জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে মাল্টিমিডিয়া ও প্রজেক্টর বিতরণের নামে অনিয়ম-দুর্নীতি

November 9, 2016,

হোসাইন আহমদ॥ মৌলভীবাজারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ও প্রজেক্টর বিতরণে সরকারি বরাদ্দসহ শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে অনৈতিকভাবে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের ক্লাস বন্ধ রেখে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে টাকা দিয়ে মাল্টিমিডিয়া ও প্রজেক্টর গ্রহণে বাধ্য করা হয়েছে বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন। অথচ মাল্টিমিডিয়া ও প্রজেক্টর বিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার সম্পূর্ণ খরচ সরকার বহন করে থাকে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানায় যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে মৌলভীবাজার জেলার ৭ উপজেলায় মোট ২৪৪টি মাল্টিমিডিয়া ও প্রজেক্টর বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ৪৬টি, কমলগঞ্জ উপজেলায় ৪৬ টি, কুলাউড়া উপজেলায় ৪৯টি, রাজনগর উপজেলায় ২৬টি, বড়লেখা উপজেলায় ৪৬টি, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৪টি ও জুড়ী উপজেলায় ২৬টি মাল্টিমিডিয়া ও প্রজেক্টর বিতরণ করা হয়।
এসব মাল্টিমিডিয়া ও প্রজেক্টর সরকারি খরচে বিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছানোর নিয়ম থাকলেও মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিরাজুল ইসলাম সরকারি নিয়মের ব্যাত্যয় ঘটিয়ে বরাদ্দকৃত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কাছে একটি চিঠি ইস্যু করেন। সেই চিঠিতে তিনি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে নমুনা স্বাক্ষর সত্যায়িত করে মাল্টিমিডিয়া ও প্রজেক্টর গ্রহণ করার অনুরোধ করেন। চিঠির সাথে সাথে জেলা শিক্ষা অফিসার মাল্টিমিডিয়া ও প্রজেক্টর খরচ বাবত প্রত্যেক প্রধান শিক্ষককে ৫ শত টাকা সঙ্গে আনার মৌখিক নির্দেশ দেন। ৬ ও ৭ নভেম্বর মাল্টিমিডিয়া ও প্রজেক্টরগুলো বিতরণ করা হয়।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মাল্টিমিডিয়া ও প্রজেক্টর বিতরণের খরচ বাবত সরকারের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। আর ২৪৪ টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ৫শ টাকা হারে ১ লাখ ২২ হাজার টাকাসহ মোট ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা সম্পূর্ণ অনিয়মের মাধ্যমে গ্রহণ করে জেলা শিক্ষা অফিস।
মাল্টিমিডিয়া ও প্রজেক্টর বিতরণকালে সরেজমিন উপস্থিত থেকে দেখা যায়, জেলা শিক্ষা অফিসার সিরাজুল ইসলাম নিজ কক্ষে বসে বিষয়টি মনিটরিং করেন। অফিস সহকারী মোবারক শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। এসময় অফিস সহকারীদের সাথে অনেক প্রধান শিক্ষকের বাকবিতন্ডা হয়।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে অনেক প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, বইয়ের মত মাল্টিমিডিয়া ও প্রজেক্টরটি বিদ্যালয় পর্যন্ত সরকারি খরচে পৌঁছানোর নিয়ম। কিন্তু টাকা আদায় করার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার আমাদেরকে আসতে বাধ্য করেন। শুধু মাল্টিমিডিয়া ও প্রজেক্টরের খরচ বাবত ৫শ টাকা ছাড়া আমাদের আসা যাওয়াতে কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার শিক্ষকদের জনপ্রতি কমপক্ষে আরও অতিরিক্ত ৩শত টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। শুধু টাকা নয় একটি দিন শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান থেকেও বঞ্চিত করা হলো।
এব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে মালামাল আনতে সরকারি কোন বরাদ্দ ছিলনা। তাহলে ওই পরিবহনের টাকা আপনার পকেট থেকে দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি জানি না এ টাকা কোথায় থেকে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের কাছ থেকে ৫ শত টাকা আদায়ের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com