জেলার শ্রেষ্ট ‘জয়িতা’ হাসনা বেগমের নির্যাতনময় জীবন কাহিনী

December 12, 2017,

রাজনগর প্রতিনিধি॥ রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের মৃত কুয়াই মিয়ার মেয়ে হাসনা বেগমের বিয়ে হয়েছিল সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মোমিনপুর গ্রামের কাউছার আহমদের ছেলে ইংল্যান্ড প্রবাসী শাহাব উদ্দীনের সঙ্গে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারীতে। বিলেতের স্বপ্নে বিভুর হাসনা বেগমের যখন বিয়ের হয়েছিল তখন তিনি ছিলেন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বিয়ের কারণে আর পরীক্ষা দিতে পারেন নি। বিয়ের দুই মাসের মাথায় ইংল্যান্ড প্রবাসী স্বামী চলে যান বিলেতে। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় সুখের স্বপ্নে ভাসতে থাকা হাসনার জীবনও। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে বিভিন্ন মালামাল দিলেও নতুন করে চাপ আসতে থাকে শ^শুর-শ^াশুরী আর দেবরদের কাছ থেকে। কিছু দিনের মধ্যে এই চাপ রূপ নেয় শারীরিক নির্যাতনে। যৌতুকের আশায় বিভিন্ন সময় তাকে মারধর করা হতো। যে স্বামীর সঙ্গে দুই মাসের ঘর ছিল সেও থেকে যায় আড়ালে। বারবার যোগাযোগ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ওপার থেকে কান সাড়া পান নি। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে নির্যাতন। সংসার ঠিকিয়ে রাখার জন্য নির্যাতন সহ্য করতে থাকেন। এখনো সেই খোঁজ পাননি সেই ইংল্যান্ড প্রবাসী স্বামীর। এদিকে শ^শুর বাড়ির লোকজনের দাবী অনুযায়ী দুই তিনবারে যৌতুক হিসেবে সাড়ে ৩ লাখ টাকাও দেন। কিন্তু এরপরও থামেনি নির্যাতনের মাত্রা।

২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরের ঘটনা- হাসনা বেগমের বিয়েতে যৌতুক হিসেবে দেয়া কাঠের ফার্নিচেয়ার গুলোও বিক্রি করে দেন শ^শুর। তিনি এর প্রতিবাদ করনে। এতেই তার ওপর শুরু হয় লোমহর্ষক নির্যাতন। নির্যাতনের কারণে একসময় তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অজ্ঞান অবস্থায় তাকে ফেলে দেয়া হয় বাড়ির পিছনের হাওরে। হাওরে মাছ ধরতে থাকা এক জেলে তাকে

উদ্ধার করে নিয়ে যান হাসপাতালে। জ্ঞান ফিরলে সবাইকে তার নির্যাতনের কাহিনী শোনান। সেখান থেকেই চলে আসেন বাবার বাড়ি। শুরু করেন নতুন করে জীবন গড়া। আবারো বই খাতা কিনে প্রস্তুতি নিতে থাকেন এইচএসসি পরীক্ষার। সেই সঙ্গে শ^শুর বাড়ির লোকজনদের আসামী করে মামলাও করেন।

হাসনা বেগম বলেন, এইচএসসী পরীক্ষাও দিয়েছি সঙ্গে মামলাও চালিয়েছি। আর্থিক জমিজমা এর আগেই বিক্রি করা হয়েছিল। ব্যবসায়ী ভাই অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক সমস্যা বাড়তে থাকে। একদিকে সংসার আর নিজের লেখাপড়ার বোঝা অন্যদিকে মামলার খরচ। মামলা চালানোর জন্য বিভিন্ন সংস্থার কাছে গিয়েছিলেন সেখানেও দূনীর্তি আখড়া। এরপরও হাল চাড়েন নি। চালিয়ে যান লেখা পড়া। এসইচএসসি শেষ করে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অধিনে ¯œাতক শেষ করেন। পরে এমসি কলেজ থেকে মাষ্টার্স। মাষ্টার্সের রিজাল্টের অপেক্ষায় আছেন এখন তিনি। হাসনা বেগম বর্তমানে টেংরা শহীদ সুদর্শন উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষককতা করছেন।

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে ‘নির্যাতনের বিভিষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরুর’  ক্যাটাগরিতে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে হাসনা বেগম উপজেলা এবং জেলায় শ্রেষ্ট নির্বাচিত হয়েছেন। গত শনিবার ৯ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ও রাজনগর উপজেলার জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে হাসনা বেগমের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেয়া হয়। এসব অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওসহ অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com