ঝড়ের তান্ডব: কমলগঞ্জে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ॥ টানা ২২ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিহিন ৩৬ হাজার গ্রাহক
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ চৈত্রের মাঝে কাল বৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে অসংখ্য স্থানে খুঁটি ভেঙ্গে, গাছ পড়ে তার ছিড়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। ঝড়ের সাথে সাথে ভারী বৃষ্টিপাতে কমলগঞ্জে জন জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
৩ এপ্রিল সোমবার ঝড় বৃষ্টির শুরুর আগে বিকাল ৪টা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পর মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত টানা ২২ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিহিন রয়েছে কমলগঞ্জ উপজেলার ৩৬ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক।
কয়েকদিন ধরে হালা ঝড়া আর মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে কমলগঞ্জ উপজেলায়। ধমকা বাতাস শুরু হলেই কমলগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এমনিভাবে সোমবার বিকাল চারটায় ঝড় আর বৃষ্টি শুরুর আগেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত কমলগঞ্জ উপজেলার ৩৬ হাজার গ্রাহক ছিলেন বিদ্যুৎ বিহিন অবস্থায়।
সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত টানা চার দফা ঝড় বয়ে যায় কমলগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটায় আবারও মাঝাড়ি ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এ অবস্থায় কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে, তারের উপর গাছ পড়ে তার ছিড়ে, বৈদ্যূতিক যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে।
সোমবার বিকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় চলমান উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা চার্জার বাতি ও হারিক্যান জালিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল নয়টায় আবারও পরীক্ষার্থীরা ঝড় ও বৃষ্টির মাঝে ভিজে কমলগঞ্জ উপজেলা পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হয়েছে। পরীক্ষার কেন্দ্রে আবার বিদ্যুৎ বিহিন অবস্থায় নিজেরাই সাথে নেওয়া মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করেছে।
কমলগঞ্জ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব কমলগঞ্জ গণ-মহাবিদ্যালয়ের (ডিগ্রী কলেজের) অধ্যক্ষ মো: কামরুজ্জামান মিঞা এ প্রতিনিধিকে বলেন, আসলেই বিদ্যুৎ বিহিন অবস্থায় পরীক্ষার্থীরা আলোর স্বল্পতায় ভোগেছে। তাই মোমবাতি জ্বালিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আলোর ব্যবস্থা করা হয়।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় কমলগঞ্জে বাসা বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আলো ও পানির স্বল্পতায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। বেশীর ভাগই মুঠোফোন বন্ধ ছিল। অনেক ক্ষেত্রে সোলার ও জেনারেটারের মাধ্যমে মুঠোফোন চার্জ দিতে দেখা গেছে। ভারী বৃস্টির কারণে মঙ্গলবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল কম। দিন মজুররাও আবহাওয়ার কারণে ঘর থেকে বের হয়ে কাজে যেতে পারেনি।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) কমলগঞ্জ জোনালের নি¤œমান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ রায় এ প্রতিনিধিকে জানান, গত এক সপ্তাহে কয়েক দফা মাঝারি ঝড়ে উপজেলার কয়েকটি স্থানে ১১ কেভি বিদ্যুৎ লাইনের খুঁটি ভেঙ্গেছে। এসব স্থানে মেরামত কাজ করে মোটামোটি বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়। তবে সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল নয়টা পর্যন্ত কয়েক দফা ঝড় আর বৃষ্টিতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর জানকি ছড়া এলাকায় দুটি বড় আকারের গাছ ভেঙ্গে পড়ে ৩৩ হাজার কেভি প্রধান বিদ্যুৎ লাইনের উপর। গাছ পড়ে সেখানে তার ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে বেশ ক্ষতি সাধন হয়েছে। মঙ্গলবার সকালের ঝড়ে কুলাউড়া উপজেলার রবির বাজার এলাকায় ১১ হাজার কেভি বিদ্যুৎ লাইনের ৬টি খুঁটি ভেঙ্গে পড়ে।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোবারক হোসেন ঝড়ে বৈদ্যুতিক লাইনের ক্ষতি সাধনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চলমান প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝে সঠিকভাবে মেরামত কাজ করা যাচ্ছিল না বলে সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত কমলগঞ্জ বিদ্যুৎ বিহিন ছিল। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকি ছড়ায় তারের উপর পড়ে থাকা গাছ উপসারণ করে বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত করে মঙ্গলবার বেলা ২টায় আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বভাবিক করতে হেয়েছে। তিনি আরও বলেন, অনেক গ্রামাঞ্চলে এখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা যায়নি।
মন্তব্য করুন