টানা বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজি ও আমন ধানের ক্ষতি : সবজির বাজার ঊর্ধ্বমূখী : নিন্ম আয়ের লোকজন বিপাকে
ইমাদ উদ দীন॥ তিন দিনের বৃষ্টিতে আগাম শীতকালীন সবজি ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানালেন জেলার ৭টি উপজেলার স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা। টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ধলাই নদীর রক্ষা বাধঁ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গ্রাম। জেলা কৃষি অফিস সুত্রেও জানা গেছে টানা বৃষ্টিতে জেলার ১৩৪ হেক্টর জমির ফসল পানিতে আক্রান্ত। শিগগিরই বৃষ্টি উঠে রোদের আলো দেখা না গেলে ক্ষেতে জমে থাকা পানিতে ফসলে পচন ধরার আশংকা রয়েছে। বৃষ্টির কারণে স্থানীয় ভাবে সবজির যোগান কমে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে বাজার দরেও। টানা এই বৃষ্টির কবলে পড়ে নানা জাতের শাক, সিম, মিষ্টি কুমড়া, ঝিংগা,বাঁধাকপি, ফুলকপি, আলু, জালী কুমড়া আর লাউর দাম বেড়েছে প্রায় দ্বীগুন। গেল দু’ সপ্তাহ থেকে যোগান কম থাকায় এমনিতেই হু হু করে বাড়ছে সবজির দাম। আর বৃষ্টির অজুহাতে ৩ দিন আগের বাজার দরে সাথে মিল নেই আজকের বাজার দর। বিশেষ করে সবজাতের সবজির দাম প্রতিদিনই পরিবর্তন হচ্ছে। ২-৩ জাতের সবজি ছাড়া অন্য সব সবজির দামই এখন ঊর্ধ্বমুখী। বিক্রেতার কাছ থেকে দাম শোনেই মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রেতাদের। মধ্যবিত্ত ক্রেতারা আয়ের সাথে সংঙ্গতি রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার সারতে এখন হিমশিম খাচ্ছেন। জেলার ৭টি উপজেলার সবক’টি খুচরা বাজারে হঠাৎ দাম বেড়েই চলেছে তরিতরকারির। প্রতিদিনই নিত্য প্রয়োজনীয় সবজির দাম বেড়ে চলায় তা নিন্ম আয়ের লোকজনের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে। বাজারদরের সাথে পাল্লাদিয়ে কোলিয়ে উঠতে পারছেন না মধ্যবিত্ত ও নিন্ম আয়ের মানুষ। বাজারদরের চলমান অস্থিরতায় বিপাকে পড়েছেন তারা। আর্থিক অনটনে এখন তাদের খাবারের নিয়মেও ব্যথয় ঘটছে। হঠাৎ সবজি দাম বৃদ্ধিতে সর্বশ্রেণীর ক্রেতারাই হুচুট খাচ্ছেন।
দাম বৃদ্ধিতে তুলনামূলক ক্রেতা কমে যাওয়ায় বিক্রেতারা ব্যবসায়ও লোকসান গুনছেন। গতকাল সরজমিনে মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিমবাজার ও চৌমুহনী এলাকার টিসি মার্কেটে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাথে আলাপে জানা গেল হঠাৎ বাজার দর বেড়ে যাওয়ায় তাদের র্দূগতির কথা। শহরের টিসি মার্কেটের সবজি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম, বাবুল মিয়া, রহিম মিয়া,কামরুল ইসলাম,অমূল্য দাশ ও দীন ইসলামসহ অনেকেই জানান এ ক’দিন থেকে সবজির দাম হু হু করে বাড়ছে। দু’চারটি সবজির দাম স্থিতিশিল থাকলেও বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়েই চলেছে। তারা জানালেন দাম যত বাড়ছে বিক্রি ততই কমে যাচ্ছে। আগের মত বেচা কেনা না হওয়াতে তারা ব্যবসায় লোকসান গুনছেন। আড়ত থেকে অল্প মাল এনে বিক্রি করে ভাড়া ও আনুসাঙ্গিক খরচ শেষে এরকম ব্যবসা দিয়ে পরিবার চালানো তাদের জন্য কষ্ট কর। বাজার ঘুরে দেখা গেল সিম ৮৫ টাকা আগে ছিল ৬০। শসা ৬০ টাকা আগে ছিল ৩৫। মুলা ৪০ টাকা আগে ছিল ২৫। আলু (ললিত) ৪০ টাকা আগে ছিল ২৫। বরবটি ৫০-৬০ টাকা আগে ছিল ৪০। কচুর লতি ৫০ টাকা আগে ছিল ৩০। গাজর ৬০ টাকা আগে ছিল ৩৫। লাউ ছোট,বড় ও মাঝারী ৫০ ,৭০ ও ৯০ টাকা আগে ছিল ৩৫- ৫০ ও ৬৫। মিষ্টি কুমড়া ছোট, বড় ও মাঝারী ৭০, ১০০ ও ১২০ টাকা আগে ছিল ৪০, ৬০ ও ৮০। পটল ৫০ টাকা আগে ছিল ৩০-৩৫। ঝিংগা ৬৫ টাকা আগে ছিল ৪০ টাকা। সিসিনদা ৫৫ টাকা আগে ছিল ৪০। বাঁধা কপি ৫০ টাকা।ফুল কপি ৭০টাকা। কুমড়া ছোট, বড় ও মাঝারী ৫০,৬০ ও ৮০ টাকা আগে ছিল ২৫, ৪০ ও ৫০। করলা ৬০ টাকা আগে ছিল ২৫-৩০টাকা। কারকুল ৬০ টাকা আগে ছিল ৪০ টাকা। লাল শাক প্রতি কেজি ৪৫-৫০ টাকা আগে ছিল ২৫-৩০ টাকা। পুঁই শাক ৪৫ টাকা আগে ছিল ২৫ টাকা। আধা ৯০ টাকা আগে ছিল ৬৫। এছাড়া পেঁপে, কাচঁকলা ও মুকি কেজি প্রতি ৫-১০ টাকা করে বেড়েছে। তবে কাঁচা মরিচ ও বেগুনের দাম কেজি প্রতি কমেছে ১৫-২০ টাকা। ধনীয়া (বাখর পাতা) পাতার দামও কমেছে কেজি ২শ টাকা আগে ছিল ২৫০। টমেটো ৭০ টাকা আগে ছিল ৯০। তবে বাজারে করলা,দেড়েশ,শালগমসহ অনেকজাতের সবজি দেখা মিলছে কম।বিক্রেতারা জানালেন বৃষ্টি উঠলে শীতকালীন মৌসুমী শাক সবজি বাজারে উঠা শুরু হলে সবগুলি সবজির কেজি ৩০-৩৫ টাকার ভেতরে চলে আসবে। তাছাড়া মাছের বাজারে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ টেংরা ও পুটি ছাড়া অনান্য মাছ তেমন না থাকলেও আছে পাঙ্গাস,র্বামিজ রুই, বাউশ, তেলাপিয়া,থাইলেন্ডি মাগুর, যে গুলো কেজি প্রতি আগের চাইতে ৪০-৫০ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে টিসি মার্কেটের মাছ বিক্রেতারা জানালেন। তাছাড়া ব্রয়লার মোরগের মাংসের কেজি ১৫০ টাকা আগে ছিল ১২৫-১৩৫ টাকা, লেয়ার মোরগের প্রতিপিছ ৩৭০টাকা বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানালেন। ক্রেতা রহিম তরফদার, উত্তম কুমার দে, নাঈম আহমদ, আব্দুল মজিদ,বেলাল আহমদ সহ অনেকেই জানালেন হঠাৎ করে যে ভাবে সবজির দাম বেড়েই চলেছে তা আমাদের মত মধ্যবিত্ত ও নিন্ম আয়ের লোকজনকে ৩ বেলা পেট পুরে খেতে পারবেনা। রিকশা চালক কলিম আহমদ, কবির মিয়া ও কামাল মিয়া জানালেন সারাদিন রিকশা চালিয়ে যে টাকা পান তাতে ৫ কেজি চাল কিনার পর পেঁয়াজ, মরিচ আর সবজি কেনার টাকা থাকেনা তার পর আবার নতুন উপদ্রব এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনেষের দাম বৃদ্ধি। মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সুত্রে জানা যায় গেল ৩ দিনের টানা বৃষ্টিতে জেলার মোট ৫০ হেক্টর আমন, ৭০ হেক্টর শাক সবজি, ১২ হেক্টর আলু ও ২ হেক্টর সরিষা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। তবে পানিতে ফসল ডুবে থাকলেও রোদ উঠলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। আবহাওয়ার পরিবর্তন না হলে গোড়া পচা রোগে আক্রান্ত হতে পারে এসকল মাঠের ফসল। তখন ক্ষতির পরিমানও বাড়বে।
মন্তব্য করুন