(ভিডিও সহ) জেলা ইজতেমা ২৫ জানুয়ারী বাদ ফজর আম বয়ান দিয়ে শুরু হবে : মুসল্লিদের জন্য প্রস্তুত ইজতেমার মাঠ

January 22, 2018,

ইমাদ উদ দীন॥ বিশাল মাঠে বিশাল প্যান্ডেল। ইজতেমা আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ। মাঠ সংস্কার,মঞ্চ,বিদেশী মেহমান থাকার স্থান,ওযুর পানি,খাওয়া ও গোসলের পানি,স্যানিটেশন তৈরীর সব কাজই প্রায় শেষ।

প্রথম বারের মত মৌলভীবাজার শহরতলীর জগন্নাথপুর উপশহর মাঠে ৩দিন ব্যাপী জেলা ইজতেমা শুরু হচ্ছে ২৫ জানুয়ারী। ইজতেমাকে সামনে রেখে এরই মধ্যে শেষ হয়েছে মাঠের কাজ। অল্প যে কাজ বাকী আছে তাও আজকালের মধ্যে শেষ হবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ। গেল ক’দিন আগেই প্রবেশদ্বারে নির্মিত হয়েছে বিশাল অভ্যর্থনা গ্রেইট। এরই সাথে ক’য়েক কিলোমিটার এলাকার সড়ক জুড়ে তৈরী হয়েছে বেশ ক’য়েকটি তোরণ। এখন প্যান্ডেলে টানানো হচ্ছে সামিয়ানা। দ্রুত চলছে প্রয়োজনীয় ও সৌন্দর্য বর্ধনের ঘসামাজার কাজ। ইজতেমার জন্য মাঠ প্রস্তুত করতে গেল প্রায় মাস দিন থেকে রাত দিন পরিশ্রম করছেন স্থানীয় তাবলীগ জামাতের মুরব্বী ও কর্মীরা। তাদের সার্বিক সহযোগীতা করছেন স্থানীয় বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

এবছর এই প্রথম মৌলভীবাজার জেলায় হচ্ছে জেলা ভিত্তিক ইজতেমা। তাই আনন্দ উচ্ছাসের কমতি নেই তাদের। তাবলীগ জামাতের কর্মীদের মত স্থানীয় বাসিন্দারাও আনন্দিত। কারন ৩ দিন ব্যাপী ওখানে দেশ বিদেশী আলেমরা বয়ান পেশ করবেন। কয়েক লক্ষ মানুষের অংশগ্রহনে হবে আখেরী মুনাজাত। তাই ইবাদত,বন্দেগী আর সম্মিলিত দোয়ার জন্য এই ৩টি দিনের অপেক্ষায় তারা প্রহর গুনছেন। তারাও সহযোগীতা করছেন মাঠ প্রস্তুতে। জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রতিদিনই ইজতেমার জন্য প্রস্তুত হওয়া মাঠে আসছেন। নানা ভাবে সহযোগীতাও করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন করছে সার্বিক সহযোগীতা। আগত মুসল্লিদের নিরপত্তায় নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। জেলা শহরের দক্ষিণ পাশে জগন্নাতপুর উপশহর এলাকার মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল সড়কের পশ্চিম পাশে বিশাল মাঠে চলছে ইজতেমার আয়োজন।

গেল প্রায় সপ্তাহ দিন থেকে দূর হতে দৃশ্যমান হচ্ছে ইজতেমার ময়দান। প্যান্ডেলের কাজ শেষ পর্যায়ে থাকায় তা দূর থেকেও দৃশ্যমান হচ্ছে। মাঠের দ্বায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে গেল ২-৩ দিন আগেই মাঠ প্রস্তুত হওয়ার সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসের ২৫ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হবে প্রথম বারের মত জেলায় অনুষ্ঠিত তাবলীগ জামাতের সর্ববৃহৎ গণজমায়েত মৌলভীবাজার জেলা ইজতেমা। জেলা তাবলীগ জামাতের শুরা সদস্য ও ইজতেমা মাঠের জিম্মাদার (আমির) মোঃ ময়নুল ইসলাম জানান, কাকরাইল মসজিদের মুরব্বি ও বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুরব্বিরা তিনদিন ব্যাপী এই জেলা ইজতেমায় বয়ান করবেন। তিনি জানান,২৭ জানুয়ারী সকাল ১১টার দিকে আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে ৩ দিন ব্যাপী বয়ে চলা জেলা ইজতেমা। তবে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমার সাথে মিল রেখে এখানেও বাংলায় আখেরী মোনাজাত হবে বলে জানান মাঠের এই দ্বায়িত্বশীল। ইজতেমা মাঠের জিম্মাদার আরো জানান মূল প্যান্ডেলের ভেতর প্রায় লাখ খানেক মানুষের ব্যাবস্থা থাকবে। তবে পুরো মাঠ জুড়ে কয়েক লক্ষ মানুষের জমায়েতের ব্যবস্থা আছে। স্যানিটেশন, পানি, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সবকিছুরই আয়োজন খুবই গোছালো। তাই জেলার এই প্রথম ইজতেমার আয়োজনে কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম হবে বলে ধারনা করছেন তাবলীগ জামাতের মুরব্বীরা। তবে সবকিছু শৃঙ্খলিত  ও স্বার্থক করতে সকলের সহযোগীতা চান তারা।

জানা গেছে ১৫ জানুয়ারী বিকাল তিনটার দিকে মাঠের সর্বশেষ প্রস্তুততি দেখতে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ইজতেমা মাঠ পরিদর্শনে করেছেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের প্যানেল স্পিকার সৈয়দা সায়েরা মহসীন। এর আগের দিন ইজতেমা মাঠে আসেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রাজিন সালেহসহ জেলার নানা শ্রেণী পেশার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ। জেলার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠন নিজ উদ্যোগে নানা সেবা প্রদান করবেন আগত মুসল্লিদের এমনটি ঘোষণা দিয়ে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সরজমিনে মাঠ ঘুরে জানা গেল ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া মূল প্যান্ডেলের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। আগত মুসল্লীদের সুবিধার্তে বিশুদ্ধ পানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৮টি গভীর নলকূপ, এসব নলকুপ থেকে ৪টি ৪৮ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্লাষ্টিকের অস্থায়ী পানির ট্যাংক স্থাপন করে তা সংযোগ করা হয়েছে একহাজার ফুট দীর্ঘ পানির মূল হাউজের সাথে। এছাড়াও ইজেতেমা মাঠ আলোকিত করতে ইলেকট্রিকের কাজ শেষ হয়েছে। বাকী রয়েছে সংযোগ দেওয়ার কাজ। তা ইজতেমা শুরু হওয়ার আগেই সংযোগ দেওয়া হবে। স্যানিটেশন কাজ সমাপ্ত হয়েছে। তৈরী করা হয়েছে পরিবেশ বান্ধব ৬শতাধিক ল্যাট্রিন। পরিবেশের দিকে লক্ষ্য রেখে আধুনিকভাবে তৈরী করা হয়েছে ল্যাট্রিনগুলো।

হঠাৎ বৃষ্টি হলে ইজতেমা ময়দানে যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে। জানা যায়, প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার খুঠির উপর তৈরি করা হয়েছে লক্ষাধিক মানুষের বসার উপযোগী বিশাল চটের প্যান্ডাল। প্যান্ডাল তৈরিতে খুঠি বসানো সহ সার্বিক কাজে স্বেচ্ছায় শ্রম  প্রদান করেন জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ তাবলীগ জামাতের সাথী ও ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলমানরা। এরই মধ্যে তাবলীগ জামাতের নীতিনির্ধারনী ফোরাম মজলিশে শুরা আঞ্চলিক ইজতেমা সফলভাবে সম্পন্ন করতে নিয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ।জেলার সবচেয়ে বড় এই গণজমায়তকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ইজতেমার সফলতা কামনা করে এবং মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল আঞ্চলিক মহাসড়কে টাঙ্গানো হয়েছে ব্যানার, ফেস্টুন। নির্মিত হয়েছে তোরণও। ইজতেমায় আগত মুসল্লীদের তাৎক্ষনিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সহায়তা দিতে মাঠের উত্তর দিকে মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে মৌলভীবাজার মডেল থনার অফিসার ইনচার্জ সোহেল আহাম্মদ জানান, ইজতেমাকে নির্বিঘ্নে করতে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সার্বক্ষনিক পুলিশ ফোর্স মোতায়েন রাখা হবে। আমাদের পক্ষ থেকে ৬০টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com