তাৎক্ষনিক বিশ্লেষনঃ করবিনের বীনেই ঝুলল ব্রিটেনের পার্লামেন্ট
মুনজের অাহমদ চৌধুরীঃ
অাজকের ফলাফল অার ঝুলন্ত সংসদ ফের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করবে ব্রিটেনে। অন্তত কিছুুদিনের জন্য হলেও। নির্বাচনে হেরে বড় চাপের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে।
একজন জেরেমি করবিনের মতো নেতা এখনো অনায়াসে একটি শক্তিশালী সরকারকে থমকে দিতে পারেন। ব্রিটেনের নির্বাচনের অাজকের ফলাফলে এটিই প্রমানিত হয়েছে। ব্রিটেনের মানুষ যে সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী নীতি সহ কিছু ক্ষেত্রে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন,তারও প্রমান এ নির্বাচন।
তবে ভোটাররা যে এখনো ব্রেক্সিটের পক্ষে তা প্রমান করে দল হিসেবে কনজারভেটিভের সংখ্যাগরিষ্টতা। ভোটাররা মনে করেছেন,সব থেকে ভাল ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের জন্য কনজারভেটিভের বিকল্প নেই। অাবার মাত্র কয়েকটি অাসনের জন্য তাদের এককভাবে অাস্থায়ও নিতে পারেন নি ভোটাররা সেটিও বাস্তবতা। এখন কোয়ালিশন সরকারের হাত ধরে থেরেসার অাগের পরিকল্পিত ব্রেক্সিট কিভাবে বাস্তবায়ন হয় সেটিই দেখবার বিষয়।
লেবার লিডার জেরেমি করবিন তাঁর কূশলী নেতৃত্বের শৈলীতেই শুরু থেকে ই অনেক এগিয়ে থাকা থেরেসার কাধে নিঃশ্বাস ফেলতে পেরেছেন। অাটকে দিয়েছেন কনজারভেটিভের একক সরকার গঠন। লেবার লিডার হিসেবে প্রতিকূলতার উজানে এটি অবশ্যই তার একক সাফল্য। অন্যদিকে, গত ১৮ই এপ্রিল নিশ্চিত জয়ের যে মনোবল থেকে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা নির্বাচনের ঘোষনা দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর রাজনৈতিক বাজিতে হেরে গেছেন মূলত পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারনে। নির্বাচন ঘোষনার পর গত একমাসে দুদফায় ব্রিটেনের চার স্থানে জঙ্গি হামলায় নিরীহ ব্রিটিশদের হত্যার মিছিল ব্রিটেনের ভোটের হিসেবে প্রভাবকের ভুমিকায় অবতীর্ন হয় ,সন্দেহাতীত ভাবেই। এ হামলায় নিরাপত্তা ব্যার্থতার দায় স্বাভাবিকভাবে ই সরকারী দল এড়াতে পারেনি। এ কারনেই শেষ বেলায় একক জয়ের বন্দর থেকে দুরে সরে যায় কনজারভেটিভ। তারপরও অাজকের ফলাফলে প্রমান হয়েছে,কনজারভেটিভই বৃটেনের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল।
লেবারের শেষ বেলায় জোরালো প্রতিদ্বন্দীতায় উঠে অাসার মূল কারন করবিনের ক্যারিশমা। তবে দল হিসেবে লেবার পার্টি কনজারভেটিভের সরকারে নানা ক্ষেত্রে ব্যার্থতা,মেনিফেষ্টোর সীমাবদ্ধতা,সাম্প্রতিক নিরাপত্তা ব্যার্থতার মতো ইস্যুগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে লেবারের ই সরকার গঠনের কথা ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি মওকুফ,এনএইচএস বা সেবাখাতে লেবারের প্রতিশ্রুত বাজেট বৃদ্ধির মেনিফেষ্টো ভোটারেরা যে অাস্থায় নেননি সেটা প্রমান হয়েছে শুক্রবারের ফলাফলে। বাড়তি অর্থের জোগান কোথা থেকে অাসবে এ শঙ্কার পাশাপাশি গত লেবারে অামলের অর্থনৈতিক ব্যার্থতার শঙ্কামুক্ত হতে পারেননি ভোটাররা। করবিন এককভাবে নেতা হিসেবে উৎরে যেতে পারলেও এ যাত্রাতেও লেবার পার্টির না পারবার অন্যতম কারন দলটির অগোছালো পরিস্থিতি।
এ নির্বাচনটি মূলত ছিল ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে জনগনের ম্যান্ডেট অর্জনের নির্বাচন। কিন্তু ঝুলন্ত পার্লামেন্ট কতটা সফলভাবে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় থাকবেই।
তবে লেবারের পুনঃ পরাজয়ের ব্রেক্সিটই একমাত্র কারন নয়। লেবারের যে এমপি প্রার্থীরা এবারের নির্বাচনে লড়ছেন, তাদের বেশিরভাগ, ব্রেক্সিটের গনভোটে রিমেইনের পক্ষে ক্যাম্পেইন করে হেরেছেন। গত বছরের ২৩ জুন থেকে এ বছরের ৮জুন। মাঝখানের সময়টা সল্পতার নিরিখেই ভোটারদের ভুলবার সুযোগ ছিল না। দল হিসেবে লেবার পার্টি অারেকটু গোছানো অবস্থানে থাকলে ফলাফল পাল্টে যেতে পারত।
অার দুনিয়াজুড়ে নগ্ন জাতীয়তাবাদের জয়- জয়কার। সে ধারা থেকে ব্রিটিশ ভোটাররাও বেরিয়ে অাসতে পারেননি।
অাজকের ফলাফলের পথ বেয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে কনজারভেটিভ। এরমধ্যে এবার সহ দুই মেয়াদে কোয়ালিশন,অার একবার একক। এবারও যদি ব্রুট মেজরিটি পেত কনজারভেটিভ তবে সরকার অালটিমেট এন্ড এবসলিউট পাওয়ার পেত। যেটিই ছিল থেরেসা মের এবারের নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য। কনজারভেটিভ বড় ব্যবধানে একক সংখ্যাগরিষ্টতা পেলে বিরোধী দল হিসেবে লেবার পার্টি অারো বড় বিপর্যয়ে পড়ত। এখন অাগামী কোয়ালিশন সরকার কতটা সংহতভাবে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে পারে সেটি ই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি জঙ্গিবাদ মোকাবেলা ও এ ক্ষেত্রে অাদৌ পররাষ্ট্রনীতির কোন পরিবর্তন অাসে কি না সেটিই দেখবার বিষয়।
তিন বাঙ্গালী কন্যা যে পুনঃনির্বাচিত হবেন তা গত ৬ই জুনের লেখাতেই উল্লেখ করেছিলাম।
এককভাবে সরকার গঠন করতে হলে ৬৫০টি সংসদীয় অাসনের মধ্যে করজারভেটিভকে জিততে হত ৩২৬টি অাসনে। গত নির্বাচনে কনজারভেটিভ ৩৩০ অার লেবার পার্টি ২২৯ টি অাসনে জেতে।
লন্ডন সময় শুক্রবার সকাল অাটটায় এ লেখাটি যখন লিখছি,তখনও চারটি অাসনের ফলাফল ঘোষনার বাকী। ঘোষিত বাকী ফলাফলে কনচারভেটিভ পেয়েছে ৩১৫টি অাসন। লেবার ২৬১। লিবডেম জয় পেয়েছে ১২ টিতে। এসএনপি ৩৫ টিতে। অন্যান্য দলগুলো জিতেছে ২৩ টি অাসনে।
একটু ভিন্নভাবে বললে,থেরেসা মে র সাংবিধানিকভাবে এ নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় থাকার সুযোগ ছিল। কিন্তু,তারপরও তিনি ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে জনরায়ের তাগিদে নির্বাচন দিয়েছিলেন। কিন্তু,বাংলাদেশে সরকার প্রধানরা মেয়াদের এক মুহুর্ত অাগে যে ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নন,সেটি তারা বক্তৃতাতে ই বলেন।
মুনজের অাহমদ চৌধুরী,যুক্তরাজ্য বসবাসরত সাংবাদিক,সংবাদ বিশ্লেষক
মন্তব্য করুন