয়ের দায়িত্বরত মিড ওয়াইফ। কিছু দিন আগে ফার্মাসিস্ট এই ব্যবস্থাপত্র দিলেও তিনি এখন অবসরে থাকাতে এ দ্বায়িত্ব পালন করছেন মিড ওয়াইফ। এতে সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সুবিধাভোগীরা। এছাড়া চিকিৎসালটিতে ১ জন চিকিৎসক, ১ জন ফার্মাসিস্ট, ১ জন ধাত্রী, ৩ জন ওয়ার্ডবয়, ১ জন ডিসপেনসারি ক্লিনার, ১ জন চৌকিদার, ১ জন জমাদার ও ১০ জন সুইপারসহ ১৯টি পদের মধ্যে চিকিৎসকসহ (সহকারী সার্জন) ৭টি পদ শূন্য রয়েছে। ওই চিকিৎসালয়ের সহকারী সার্জনের দ্বায়িত্বে থাকা ডা: আইয়ুবুর রহমান খান মুঠোফোনে মানবজমিনকে জানান তিনি এই চিকিৎসালয়সহ আরো প্রায় ১০টির দ্বায়িত্ব একাই থাকে পালন করতে হচ্ছে। চিকিৎসা সেবা আর দাপ্তরিক কাজ দুটোই সমন্বয় করতে গিয়ে পুরোপুরি চিকিৎসা সেবা চালাতে তাকে হিমশিম খেতে হয়। কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত অনেকেই জানান এই হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক না থাকায় তারা এখন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া স্টেশন এলাকার নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা থাকার পরও হাসপাতালের গেটের সামনে প্রবেশপথ বন্ধ করে গাড়ি র্পাকিং করা হয়। চিকিৎসালয়ের দায়িত্বরত মিড ওয়াইফ আছিয়া খাতুন বলেন, চিকিৎসালয় টিতে দীর্ঘদিন থেকে চিকিৎসক নেই। নিজ দায়িত্বের বাইরে প্রতিদিন তিনি ৩৫-৪০ জন রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। এতে নিজ দায়িত্ব পালনে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন।
মন্তব্য করুন