টানা বর্ষণে ও পাহাড় ধসে কমলগঞ্জে-শ্রীমঙ্গল সড়ক যোগাযোগ ও সেতু দেবে সিলেটের সাথে সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ

April 6, 2017,

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ তিন দিনের টানা বর্ষণে কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর পাহাড় ধসে কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়ক যোগাযোগে বন্ধ হয়ে যায়। শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় একটি সেতু দেবে সিলেটের সাথে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নদ-নদী ও পাহাড়ি ছড়ার পানি বৃদ্ধি পেয়ে জলাবদ্ধতায় উপজেলার নি¤œাঞ্চলের ৫০০ হেক্টর জমির রোপিত বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রবল বর্ষনে কমলগঞ্জ পৌরসভার ভানুগাছ বাজারের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পৌর এলাকার ভানুগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়মুখী রাস্তায় হাটুপানি ভেঙ্গে শিক্ষার্থীরা স্কুলে গেছে।
তিন দিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর পাহাড় ধসে বুধবার সকাল থেকে কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
৫ এপ্রিল বুধবার বেলা দুইটায় সড়কের উপর থেকে আংশিক মাটি সরিয়ে প্রাথমিকভাবে সিএনজি অটোরিক্সা ও ছোট যানবাহন চলাচল শুরু করলেও বড় যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। ভারী বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সিলেটের সাথে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে বেলা আড়াইটায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ১৪১ কি:মি: বিলাস সেতুর খুটি কিছুটা দেবে গেলে আবারও সিলেটের সাথে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কবির আহমদ জানান, সাতগাঁও সাতগাঁও রশিদপুরের মাঝামাঝি পাহাড়ি এলাকায় ধসের ফলে ঢাকাগামী কারী এক্সপ্রেস ট্রেন শ্রীমঙ্গল, ঢাকাগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন ভানুগাছ স্টেশন ও আখাউড়াগামী ড্যামু সাধারন ট্রেন শমশেরনগর স্টেশনে আটকা পড়েছিল। সকাল ১১টার পর আবারও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে সাতগাঁও আবার রেল সেতুর খুটি দেবে বেলা আড়াইটা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় চট্রগ্রাম অভিমুখী আন্তনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন শমশেরনগর স্টেশনে ও আখাউড়া অভিমুখী কুশিয়ারা এক্সপ্রেস ট্রেন ভানুগাছ স্টেশনে আটকা পড়ে।
শ্রীমঙ্গলস্থ রেলওয়ের গণ-পূর্ত বিভাগের উর্দ্ধতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলী আজম সাতগাঁও পাহাড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে ট্রেন চলাচল দুই ঘন্টা বন্ধ থাকার ও পরে সাতগাঁও রেল সেতুর খুটি দেবে যাবার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সেতু মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।
ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ছড়া, হাওর, বিল, নদী, নালা পানিতে টইটুম্বর হয়ে উঠেছে। ঢলের পানিতে কমলগঞ্জ উপজেলার নি¤œাঞ্চলের প্রায় ৫০০হেক্টর বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। এর মাঝে যেসব জমিতে ধান গজিয়েছিল তা সম্পূর্ণরুপে বিনষ্ট হয়ে গেছে।
পতনউষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা, হালাবাদি, পতনউষার, মাইজগাঁও, চন্দ্রপুর গ্রাম, মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রূপষপুর গ্রাম ও শমশেরনগর ইউনিয়নের সতিঝিরগাঁও, কেছুলুটি এবং ভাদাইর দেউল গ্রামের ব্যাপক এলাকার বোরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে। শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি গ্রামের কৃষক মছদ্দর আলী, বিলাত আলীসহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, এক সপ্তাহে তাদের জমির বোরো ফসল তিন দফা নিমজ্জিত হয়েছে। এর মাঝে গত তিন দিন ধরে বোরো ফসল পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে। কৃষকরা বলেন, প্রায় ২০০ হেক্টর হেক্টর জমির নতুন গজানো বোরো ধান সম্পূর্ণরুপে বিনষ্ট হয়ে গেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: শামছুদ্দীন আহমদ বলেন, বুধবার দুপুর পর্যন্ত তাদের হিসাবে ৪০০ হেক্টর জমির বোরো পসল তলিয়ে গেছে। বিকাল পর্যন্ত এর পরিমাণ বেড়ে ৫০০ হেক্টরেরও বেশী জমির বোরো ফসল তলিয়ে যাবে। মৌলভীবাজারের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো: শাহজাহান বলেন, এ বছর মৌলভীবাজার জেলার সাতটি উপজেলায় ৫৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। বুধবার দুপুর পর্যন্ত সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।
অন্যদিকে ভারী বর্ষণে কমলগঞ্জ উপজেলায় জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে। টানা বর্ষণে বুধবার কমলগঞ্জের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিতি তেমন ছিল না বললেই চলে। শমশেরনগরের অভিভাবক নজরুল ইসলাম খান, আনোয়ার হোসেন বলেন, আবহাওয়ার কারণে তারা ছাত্রদের বিদ্যালয়ে পাঠাননি। যারাই বিদ্যালয়ে গেছে তারা বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। বৃষ্টির কারণে হাট বাজারে মানুষজনের উপস্থিতি খুব কম দেখা গেছে। অনেক দোকানপাঠও খুলেনি। বিশেষ করে খেটে খাওয়া দিন মজুরর ঘর থেকে বের হতে পারেনি বলে কাজেও যেতে পারেনি।
শ্রীমঙ্গলস্থ আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক হারুন-অর-রশীদ জানান, বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কমলগঞ্জে ৮০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com