ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের মহান রুশ বিপ্লব বার্ষিকী পালন
স্টাফ রিপোর্টার॥ ঐতিহাসিক মহান রুশ বিপ্লবের ৯৯-তম বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে লাল পতাকার মিছিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ উপলক্ষ্যে ৭ নভেম্বর সোমবার শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয় হতে লাল পতাকা ও শ্রমিকশ্রেণীর মহান চার নেতা কমরেড মার্কস, কমরেড এঙ্গেলস, কমরেড লেনিন, কমরেড স্ট্যালিনের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে এক বর্ণাঢ্য মিছিল বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল পরবর্তীতে সন্ধ্যার সময় সংগঠনের কার্যালয়ে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি শহীদ সাগ্নিক। আলোচনা সভায় সভায় বক্তারা বলেন ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর রুশ দেশে বলশেভিক পার্টি ও তার নেতা কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে মহান রুশ বিপ্লব সম্পন্ হয়। ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে মহান সর্বহারা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। রুশ বিপ্লব ছিল শ্রমিক শ্রেণীর এক সফল পদক্ষেপ, পৃথিবীর ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। রুশ বিপ্লবের পর রুশ দেশের শ্রমিক শ্রেণী মানুষের উপর মানুষের চাপিয়ে দেওয়া শোষনের চির অবসান ঘোষণা করে শ্রেণীহীন সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সমাজতান্ত্রিক বিনির্মানের পথে যাত্রা শুরু করে। পৃথিবীর ইতিহাসে ইতিপূর্বেকার বিপ্লবগুলিতে শুধুমাত্র এক শোষকের পরিবর্তে আরেক শোষকের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর ঘটেছে, কিন্তু রুশ বিপ্লব অনন্য বৈশিষ্ট সম্পন্ন। নানা কারণে পৃথিবীতে কোন সমাজতান্ত্রিক দেশ না থাকলেও রুশ বিপ্লবের শিক্ষা শ্রমিক শ্রেণীর কাছে চিরস্মরণীয়। আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক ডা. অবনী শর্ম্মা, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ মৃগেন চক্রবর্তী, জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সহ-সভাপতি সহ-সভাপতি আব্দুল আজিজ প্রধান ও সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহিন মিয়া, জেলা রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক দুলাল মিয়া, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, দপ্তর সম্পাদক তারেশ বিশ্বাস সুমন, সদস্য জসিমউদ্দিন, শাহজাহান আলী, কিসমত মিয়া, জসিমউদ্দিন প্রমুখ। দেশের বর্তমান সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় বক্তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন সাম্প্রদায়িকভাবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির বাড়িঘর ও উপসনালয়ে হামলার মূল হোতা হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালরা। সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের নীল নকশা বাস্তবায়নে জনগণকে বিভক্ত ও বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে সময়ে সময়ে সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি করে থাকে। সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের শোষণ-শাসনে শৃঙ্খলিত জনগণ আজ গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছেন। তারা এই দুঃসহ শোষণ-লুন্ঠন ও নৈরাজ্যিক অবস্থা থেকে মুক্তি চায়। জনগণের মুক্তির পথ হল জনগণের তিন শত্রু সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা-দালাল পুঁিজ ও তাদের স্বার্থরক্ষাকারী স্বৈরাচারী সরকার ও রাষ্ট্রকে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে পরিবর্তন সাধন করে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের সংবিধান সভা, সরকার ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এ ভিন্ন মুক্তি আর কোন পথ নেই। তাই আসুন রুশ বিপ্লবের চেতনায় সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল সরকার বিরোধী সকল সংগঠন, শক্তি ও ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দূর্বার আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলি ।
মন্তব্য করুন