ডা. জয়নাল আবেদীন টিটুর বদলিতে কাঁদছে শ্রীমঙ্গলবাসী
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়নাল আবেদীন টিটোর বদলির আদেশ সংক্রান্ত তথ্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌছার পর উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ এবং হতাশা বিরাজ করছে। বদলির আদেশ বাতিল করে কর্মস্থলে বহাল রাখার দাবিতে সোচ্চার এখন শ্রীমঙ্গলবাসী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিবাদে সোচ্চার উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ। অবিলম্বে ওই বদলীর আদেশ প্রত্যাহার করা না হলে আন্দোলনে যাবারও ঘোষণা আসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলাবাসীর ব্যানারে সর্বস্তরের মানুষ এক বিশাল মানববন্ধন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে আয়োজক সুত্রে জানা যায়। শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়নাল আবেদীন টিটুর বদলিতে কাঁদছে শ্রীমঙ্গলবাসী। কিছুতেই যেন তারা তাঁর আকস্মিক এ বদলি মেনে নিতে পারছেন না। বিশেষ করে তার এ বদলির খবরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীসহ দরিদ্র রোগীরাই বেশি কষ্ট অনুভব করছেন।
ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো ২০১৫ সাল থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে সততা ও নিষ্টার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। পর্যটন নগরী ও চা অধ্যুষিত শ্রীমঙ্গল উপজেলার উন্নত চিকিৎসার আশ্রয়স্থল শ্রীমঙ্গল সরকারি হাসপাতালে ছুটে আসা মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে মাত্র তিন বছরে সকলের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো। দূর-দুরান্ত থেকে আগত রোগীদের শত ছাপ, যন্ত্রণা কটুবাক্যেও কখনো রাগ, অভিমান ও বিচলিত হতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তিনি হাসি মুখে সকলকে চিকিৎসা সেবা দিতেন পরম আদর ও স্নেহে। তার এসব গুণাবলির কারণে ইতেমধ্যে তিনি শ্রীমঙ্গলের অসহায় গরীব মানুষের মাঝে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন।
স্থানীয় মানুষের মুখে শুনা যায়-ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো শুধু একজন ডাক্তারই নয়; তিনি সাধারণ মানুষের একজন সেবক। একজন মহৎ মানুষও। তাকে স্থানীয়রা দিন-রাত নিজেদের সুখে-দুঃখে পাশে পেয়েছে। শিশুদের নানা রকমের সমস্যসহ সব ধরণের রোগে স্থানীয়রা তাকে পাশে সবসময় পাচ্ছেন বলে জানান। তাঁর সুন্দর ব্যবহারে অসুস্থ রোগীর অর্ধেক রোগ সুস্থ হয়ে যায়। তিনি গরীব রোগীদের থেকে কখনই ফি নেননি। এমনকি সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের পর্যাপ্ত সময় নিয়ে রোগী দেখেন, রোগীর সাথে সুন্দর আচরণ করেন, গরীব হলে নগদ টাকাসহ নানা ধরণের সাহায্য সহযোগীতায় এগিয়ে আসেন। একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে সকলের কাছে অনুকরণীয় ও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেন তিনি। শুধু তাই নয় তিনি যেন এখন এ উপজেলাবাসীর প্রাণের স্পন্দনে পরিণত হয়েছে। অক্সিযেন ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না তেমনি ডা টিটো এখন এ উপজেলাবাসীর কাছে বিকল্প অক্সিজেনে পরিণত হয়েছেন।
আকস্মিক তার বদলির খবরে হতাশ হয়েছেন এলাকাবাসীসহ সর্বরের মানুষ। ক্ষোভ, প্রতবাদের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। শহর, শহরতলীসহ উপজেলা ও আশপাশের অঞ্চল সর্বত্রই চলছে আলোচনা। সাধারণ মানুষের দাবী যে, তিনি ছিলেন সৎ, কতর্ব্যপরায়ণ, দায়িত্বশীল, রোগী বান্ধব, পরোপকারী, নির্লোভ ও নিরহঙ্কার। একজন রোগী বান্ধব ডাক্তারকে অন্যত্র বদলি করা মোটেও উচিত নয় বলে মন্তব্য করছেন স্থানীয়রা। তাই বদলীর আদেশ প্রত্যহার করে ডাক্তারের বর্তমান কর্মস্থলে বহালের জোর দাবী জানান স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
ডা. জয়নাল আবেদীন বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের পর থেকে শ্রীমঙ্গল সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির পথ তিনি বন্ধ করে দেন। অন্যায় অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। তাঁর নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাত-দিন ডাক্তাররা নিরলসভাবে রোগীদের সেবায় ছিলেন তৎপর। ২০১৮ সালে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জরুরি প্রসূতি সেবায় অবদান স্বরুপ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। মাতৃস্বাস্থ্য ও প্রসূতি সেবায় পর পর তিনবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পুরষ্কার পেয়েছে। যার কৃতিত্ব ডা. জয়নাল আবেদীন টিটোর। ২০১৮ সালে নরমাল ডেলিভারিতে সিলেট বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে শ্রীমঙ্গল সরকারি হাসপাতাল। তিনি যোগদানের পর থেকে সরকারী হাসপাতালের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। বহিঃবিভাগের রোগীর সংখ্যাও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্তব্যরত ডাক্তার নার্সদের তিনি সব সময় উদ্বুদ্ধ করেন, রোগীদের সাথে যেন সম্মানজনক আচরণ করা হয়। পর পর তিবার মাতৃমৃত্যু অর্ধেকের চেয়ে নিচে নেমে এসেছে। প্রসূতির বাড়ি বাড়ি গিয়ে নামের তালিকা কার্যক্রমেও তিনি ছিলেন সক্রিয়। হাপাতাল ভেতরের মসজিদে রোগীদেও নামাজ পড়ার সুবিধার্তে মসজিদ বৃদ্ধি ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শুরু করেছেন তিনি।
এ দিকে বদলি প্রসঙ্গে ডা. জয়নাল আবেদীন টিটু বলেন, দীর্ঘদিন শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ছিলাম, সাধারণ মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। চেষ্টা করেছি রোগীদের আন্তরিক সেবা দিতে। চা-বাগানের গরীব মানুষদের মাঝে বেশি গিয়েছি। ছুটির দিনও চাশ্রমিকদের শারীরিক খোঁজ খবর নিতে চলে যেতাম। কোথাও সড়ক দুর্ঘটনার খবর শুনলে উপজেলার ভেতরে থাকলে সব কাজ ফেলে ছুটে আসতাম তাদের সেবায়। ফোন করে ডাক্তারদের প্রস্তুত করতাম। এ এলাকার মানুষের মাঝে একটি আন্তরিক সম্পর্ক তৈরী হয়েে গেছে। এখন দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় বদলির অর্ডার হয়েছে। সাধারণ মানুষের এতো ভালোবাসার ব্যাপারে ডা. টিটু বলেন, আমি প্রথম থেকেই মনে করতাম আমি সার্ভিস দিতে এসেছি, এতে করে আমি এতো বেশি জনপ্রিয়তা পাবো, সেটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। আমি মানুষকে ভালোবাসাটাকে আমার কর্তব্য মনে করেছি, তারা আমাকে প্রতিদান দিচ্ছে। আমি মনে করি আন্তরিকভাবে কাজ করলে প্রতিদান দেওয়া যায়, মানুষের, দেশের ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন করা সম্ভব। ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ২৮তম ব্যাচে এমবিবিএস পাস করেন। তারপর এফসিপিএস পার্ট ওয়ান করেন েেমডিসিনে এবং এমডি পার্ট ওয়ান করেন কার্ডিওলজিতে। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলায়। ডাক্তার জয়নাল আবেদীন টিটোর বদলীর আদেশ প্রত্যাহারে জেলা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। তাঁর এ বদলী রআদেশ কোনোভাবেই মানতে চা না শ্রীমঙ্গল উপজেলাবাসী। তাকে বর্তমান কর্মস্থলে বহাল রাখার জোর দাবী উপজেলাবাসীর।
মন্তব্য করুন