ডা. এমএ মতিন : একজন দিলখোলা মানুষ

May 23, 2020,

সায়েক আহমদ॥ এক বর্নাঢ্য জীবনের অধিকারী ডা. এমএ মতিন চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। বাংলাদেশের গড় আয়ুর চেয়েও বেশি আয়ু তিনি পেয়েছিলেন। তারপরও তার মৃত্যুতে মৌলভীবাজার জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ হারালো একজন অভিজ্ঞ অভিভাবককে। আমরাও হারালাম জেলার একজন কৃতি সন্তানকে।
জানা যায়, ডা. এমএ মতিন শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতায় ভূগছিলেন। অবশেষে গত ২২ মে, শুক্রবার সকালে করোনা উপসর্গ নিয়ে তাকে সিলেটের ড. শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর রাত ৯টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ২৩ মে, শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সিলেটের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান জানান, শুক্রবার ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে তার নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র জানান, করোনা পরীক্ষার জন্য মৃত্যুর আগেই ডা. মতিনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, রাত ১টার দিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ডা. এমএ মতিনের দাফন সম্পন্ন করা হয়। দাফন কাজে সহযোগিতা করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
এ নিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে সিলেট বিভাগে মোট ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ৫ এপ্রিল সিলেটে প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন ডা. মঈন উদ্দিন। এবার করোনা ভাইরাস চিরতরে স্তব্ধ করে দিল আরেকজন স্বনামধন্য চিকিৎসককে।
মৌলভীবাজার জেলাবাসীর জন্য একটি দুঃসংবাদ যে, এ জেলায় কভিড-১৯ রোগে প্রথম মৃত্যুবরণ করলেন একজন জনপ্রিয় চিকিৎসক। এর আগে সিলেট জেলায় আটজন, হবিগঞ্জ জেলায় একজন ও সুনামগঞ্জ জেলায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এক সময় মৌলভীবাজার জেলার সিভিল সার্জন হিসেবে ডা. এমএ মতিন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। মৌলভীবাজার জেলার স্বাস্থ্য বিভাগকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য এক উচ্চতায়। সে সুবাদে জেলার নাগরিকদের সাথে তার একটি আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। মৌলভীবাজার জেলায় তার জনপ্রিয়তা সেটাই প্রমাণ করে। পরবর্তীতে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ম্যালেরিয়া কন্ট্রোল) হিসেবেও তার দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। দীর্ঘ চাকরী জীবনে মৌলভীবাজার জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
শমশেরনগর এএটিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন মেধাবী ছাত্র ডা. এমএ মতিনের শৈশব কেটেছে শমশেরনগরে। তার বড়ভাই বশিরউদ্দিন আহমদ ছিলেন শমশেরনগরের একজন স্বনামধন্য প্রধান শিক্ষক। কমলগঞ্জ উপজেলার প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব শমশেরনগরের হাজী মোহাম্মদ উস্তওয়ারের দু মেয়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন দুভাই। এ কারণে শমশেরনগরের মাটি ও মানুষের সাথে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন ডা. এমএ মতিন।
প্রধান শিক্ষক বশিরউদ্দিন আহমদ এবং ডা. এমএ মতিনের বাসাটি ছিল আমাদের বাসার উল্টোদিকে। আমার খালা মুহিব্বাতুল আম্বিয়ার সহপাঠি ছিলেন ডা. মতিন। তবে চাকুরীর সুবাদে মাঝে মাঝে শমশেরনগর আসতেন তিনি। তার বড়ছেলে শরীফ আহমদ এবং প্রধান শিক্ষক বশিরউদ্দিন আহমদ এর বড় ছেলে সরওয়ার জামান রানা ছিল আমার সহপাঠি। তার দ্বিতীয় ছেলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সাঈফ আহমদ এবং একমাত্র মেয়ে রাবেয়া মুন্নীর সাথেও অন্তরঙ্গ সম্পর্কই ছিল। ডা. মতিনের সহধর্মিনীও অত্যন্ত স্নেহ করতেন।
২০০০ সাল থেকে ১০ বছর সময় আমি কাটিয়েছি মৌলভীবাজার জেলা শহরে। ডা. মতিনের বাসাও তখন ছিল জেলা সদরের পশ্চিমবাজারে। সে সুবাদে তখন থেকে তার সাথে অন্যরকম সম্পর্ক তৈরি হল। আমি ভাবতেও পারিনি তিনি এত দিলখোলা মানুষ। মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হতাম পুত্রের বয়সী হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমার সাথে বন্ধুর মতই চলতেন। আসলে তিনি সবার সাথেই অত্যন্ত বন্ধুসুলভ আচরণ করতেন। তার অমায়িক ব্যবহার সবাইকে মুগ্ধ করত। তার কথা বলার ভঙ্গি, মানুষকে সম্মোহিত করার আশ্চর্য গুণ আমার কাছে সব সময় অবাক লাগত। কঠোর স্পষ্টবাদী ডা. মতিন সরাসরি যে কোন মতামত ব্যক্ত করে ফেলতেন। তার যুক্তির কাছে সবাইকে বারবার পরাস্ত হতে দেখেছি। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি ছিলেন একজন উদার মনের মানুষ। সবসময় হাসিখুশি থাকতেন। যখন আড্ডা দিতেন প্রাণখোলা ভঙ্গিতেই আড্ডা দিতেন। তার স্বতঃস্ফূর্ত কথাবার্তা সবার মনেই খুশির আমেজ সৃষ্টি করত।
ডা. মতিনের সাথে আমার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ট হয় শমশেরনগর উপজেলা আন্দোলন বেগবাগ করার সময়। তখন শমশেরনগরকে পাশ কাটিয়ে উসমানগড় উপজেলা করার তোড়জোড় আয়োজন চলছিল। এক সময় মনে হয়েছিল উসমানগড় উপজেলা গড়ার কারিগরদের কাছে শমশেরনগরবাসী কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। শমশেরনগর অবস্থানকালে কবি শহীদ সাগ্নিককে সভাপতি ও আমাকে সম্পাদক করে গঠন করা হয়েছিল শমশেরনগর উপজেলা বাস্তবায়ন যুব সমন্বয় কমিটি। শমশেরনগর উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির আন্দোলনের পাশাপাশি যুব সমন্বয় কমিটিও বেশ ভূমিকা রাখছিল। কিন্তু আমি মৌলভীবাজার চলে আসায় যুব সমন্বয় কমিটি কিছুটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। তখনকার কথা চিন্তা করে আমি মৌলভীবাজারে অবস্থানরত অধ্যাপক আব্দুল লতিফের সাথে এ বিষয়ে মত বিনিময় করি। পরবর্তীতে ডা. এমএ মতিনের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করতেই তিনি লাফ দিয়ে উঠেন। তখন বুঝেছিলাম শমশেরনগরের প্রতি তার দুর্বার আকর্ষণ। অবশেষে তড়িৎগতিতে শমশেরনগর উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির মৌলভীবাজার জেলা শাখা গঠন করা হয়। সে কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ডা. এমএ মতিন। সভাপতি হিসেবে আমি এবং সম্পাদক হিসেবে অধ্যাপক আব্দুল লতিফ সহ জেলা সদরে অবস্থানরত আমরা কয়েকজন বেশ গতিশীল আন্দোলন গড়ে তুলি।
প্রতি সপ্তাহে আমরা একবার বসতাম। আমাদের কর্মপরিকল্পনা স্থির করতাম। শমশেরনগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে শমশেরনগর উপজেলা বাস্তবায়ন আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করতাম। পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের দায়িত্ব পড়েছিল আমার উপর। আমি সে দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করি। প্রতিটি নিউজ ছাপা হলে ডা. মতিনকে দেখাতাম। তিনি প্রচণ্ড উৎসাহিত হতেন। মূলত আমরা অনেকটা মিডিয়া ক্যূ এর মাধ্যমে শমশেরনগর উপজেলা বাস্তবায়ন আন্দোলনকে তীব্র শক্তিশালী করে তুলি। তখনকার সময়ের মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক মনুবার্তা, সাপ্তাহিক পাতাকুড়ির দেশ, সিলেটের দৈনিক যুগভেরী, দৈনিক সিলেটের ডাক, দৈনিক সিলেট কণ্ঠ, দৈনিক জালালাবাদ, ঢাকার দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, দৈনিক মানবজমিনসহ অনেক পত্রিকাই আমাদের সংবাদগুলো গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করায় আমরা উসমানগড় উপজেলা আন্দোলনকে অনেকটা কোনঠাসা করে ফেলি। এ ব্যাপারে ডা. মতিন সবসময়ই ছিলেন অত্যন্ত সিরিয়াস।
তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি সরকার। শমশেরনগর উপজেলা আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন ছিল অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের। তাঁর সহধর্মিনীও আমাদেরকে সমর্থন করতেন। আমরা স্থির করলাম অর্থমন্ত্রীর সাথে একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ করা যায় কি না সে চেষ্টা করি। মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সম্পাদক ফয়জুল করিম ময়ূন ছিলেন অর্থমন্ত্রীর ডান হাত। ডা. মতিন থাকতেন ময়ূন সাহেবের দোতলায়। কাজেই পূর্বপরিকল্পনামত ডা. মতিন, অধ্যাপক লতিফ এবং আমি গেলাম ময়ূন সাহেবের বাসায়। ঘটনাচক্রে তখন উপস্থিত হলেন ডা. মতিন সাহেবেরই ভাগ্নে এডভোকেট মানিক উদ্দিন। তিনি আবার উসমানগড় উপজেলার ঘোর সমর্থক। তার সাথে আরো দুজন ছিলেন। ময়ূন সাহেবের সামনে শমশেরনগর উপজেলা প্রসঙ্গে আলোচনা উঠতেই মানিকউদ্দিন এর বিরোধিতা করলেন। সাথে সাথেই গর্জে উঠেন ডা. মতিন। সেদিন ডা. মতিনের রুদ্ররূপ দেখে আমি এবং অধ্যাপক লতিফ হতবাক হয়ে যাই। শুরু হয় তীব্র বাক বিতণ্ডা। ময়ূন সাহেব খুব চেষ্টা করছিলেন বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য। কিন্তু অবস্থাটা প্রায় হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল। অবশেষে অনেক কষ্টে আমি এবং অধ্যাপক লতিফ ডা. মতিনকে সংযত করতে সমর্থ হই। সেদিনই বুঝলাম শমশেরনগরের প্রতি রয়েছে তার অপার ভালবাসা। এজন্য তিনি শমশেরনগর উপজেলা আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য আমতলী বাজার, মনু, টিলাগাও, হাজিপুর, পতনঊষার ইত্যাদি স্থানে গিয়ে মিটিংও করেছিলেন। উল্লেখ্য, তখন কানিহাটী উপজেলা বাস্তবায়নের জন্যও আরেকটি আন্দোলন চলছিল। এজন্য ত্রিমুখী আন্দোলনে সবকিছুই শেষমেষ বানচাল হয়ে যায়। শমশেরনগর উপজেলা বাস্তবায়ন আন্দোলনও স্তিমিত হয়ে পড়ে।
ডা. এমএ মতিন শুধু শমসেরনগরের উন্নয়নের একজন নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি ছিলেন না। মৌলভীবাজার জেলায় বসবাসকারী কমলগঞ্জ উপজেলার অধিবাসীদেরকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সে কমিটির সভাপতি হিসেবেও ২০১৭ সাল পর্যন্ত ডা. মতিন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ডাক্তার হিসেবেও ডা. মতিন ছিলেন অত্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ একজন ব্যক্তিত্ব। রোগী কত টাকা ভিজিট দিল এতে তার কোন মাথাব্যথা ছিল না। অনেক সময় অস্বচ্ছল রোগীদেরকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবাসহ ঔষধ প্রদান করতেও দেখেছি তাকে। তবে সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে ২০১৭ সালের এক বিকালবেলা তিনি শহরের মুসলিম কোয়াটার এলাকা দিয়ে রিকশাযোগে বাসায় যাচ্ছিলেন। তখন একটি দ্রুতগামী টমটম তার রিকশাকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে স্থানীয় লোকজন মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে তার অবস্থার অবনতি হয়। পরে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঐ দূর্ঘটনায় তার তার এক হাত ও পা ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু ডা. এমএ মতিনকে গুরুতর অবস্থায় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার চিকিৎসা দিতে বিলম্ব করেন। জানা যায় কর্তব্যরত ডাক্তার তখন বই পড়ায় ব্যস্ত ছিলেন। অথচ এই হাসপাতালেই তিনি দীর্ঘদিন সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
আমি শ্রীমঙ্গলে আসার পর থেকে ডা. মতিনের সাথে যোগাযোগটা কমে যায়। পরবর্তীতে দায়িত্বের কারণে তার সাথে আর তেমন দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। তবে মানুষ হিসেবে ডা. মতিনকে কাছ থেকে যতটুকু দেখেছি ততই মুগ্ধ হয়েছি।
সিলেট বিভাগের অধিবাসীদের দূর্ভাগ্য যে, আমরা যে ১২ জনকে করোনা ভাইরাসের কারণে না ফেরার দেশে চলে যেতে দেখেছি তাদের প্রথমজনই ছিলেন একজন চিকিৎসক। শেষ ব্যক্তিটিও একজন চিকিৎসক। ডা. এম এ মতিন ছিলেন মৌলভীবাজার জেলাবাসীদের গর্ব। তার মৃত্যুতে মৌলভীবাজার জেলার স্বাস্থ্যবিভাগে যে অপূরণীয় ক্ষতি হল, তা সহজে পূরণ হবার নয়। আমরা কায়মনোবাক্যে ডা. এমএ মতিনের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। যদিও তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে, কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, তিনি বারবার আমাদের মনোজগতেই বিচরণ করবেন।
[সায়েক আহমদ, প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক, শিশু সাহিত্যিক, ০১৭১২৯৬২৩৯৩]

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com