ত্রিকালদর্শী-দেশের প্রবীনতম আইনজীবী এডভোকেট সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন এর মহাপ্রস্থানঃ সশ্রদ্ধঃ শ্রদ্ধাঞ্জলিঃ রুহের মাগফিরাত কামনা
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ কুল্লিন-নাফসীন- জ্যায়িকাতুল মউত”- জগতের সকল প্রাণীকেই একদিন মৃত্যোর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে- ইসলামী আইনের প্রথম ও প্রধান উৎস মহা পবিত্র আল কোরআনের এই বানী চীরন্তন ও শ্বাস্বত সত্য হলেও এজন সদ্য মূর্দার স্বজনগণ একটি শোকাবহ মৃত্যো সংবাদকে সহজ ও স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারেন না। মৃত্যো সংবাদ ও লাশকে কেন্দ্র করে কান্নার রোল উঠে। আকুল কান্নায় ব্যাকুল হন মরহুমের স্বজন-সূজন-শুভাকাংখীগণ।
বৈশ্বিক ব্যাধি কোভিড নাইনটিনে বিশ্বস্ব্যাস্থ সংস্থা বেহাল- মানব সভ্যতা ও মানব জাতি টালমাটাল। ভয়াল ভাইরাস করনা-আক্রান্তি ও মৃত্যোর সংখ্যা বাড়ছে হুহু করে। দুনিয়া জোড়া করনা আক্রান্তের সংখ্যা দুই কোটি মানুষেরও অধিক এবং মৃতের সংখ্যা সাত লক্ষ পঁচিশ হাজার ছাড়িয়ে গেলেও ডাবলিউ.এইচ.অ.কিংবা দুনিয়ার কোন খ্যাত নামা ঔষধ কোম্পানি কিংবা কোন চিকিৎসা বিজ্ঞানী জ্ঞানী গুনী পন্ডিত জন ভয়াল ব্যাধি ভাইরাস করনার প্রতিশেধক কিংবা রোগ নিরাময় এর জন্য একটি ট্যাবলেট কিংবা এক কাতরা মিকচার আবিষ্কার করতে পারেন নি বরং বাংলাদেশের সাহেদ-সাবরিনারদের মত নর-নারী-পশু মানুষের অসুস্থতা ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে চিকিৎসার নামে প্রতারনা-প্রবঞ্চনা-তঞ্চকি করে অর্থকড়ি হাতিয়ে নিচ্ছে। অবশ্য দেশের আইন শৃংখলা রক্ষা কারি বাহিনী বিশেষত কমবাইন্ড এলিট ফোর্স-রে্যব-প্রশংসনীয় ভাবে তাঁদের পেশাদারি দায়িত্ব পালন করতঃ এসব হৃদয়হীন পাষান-প্রতারক-বেঈমান-বেহায়া ও বেলিয়াজ ডাক্তারনি গংকে আইনের আওতায় এনেছেন-জাতির আস্থা ও প্রশংসা প্রাপ্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশ বিমান, বেসামরীক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচক-এর অবিবেচনা প্রসূত অসৎ কার্য্য কলাপ ও দায়িত্বহীনতার কারনে চীনের উহান এ উৎপত্তি হয়ে বিশ্বব্যাপী হানা দেয় ছোঁয়াছে ব্যাধি কোভিড নাইনটিন। চিকিৎসা বিজ্ঞানী এবং আমাদের মত আম আদমি-দেরও মতে রোগ প্রতিরোধেই সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা- তথা নিরাপদ দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা উচিত।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী বিভাগ-পীরানে পীর-ইয়েমেনী বীর হযরত শাহ জালাল এর স্মৃতি ধন্য পূন্যভূমি সিলেট-দেশ-বিদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন কোন দ্বীপ নয়, একটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, সড়ক পথে সমগ্র দেশের সঙ্গেঁ যোগাযোগ, একদিকে ভারতীয় সীমান্ত ফলতঃ প্রবাসি অধ্যুসিত সিলেটে ভাইরাস করনার অনু প্রবেশে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ফলতঃ সমগ্র বিভাগ ব্যাপী আতংক-উত্তেজনা না থাকলেও ফলগু ধারার মত একটি নীরব ভীতি কাজ করছে নর-নারী-সকলেরই মনে মনে। দেশব্যাপী করনা আক্রান্তির পর যেকোন মৃতোকেই করনার মৃত্যো বলে অনেকেই ভয় ভিতির মধ্যে আছেন। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ দের ভাস্যানুসারে শিশু ও বৃদ্ধ বয়সীগণ ভাইরাস করনার টার্গেট। শিশু ও বৃদ্ধদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম বলে কষ্ট দায়ক ব্যাধি করনা শিশু ও বৃদ্ধদেরকে কাবু ও কাহিল করে প্রাণ সংহার ও করে নেয়। ফলতঃ আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের সাম্প্রতিক সময়ে লক ডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসলেশন, সাশিয়্যাল ডিসটেন্স জাতীয় বাক্যের নূতন প্রচলন শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন বার্ধক্য জনিত দূরারোগ্য কঠিন ও জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত সত্তরোর্ধ এই আমি, ঢাকাই ডাক্তার সাহেবদের কাছে ত্রৈমাসিক চেক আপ, নিয়মিত ঔষধ সেবন, তাবিজ, কবজ, জমজমের পানি পান, সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত সহ দোয়া দূরূদ, তেল তেরাপির মাধ্যমে ইয়ানফসি ইয়ানফসি করছি, নফল রোজা রাখছি, দোয়া দূরূদ করছি, শুধু আমার নিজের জন্য নয়; আমার সংসার, সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য ও।
ফলতঃ বিগত প্রায় পাঁচ মাস যাবত অঘোষিত স্বেচ্ছাগৃহ বন্দী আছি। পিতা মাতা কেউ বেঁচে নেই, পিতা মাতার প্রথম সন্তান হিসাবে বড় কোন ভাইও নেই, পিতা-মাতা বেঁচে থাকলে তাঁরা তাঁদের এই অসহায় ছাওয়ালের জন্য দোয়া করতেন। জেলা ও দেশব্যাপী মৃত্যোর মিছিল চলছে। জাতীয় ভাবে সিলেটের গৌরব প্রফেসর ডক্টর জামিলুর রাজা চৌধুরী সহ অনেক জ্ঞানী গুনীকে আমরা হারিয়েছি। আমাদের জেলা এলাকায় সাম্প্রতিক মৃত্যোর মিছিলের প্রিয় মুখ এর মধ্যে বিভাগের প্রবীন চিকিৎসক অবসর প্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা.এম.এ.মতিন, মুক্তিযুদ্ধের সংঘটক সাংবাদিক ঢাকা বাসী আলহাজ্ব আব্দুল মুকিত খাঁন, মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ সিলেট বিভাগীয় নেতা সৈয়দ মফচ্ছিল আলী, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ আমার খালাত কনিষ্ট ভ্রাতা মাহমুদুর রহমান, জুনিওর কলিগ এডভোকেট আব্দুল হান্নান চৌধুরী প্রমুখ। ব্যাংক এবং আদালত অঙ্গঁন জন মানুষের সঙ্গেঁ সম্পৃক্ত বিধায় ভাইরাস করনা অবাধে বিচরন করছে এসব অঙ্গঁনে। সিলেট জেলা বারের সাহসী সভাপতি-বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট এ.টি.এম.ফয়েজ উদ্দিন এবং সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট এমাদ উল্লা শহীদুল ইসলাম শাহীন অসুস্থাবস্থায় কোয়ারেন্টাইনে আছেন। উভয়েই আমার সঙ্গেঁ সুসম্পর্ক যুক্ত বিধায় যখন ফোনে তাঁদের কুশল জানতে চাই, বুঝতে পারি কথা বলতে তাঁদের কষ্ট হয়। আইন অঙ্গঁনে আইনজীবী পরিবারে ঘাতক ব্যাধি করনার সর্বশেষ হানা শহরের লেইক ভিউ হাসপাতালে-চিকিৎসাধীন জেলার সাবেক জি.পি. জেলা বারের সাবেক সভাপতি বিভাগের প্রবীনতম আইনজীবী শ্রদ্ধেয় সিনিওর সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন এডভোকেট।
বয়স বাড়লে ঘুম কমে যায় কিংবা সাউন্ড শ্লিপ হয় না। ইদানিং করনা টেনশন এবং স্চ্ছো গৃহবন্দীত্বের সুযোগে দু’খানা পান্ডলিপি তৈরীতে দিনরাত কাজ করছি, বিশেষতঃ মুক্তিযুদ্ধের উপর-“আমার দেখা একাত্তোর-মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কথা”- গ্রহ্ণের পান্ডুলিপি চূড়ান্ত। কম্পিউটার কম্পোজ শেষ-প্রুফদেখছি-আর সংশোধন করছি-প্রায়শত বারের মত-কারন মুক্তিযুদ্ধ বলে কথা। মুক্তিযুদ্ধের উপর একটি বড় ধরনের কাজ করার দাবী ছিল আমার কাছে সকল মহলের- শেষ সময়- জীবন সায়াহ্নে এসে সেই কাজ টুকুই করছি-যা আগামী প্রজন্মের কাজে লাগবে। ফলতঃ রাত-বিরাত-আমি এখন লেখা-আর দেখা নিয়েই আছি।
ছয় আগষ্ট রাতেও এই কারনেই হালকা ঘুমও হয়নি। তাছাড়া ইদানিং ভ্যেপসা গরম ও উমতানি বেড়েছে মারাত্মক আকারে। বিশেষজ্ঞদের মতে বাসার এসির বাতাস করনা ছড়ায়, ফলতঃ করনা ভিতীর কারনে এসি বন্ধ করে গরমে ধান উনা-হই। গত সাত আগষ্ট সাত সকালেই বেরসিকের মত মোবাইল বেজে উঠল। তখন আমি উংগাচ্ছি কিংবা ঘুমের লাইগ লেগেছে মাত্র। ও প্রান্তে জেলা বারের সাবেক সম্পাদক বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট মিজানুর রহমান টিপু প্রিয় বরেষু। অনুজ প্রতিম এডভোকেট মিজান আমার একজন প্রিয়জন, আমার সুহৃদও শুভাকাংখী। আমরা একই পেশাজীবী এবং একই বারের মেম্বার হলেও তাঁর সঙ্গেঁ আমার কোন প্রফেশনাল-পেশাদারি সম্পর্ক নেই-যে সম্পর্ক আছে তা ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক। এসব দায়িত্ব পালনে বিশেষতঃ সামাজিকতায় তার একটি স্বতন্ত্র সুনাম রয়েছে। সাতই আগষ্টের সাত সকালের ফোনেই আমি বুঝে নিলাম এটি একটি-ডেথনিউজ-আমাদের কোন প্রিয়জন আমাদেরকে ছেড়ে চীর বিদায় নিয়েছেন। এডভোকেট মিজান আমাকে সিনিওর নয় বড় ভাই-বলে সম্ভোধন করেন, “সরি বড় ভাই আপনাকে সাত সকালে বিরক্ত করার জন্য দূঃখিত বলে বিনয় প্রকাশ করলে আমি ঘুমের লাইগ ভেঙ্গেঁ সরাসরি বলি ব্রাদার এ্যানিডেথ নিউজ” এডভোকেট মিজানুর রহমান দূঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমাকে জানালেন আজ সকালে লেইক ভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রবীন আইনজীবী এডভোকেট সৈয়দ আব্দুল মতিন ইন্তিকাল করেছেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। প্রাতিষ্ঠানিক-সামাজিক দায়িত্ব পালনে আমাদের সমিতির বর্তমান সভাপতি, বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট রমাকান্ত দাস গুপ্ত এবং সেক্রেটারি বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট মাহবুবুল আলম রুহেল ও খুবই দায়িত্ববান এবং একান্তই আন্তরিক। মহান আল্লাহর অপার মেহের বানী এবং এদের শুভেচ্ছায় আমি ইতিপূর্বে ছয় মেয়াদে সভাপতি/সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। জেলাবার সভাপতি এডভোকেট রমাকান্ত দাশ গুপ্ত ইতপূর্বে একাধিক মেয়াদে বারের সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরা এক সঙ্গেঁ এক কমিটিতে সভাপতি-সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে বার বান্ধব ভাই ভাই কমিটি হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলাম। সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্বে নূতন হলেও এডভোকেট মাহবুবুল আলম নীতিবান, কর্ম দক্ষ, কর্ম চঞ্চল ও প্রানবন্ত মানুষ। দেশব্যাপী লকডাউন-করনা আক্রান্তির মাঝে ও তারা তাঁদের কর্মদক্ষতা দিয়ে বেঞ্চ- বারের সমন্বয় এর মাধ্যমে সুন্দর ভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন। জেলাবারের সভাপতি তাৎক্ষনিক ভাবেই আমাকে মৃত্যো সংবাদটি জানিয়ে জানাজা বিষয়ক আমার মতামত চাইলেন। জেলা আইনজীবী সমিতির কোন সম্মানিত সদস্য মারা গেলে সমিতির পক্ষ থেকে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক মানবিক দায়িত্ব পালন করা হয়। সদ্য প্রয়াত সিনিওর আইনজীবী সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন একাধিক সুপুত্রের জনক। পারিবারিক ভাবে তিনি পৌর এলাকাধীন বড়কাপন-সৈয়দ বাড়ির একটি সম্ভান্ত শিক্ষিত স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান। তাঁর সন্তানগণ সপরিবারে লন্ডন, আমেরিকায় বসবাস করেন। তাঁর সুসন্তান এডভোকেট সাইয়্যেদ মঈনুদ্দীন জুনেল জেলা বারের সুদক্ষ সম্পাদক ছিলেন, তাঁর কার্য্যকালে সেই কমিটির সভাপতি ছিলাম আমি। সফল কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করে কৃতি আইনজীবী সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন শহরস্থ রিভারভিউ রোডে নিজ বাসগৃহে অবস্থান করছিলেন। বিভিন্ন বার্ধক্য জনিত ব্যাধিতে ভূগছিলেন তিনি। সাম্প্রতিক কালে তাঁর স্মৃতি শক্তি ও কিছুটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ষাটের দশক এর শুরু থেকে, আমাদের কলেজ লাইফ থেকেই দেখছি তাঁকে-হলদির মুড়ার মত উজ্জল ফর্সা-সাফ গুরিয়ানা চেহারা, মাঝারি উচ্চতার গোল বাটা মুখী সূবেশি সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন এর মুখে সবসময় লেগে থাকত মিষ্টি মুচকি গুয়ামেরি হাসি। পোষাক সচেতন কেতাব দূরস্ত সাইয়্যেদ জাদার বয়স বুঝা যেত না। তখন ছোট এই মহকুমা শহরে আইনজীবীদের সংখ্যা হাতে গুনা কয়েক জন-সর্ব জনাব আব্দুল মোহিত চৌধুরী, আব্দুল মতলিব, আব্দুল মনির, মোহাম্মদ ফিরোজ এবং বাবু দেবেন্দ নাথ- প্রমুখ সকলেই ছিলেন সিভিল প্র্যেকটিশনার, মুন্সেফি, আদালত ও ছিল মাত্র একটি।
তখনই তিনি একজন নামকরা আইনজীবী। আমি তাঁর একজন নিকট প্রতিবেশি ও বটে। তাঁর বাসভবন থেকে মুসলিম কোয়ার্টারস্থ আমার পারিবারিক বাসগৃহ রসূলপুর হাউস-একডাকের পথ-মাত্র কয়েকশ- মিটার দূরে। তাঁর ইন্তিকালের পর তাঁর প্রকৃত বয়স জানার প্রয়োজনে মরহুমের স্বজন শেখের গাঁও নিবাসি বন্ধুবর শহিদুর রাজার কাছে কোন করলে তিনি হিসাব নিকাশ করে জানালেন মরহুমের বয়স নাইনটি আপ আমরাই সত্তরোর্ধ, তিনি আমাদের বয়োঃ জৌষ্ট বিধায় তাঁর বয়স এমনি হবার কথা। যাইহোক পরিনত বয়সেই প্রবীনতম আইনজীবী সাইয়্যেদ আব্দুল মতিনের মৃত্যো সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। বয়স কর্ম পেশা নির্বিশেষে সকলেই এক বাক্যে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি একজন আল্লাহ্ রাসূল প্রেমি সাচ্চা ঈমানদার মুসলমান, সহজ সরল সাদা মনের ধর্ম প্রাণ মানুষ ছিলেন। জেলার প্রবীন রাজনীতিবিদ, ধর্ম ও সমাজসেবি মরহুমের আত্মীয় আমার একান্তই স্নেহ ভাজন সৈয়দ শাহাব উদ্দিন আহমদ ফোন করে মরহুমের জানাজার নামাজ, ইমামতি প্রসঙ্গেঁ আমার সঙ্গেঁ মত বিনিময় করলেন, জেলা বারের পক্ষ থেকে একমাত্র আমাকে বক্তব্য দিতে, তাঁর জন্য দোয়া চাইতে প্রস্তাব দিলেন। করনা আক্রান্তির পর স্ব্যাস্থ্য বিধি মেনে সীমিত ভাবে জনসমাবেশের সেসুযোগ নেই। স্বাভাবিক অবস্থায় বিশিষ্ট জনদের মৃত্যোর পর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিশাল আকারে জানাজার নামাজের আয়োজন এবং শোক প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়। লাশ পৌরসভা, জেলাবার, প্রেসক্লাব প্রাঙ্গঁনে নিয়ে শেষ সম্মান জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন ভাইরাস করনার কারনে এসব সীমিত। আমি সীমিত আকারেই আমার মতামত দিলাম। জেলা সদর-এই পৌর এলাকায় কোন ভি.আই.পি. গন্যমান্য নাগরিক এর জানাজার নামাজ সাধারনতঃ স্থানীয় কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন হযরত মৌলানা আব্দুল কাইয়ূম সিদ্দিকী সাহেবই পড়িয়ে থাকেন। চাকরি থেকে অবসর গ্রহনের পর বর্তমানে তিনি অসুস্থ। বর্তমানে উক্ত কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের দায়িত্বে আছেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ ইমাম জেলা জামে মসজিদ এর খতিব মৌলানা শামসুল ইসলাম মুফতি সাহেব। আমি দীর্ঘদিন যাবত জেলা জামে মসজিদ এর সেক্রেটারির দায়িত্বে আছি। আমি প্রস্তাব করলাম জেলা জামে মসজিদ এর খতিব সাহেবই শহরের এই প্রবীনতম মুরব্বি ও মুছল্লির নামাজে জানাজায় ইমামতি করবেন। আমার প্রস্তাবে সৈয়দ শাহাব উদ্দিন সম্মতি জানিয়ে দিলে আমি আমাদের ইমাব সাহেবকে এই অনুরোধ জানালে তিনি সানন্দে সম্মতি প্রকাশ করেন।
সাতই আগষ্ট বাদ জুম্মা হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফার মাজার সংলগ্ন জামে মসজিদে প্রবীন আইনজীবী আলহাজ্ব সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন এডভোকেট এর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। করনা ভিতীকে উপেক্ষা করে মরহুমের নামাজে জানাজায় বিপুল সংখ্যক নামাজি অংশ গ্রহণ করেন। নবীন পৌর মেয়র আলহাজ্ব মোঃ ফজলুর রহমান প্রবীন পৌরবাসি মরহুম সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন এডভোকেট এর জন্য পৌরবাসির কাছে দোয়া চান, মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন উপস্থিত রাজনীতিবিদ ও গন্যমান্য নাগরিকদের পক্ষ থেকেও মরহুমের জন্য দোয়া চাওয়া হয়। মরহুমের জানাজার নামাজ শেষে পবিত্র ঈদুল আজহার মাসে, মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদ শুক্রবার জুম্মাবারে-বাদ জুম্মা তাঁকে তাঁর প্রিয় শ্যামল মাটির কোমল বিছানায় চীর শয়ানে শায়িত করা হয়, প্রথম জিয়ারত ও মোনাজাত হয়। বয়স-পেশা কর্ম নির্বিশেষে সকলেই এক বাক্যে আন্তরিক ভাবে উচ্চারন করেন, তিনি একজন নিরহংকারি ধার্মিক ছিলেন, বড় ভালো মানুষ ছিলেন।
বৃটিশ ভারতের শেষ ভাগে মৌলভীবাজার সদর থানাধীন বর্ধিষ্ণু গ্রাম বড়কাপনের সৈয়দ বাড়িতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে সৈয়দ আব্দুল মতিনের জন্ম। পলাশীর যুদ্ধের বিয়োগান্তক ট্রেজেডি এবং সুবে বাংলার ভাগ্যাহত নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয় ও পতনের পর বাংলার রাজ্য হারা মুসলিম সমাজে নিদারুন পরিনতি ও ঘোর দুর্দিন নেমে আসে। পরবর্তীকালে স্যার সৈয়দ আহমদ এর নেতৃত্বাধীন আলি গড় আন্দোলন মুসলিম সমাজে পুনর্জাগরন শুরু হলে বঙ্গীঁয় মুসলিম সমাজে স্বদেশী আন্দোলনের সাথে সাথে ইংরেজী চর্চাও শুরু হয়। বড়কাপনের সৈয়দ বাড়ি শহর তলির একটি শিক্ষিত ও শিক্ষানুরাগি পরিবার। এই পরিবারে আরবি, ফার্সি, উর্দূ, ধর্ম শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজী শিক্ষার ও প্রচলন ছিল। সৈয়দ আব্দুল মতিন ধর্ম শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এনট্র্যান্স পাশ করতঃ আইনে স্নাতক ডিগ্রী নিয়ে ১৯৫৯ সালে মৌলভীবাজার মহকুমা এডভোকেট বারে যোগদান করে স্থানীয় মুন্সেফি আদালতে আইন পেশায় মনোনিবেশ করেন। একজন পেশাদার আইনজীবী হিসাবে তাঁর অর্ধ শতাব্দীর ও অধিক কাল আইন পেশার জীবনে তিনি বিপুল পরিমান খ্যাতি অর্জন করেন। আমাদের আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসাবে তিনি একাধিকবার সম্পাদক-সভাপতির গুরু দায়িত্ব পালন করতঃ নেতৃত্ব দিয়েছেন-অভিভাবকত্ব করেছেন-বার ও আদালত অঙ্গঁনকে আলোকিত করেছেন। মান সম্মান বাড়িয়েছেন। বি.এন.পি.র সরকারামলে তিনি দক্ষতা ও সুনামের সাথে জেলার সর্ব্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা বিজ্ঞ জিপি.এর দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনীতিগত ভাবে সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন ইসলামী মূল্যবোধ ও বাংলাদেশী জাতীয়তা বাদে বিশ্বাসী ছিলেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের উনিশ দফা কর্মসূচীর প্রতি আস্থাজ্ঞাপন করেঃ তিনি বি.এন.পি স্থায়ী কমিটির চীর স্থায়ী সদস্য, মরহুম অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম.সাইফুর রহমানের আহ্বানে বি.এন.পি’তে যোগদান করতঃ প্রথমতঃ জেলা কমিটির আহ্বায়ক অতঃপর জেলা সভাপতি নির্বাচিত হন। সরকারি দলের সভাপতি এবং জেলার যোগ্য ও অভিজ্ঞ জি.পি. হিসাবে তাঁর মধ্যে কোন অহংকার, অহংবোধ ও কি হনুরে ভাব-ছিল না। তিনি কখনও কোনদিন কাউকেই ক্ষমতার দাপট দেখান নি। বরং তাঁর শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ ও বিনয়াচরন ছিল অনুকরনীয়। শিক্ষনীয়। স্বাধীনতা উত্তর কালে আমি ব্যাপক সুযোগ সুবিধা থাকা সত্বেও বিভিন্ন কারনে সরকারি চাকরি কিংবা একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বি,সি,এস,প্রথম ব্যাচ-এ-যোগ না দিয়ে শ্রদ্ধেয় আব্দুল মোহিত চৌধুরী এডভোকেট সাহেবের জুনিওর হিসাবে আইন পেশায় যোগ দিয়ে পেশাগত কারনে তাঁদের কাছে যাবার, সহচর্য্য পাবার কথা বলার সুযোগ পাই। তখনবার সদস্য সংখ্যা ও ছিল কম। এক পরিবারের মত পারিবারিক পরিবেশে আমরা বেড়ে উঠেছি-পথ চলেছি তাঁদের কাছ থেকে শিখেছি-পিতৃ স্নেহ পেয়েছি। তিনি এবং তাঁরা আমাকে আমাদেরকে পুত্র বৎ স্নেহ মমতা করেছেন। আমরা জুনিওরগণ ও ভাই ভাই সংস্কৃতিতে মেতে না উঠে তাঁদেরকে বাপ চাচার মত শ্রদ্ধা করতঃ চাচা বলেই সম্ভোধন করেছি। পূর্বে উল্লেখিত শ্রদ্ধেয় সিনিওরগণ কেউই অমুক ভাই ছিলেন না, ছিলেন চাচা। তখন রাজনীতিতে ও এখনকার মত এতসব গড ফাদার ছিলেন না, কেডার ও ছিলেন না, তাঁরা গড ফাদার আমরা কেডার ছিলাম না।
তাঁর সঙ্গেঁ আমার বহু স্মৃতি বিজড়িত। জেলা বারের বার্ষীক নির্বাচনে আমার পরাজয় এর রেকর্ড থাকলেও ছ’বার সভাপতি সম্পাদক হয়েছি একবার সভাপতি হয়েছি বিনা প্রতিদ্ধন্তিতায়। আমি বারে যোগদান করার পর আমাকে নিব্বাহী কমিটির সদস্য অতঃপর সহ-সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়। তখন এতসব সাংবিধানিক বিধি বিধান এবং প্রতিদ্ধন্ধিতা পূর্ণ নির্বাচন পদ্ধতি ও ছিল না। আমার সকল অর্জন ও প্রাপ্তিতে তাঁর মৌন সম্মতি ও দোয়া ছিল। এক মেয়াদে তুমুল প্রতিদ্ধন্ধিতার মাধ্যমে আমি সভাপতি এবং তাঁর সুপুত্র সাইয়্যেদ মঈনুদ্দিন সম্পাদক নির্বাচিত হন। নব নির্বাচিত সভাপতি-সম্পাদক হিসাবে আমরা বার থেকে তাঁর বাসায় যাই তাঁকে কদমবুসি করতে, তাঁর দোয়া ও পরামর্শ নিতে। আমার পিতা-মাতা-চাচা-চাচি-শশুড়-শাশুড়ি-কেউই বেঁচে নেই-যাদেরকে সালাম করে দোয়া চাইব। নব নির্বাচিত সভাপতি হিসাবে বার সম্পাদক তাঁরই সুপুত্র সাইয়্যেদ মঈনদ্দীন সহ তাঁর বাসায় গিয়ে তাঁকে সালাম জানানো এবং বার পরিচালনায় তাঁর দোয়া ও পরামর্শ চাওয়াতে তিনি খুবই খুশী হলেন, উজ্জল ফর্সা মুখে তাঁর স্বভাব সূলভ নিঃশব্দ মিষ্টি হাসি উপহার দিলেন, কিছু না বলার মাঝে ও মিষ্টি হাসি, বিনয়াচরন, শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ দিয়ে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিলেন, দোয়া করলেন তবে তাঁর প্রিয় পুত্র নবনির্বাচিত বার সেক্রেটারি সাইয়্যেদ মঈনুদ্দিনকে শাসনের ভঙ্গিঁতে সতর্ক বানী উচ্চারন করলেন বল্লেন, জুনেল, মুজিব আমার খুবই প্রিয় আস্থা ও স্নেহভাজন, তাঁর সঙ্গেঁ সেক্রেটারি গিরি কিংবা ক্ষমতা দেখিও না, কমিটি ও তাঁর কথায়ই যেন বার চলে। আমার প্রতি, এক অনাত্মিয় এতিমের প্রতি তাঁর অগাধ আস্থা ও স্নেহ মমতায় মায়ায় দোয়ায় আমি বিমুগ্ধ-বিমোহিত আবেগ আপ্লুত হলাম,তাঁকে আস্বস্থ করে বল্লাম বয়োঃকনিষ্ট হলেও জুনেলের সঙ্গেঁ আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই চমৎকার, সে আমাকে অগ্রজেরমত শ্রদ্ধা করে-আমি তাঁকে অনুজের মত স্নেহ করি। জীবিকা না হলেও জীবনের প্রয়োজনে জুনেল এক সময় সপরিবারে আমেরিকা পাড়ি জমায়। গ্রীন কার্ড নিয়ে দেশে এলে আমি তাঁকে আমার কোর্ট চেম্বারে ‘খোকা বাবুর প্রত্যাবর্তন’-শিরোনামে সচিত্র ব্যানার টাঙ্গিয়ে তাঁকে সম্ভর্ধনা দিয়েছিলাম। মানুষ হিসাবে শ্রদ্ধেয় সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন যেমন ছিলেন নম্র-ভদ্র পেশা জীবী হিসাবে ও ছিলেন অমায়িক ও বিনয়ী। আশির দশকের শুরুর দিকে আমার পূর্ণ যৌবন কাল ও তমতমির দিনে মহকুমা প্রশাসক-মহকুমা হাকিম আদালতে প্রচুর মামলা মোকদ্দমা ও জনসমাগম রমরমা ছিল। তখন বড় বড় কনটেষ্টিং মামলায় মুন্সেফি আদালত থেকে আমার শ্রদ্ধেয় সিনিওর আব্দুল মোহিত চৌধুরী, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আব্দুল মূঈদ চৌধুরী, শ্রদ্ধেয় সিনিওর সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন চৌমুহনাস্থ মুন্সেফি আদালত থেকে মহকুমা হাকিম আদালতে এংগেইজমেন্টে আসতেন। সি.আর. পি.সি.এবং ডি.এল. আর. হাতে নিয়ে মিষ্টি হেসে সবিনয়ে সাবমিশন রাখতেন কোন দিন সিনিওর সূলভ দাপট-কিংবা ক্ষমতার প্রভাব খাটাতেন না, হম্বি তম্বি করতেন না। তখন ফৌজদারী প্রেকটিশে আমার অগ্রজ প্রতিম এডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী এডভোকেট আং জব্বার, এডভোকেট গজনফর আলী চৌধুরী এবং আমার বন্ধু এডভোকেট আব্দুর রউফ কলা মিয়া প্রমুখের খুব নাম ডাক ছিল।
সদর উপজেলাধীন বড়কাপনের সৈয়দ বাড়ির সৈয়দ বংশীয় সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন ছিলেন একজন ধর্ম প্রাণ সাচ্চা ও পাক্কা মুসলমান। অফিসিয়াল ড্রেস স্যুট ছাড়া ও পাজামা পাঞ্জাবি চুস্ত পাজামা-শেরোওয়ানী ছিল তাঁর প্রিয় পোষাক। সুঠাম শরীর ও উজ্জল ফর্সা চেহারার দীর্ঘদেহী সুবেশি সাইয়্যেদ সাহেবকে দাড়ি-টুপি ও গুয়ামেরী মুচকি মিষ্টি হাসিতে দারুন মানাত। আজ কাল অনেকের কাছে নামাজ কালাম ঈমান আমলের চাইতে দাড়ি টুপি ফ্যেসনে পরিণত হয়েছে, কিন্তু তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থেই সুন্নতি লেবাছ ধারি ধর্মে কর্মে প্রকৃত ধার্মিক, বক ধার্মিক-ভন্ড ছিলেন না। ঈমানে আমলে ছুন্নতে মেহনতে পাক্কা ঈমানদার মুসলমান আলহাজ্ব সৈয়দ আব্দুল মতিন দীর্ঘদিন নিষ্ঠার সাথে মৌলভীবাজার টাউন ঈদগার সেক্রেটারির গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন। নব্বইর দশকে তাঁকে নিয়ে তাঁর নেতৃত্বে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেছিলাম। এই মাঠ আমার বাসার সামনেই। সেই ষাটের দশক থেকে এই মাঠে খেলাধুলা, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক সভা সমাবেশে অংশ গ্রহণ ভাষন দিয়ে থাকি। এই মাঠে শুস্ক মৌমুমে বড় বড় ওয়াজ মাহফিল হয়। ওয়াজ মাহফিল ও আমাদের আলেম ওলামা সাহেবানদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মত পার্থক্য ও মনোমালিন্য সর্ব্বোপরি একটি মহল মিলাদ মাহফিল এর আয়োজন ও আমাদের মহানবীর অবমূল্যায়ন একজন সাধারন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসাবে আমাকে পিড়া দেয়। আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মোফাচ্ছিলে কোরআন কুমিল্লার ফতেহাবাদ দরবার শরীফ এর পীরজাদা শাহ সুফি শফিকুল ইসলাম ফতেহাবাদি একজন নবী প্রেমিক-জ্ঞানী-গুনী ও মিষ্টভাসি বক্তা। আমার প্রিয় বন্ধু ও বিশিষ্ট আইনজীবী লুৎফুর রহমান খাঁন এডভোকেট এর পরমাত্মিয় তিনি। আমাদের জেলা জজ আদালতে কর্মরত জাহিদ উদ্দিনের সহোদর মৌলানা ফয়সল আহমদ হেলালি ফতেহাবাদ দরবার শরীফর খলিফা ও পীরজাদার মুরিদ। ফতেহাবাদ এর পীরজাদা আমাদের এলাকায় ওয়াজ নসিহতে আসলে ও এবং এই এলাকায় তাঁর যথেষ্ট মুরিদান ও অনুরাগি থাকলেও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তিনি ইতিপূর্বে কখন ও ওয়াজ করেন নি-তথা তাঁকে এখানে কেউ আমন্ত্রন করেন নি। পীরজাদা ছাহিব এর কতেক অনুরাগি আমাকে এই উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানালে আমি এ ব্যাপারে শ্রদ্ধেয় সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন এডভোকেট সাহেব এর সঙ্গেঁ আলোচনা ও পরামর্শ ও মতবিনিময় করি। আমি তখন এখন কার মত পক্ক কেশি বৃদ্ধ নই, বরং বাবরি চুল ও বাহারি গোফে নও যোয়ান।
যদিও ধর্ম কর্ম ও মসজিদ কমিটিতে মসজিদ পরিচালনায় জড়িত আছি, চৌমুহনাস্থ দেওয়ানী মসজিদ এর সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করে ফেলেছি। জেলার বিশিষ্ট মুরব্বি, ধর্মপ্রাণ পাক্কা মুসলমান হাজি-নামাজি সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন এডভোকেট হৃষ্টচিত্তে আমার প্রস্তাব মোতাবেক ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের পক্ষে মত দিলেন-এন্তে জামিয়া কমিটির আহ্বায়ক হতে সম্মত হলেন, আমি কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব ভার নিলাম, তিনি আমার উপর ভরসা করলেন, ভরসা রাখলেন বল্লেন দুনিয়া দারি করেছ এবার আল্লাহ রাসুলের কাজ করো, তুমি কামিয়াব হবে ইনশাল্লাহ। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেঁ কথা বলে তাঁর স্বভাব সূলভ ভঙ্গিঁতে মিষ্টি করে নিঃশব্দে মুচকি মুচকি হাসলেন।
যেভাবে পিতা তাঁর সন্তানের ভালো কাজে দোয়া করেন, আমার মরহুম জনক বেঁচে থাকলে যে ভাবে বলতেন-দোয়া করতেন ঠিক সেভাবেই তিনি তাই করলেন। বল্লেন। স্বাধীনতা পূর্ব যুগে আমার যৌবন কাল থেকে এই বার্ধক্ষে একজন সমাজ কর্মি ও সংঘটক হিসাবে প্রেসক্লাব, পাবলিক লাইব্রেরী, জেলাবার, শিশু একাডেমী, রেডক্রশ, রোটারি ইন্টার ন্যাশনেল এবং বি.এন.এস.বি.চক্ষু হাসপাতাল এর সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করলেও ওয়াজ মাহফিল এন্তে জামিয়া কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন এই প্রথম। আল্লাহ রাসূলের নাম নিয়ে তাঁর দোয়া নিয়ে আমার স্বল্প সংখ্যক-হাতে গুনাদু-চারজন সহকর্মি নিয়ে স্কুল মাঠ এর ওয়াজ মাহফিলকে সফল করতে মাঠে নামলাম। ধর্ম প্রাণ মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ও সমর্থন পাওয়া গেল। ওয়াজ নসিহত সমর্থক মুসলিম মহলে মিষ্ট ভাষি মৌলানা শাহ শফিকুল ইসলাম ফতেহাবাদীর ব্যাপক সমর্থন, ভক্তি ও শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। ফতেহাবাদ এর সুদর্শন স্বজ্জন-বিনয়ী পীরজাদা ওয়াজ নসিহত করেন আল্লাহর কালাম ও মহানবীর হাদিস এর উপর ভিত্তি করে, যুক্তিসঙ্গঁত ভাবে, তিনি বেহুদা বকোয়াস-লম্ব-ঝম্প করেন না, কাউকে গালিগালাজ ও করেন না পীর ফকির, দরবেশ, ওলামায়ে কেরামের প্রতি তাঁর সম্মান বোধ রয়েছে। আলহাজ্ব সৈয়দ আব্দুল মতিন এডভোকেট আহ্বায়ক এন্তজামিয়া কমিটির সভাপতিত্বে এবং আমি লাচার না লায়েক এর সঞ্চালনায় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সেরাতে বিপুল সংখ্যক ধর্ম প্রাণ মুসলমানের সমাগম হয়েছিল। মাহফিলের প্রধান মেহমান পীরজাদায়ে ফতেহাবাদী বারো কিছিমের বারো মজা মার্কা অন্তঃসার শূন্য চীৎকার, লম্ব-ঝম্প-মহানবীর সঙ্গেঁ বেআদবি ও নয় একটি বিষয়ের উপর গভীর রাত পর্য্যন্ত সারগর্ভ-যুক্তি সঙ্গঁত বয়ান করছিলেন-শ্রুতি মন্ডলি মন্ত্র মুগে¦র মত শ্রবন করছিলেন মেরাজুন্নবির বৈজ্ঞানিক বয়ান। মহানবী মোহাম্মদ মোস্তফা (দ:) এর মেরাজ-আল্লাহর দিদার প্রাপ্তি-বাত-ছওয়ালকে, অনেক বেআদব ও মূর্খ শারীরিক নয় স্বাপ্নিক বলে ধৃষ্টতা দেখান। জ্ঞানী-গুনী-যুক্তিবাদি ও মিষ্টভাসি বক্তা শাহ শফিকুল ইসলাম ফতেহাবাদি শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক ঘটনা পবিত্র শবে মেরাজ উপলক্ষে গভীর রাত্রি পর্য্যন্ত ওয়াজ করে আগত সকল বয়সী মুসল্লিয়ানগণকে মন্ত্র মুগ্ধ করে রেখেছিলেন। মাহফিলে মুসল্লিয়ানের ব্যাপক উপস্থিতি শান্তিপূর্ণ সফল সমাপ্তিতে এন্তেজামিয়া কমিটির আহ্বায়ক মাহফিলের সভাপতি আলহাজ্ব সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন এডভোকেট সভাপতির ভাষন শেষে তাঁর স্বভাব সূলভ ভঙ্গিঁতে আনন্দ ও তৃপ্তির মুচকি মিষ্টি হাসি হাসছিলেন আর আমি আল্লাহ, রাসূল ও পীরজাদার নামে নারায়ে তকবির আওয়াজ তুলছিলাম। মাহফিলের সাফল্য আমার আন্তরিকতা ও উচ্ছাস দেখে ফতেহাবাদের পীরজাদা সন্তুষ প্রকাশ করে আল্লাহর শুকুর গোজার করছিলেন, আমার সঙ্গেঁ তাঁর মঞ্চে মাহফিলে প্রথম দেখা, বিনয় প্রকাশ করে বল্লেন তাঁর নামে নারা দিতে হবে না, বল্লেন আপনি মামার বন্ধু, জেলার নামকরা আইনজীবী। আমার আবাল্য বন্ধু এডভোকেট লুৎফুর রহমান খাঁন তাঁর মামা হিসাবে তিনি আমাকেও মামা ডেকে সম্মানিত করলেন। সাধারনতঃ বার্ষীক ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেন মাদ্রাসা, মক্তব, ইসলামী সংস্থা সংঘটন সমূহ, ওয়াজ মাহফিলে যোগদান কারি আলেম সাহেবানগণকে আমন্ত্রন অভ্যর্থনা, সেবা দিয়ে থাকেন মাদ্রাসার ছাত্র-তালবে আলিমগণ-আমাদের এই ওয়াজ মাহফিল ছিল তাঁর ব্যতিক্রম। সেই থেকে আমি ফতেহাবাদ এর পীরজাদার অনুরাগি ও মুরিদ, তিনি আমাকে ফতেহাবাদ দরবার শরীফ এর খলিফা নিযুক্ত করেছেন। আফসোস আমার, আমার প্রিয় বন্ধু এডভোকেট লুৎফুর রহমান খাঁন আর বেঁচে নেই-পরলোকে।
এই ভাবে সদ্য প্রয়াত সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন এডভোকেট এর সঙ্গেঁ আমার অনেক উজ্জল স্মৃতি বিজড়িত যা এই স্বল্প পরিসরে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। আমি মরহুমের মৃত্যোর পর তার পরিবার ও জেলাবারের সঙ্গেঁ আলোচনা করে ঢাকা-সিলেট তাঁর মৃত্যো সংবাদ ও জানাজার স্থান সময় জানিয়ে দেই। জানাজায় যোগদান সম্ভব না হলেও তাঁর মৃত্যো সংবাদ জানানো এবং তাঁর জন্য দোয়া চাওয়া ও দোয়া করা আমাদের দায়িত্ব। সিলেটের যোগ্য জামাতা তিনি। বিভাগের মশহুর মরহুম আইনজীবী এডভোকেট সুলেমান রাজা চৌধুরীর ভগ্নিপতি তিনি। সিলেট জেলাবারের সভাপতি এডভোকেট এ.টি.এম. ফয়েজ উদ্দিন করনায় কোয়ারেন্টাইনে, সাবেক সভাপতি এডভোকেট ই.ইউ.শহীদুল ইসলাম শাহীনকে দূঃসংবাদটি জানিয়ে দোয়া চাইলাম। ঢাকায় বসবাসরত মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরী, কাজী ফারুকুজ্জামান আহমদ এ জেলার এককালীন জনপ্রিয় তথ্য অফিসার এফ.সি.বি.এর অবসর প্রাপ্ত সচিব এম.এ.রউফ প্রমুখকে দূঃসংবাদটি জানালে সকলেই এক বাক্যে বল্লেন মরহুমের ভদ্রতা ও বিনয়বোধ অতুলনীয়। এরা সকলেই মরহুমের সাথে সম্পর্ক যুক্ত ও স্নেহ ভাজন ছিলেন।
মনুকুলের কাগজ সম্পাদক অনুসন্ধানী ও পরিশ্রমী সাংবাদিক স্নেহভাজন মুশতাক চৌধুরী মোবাইল মারফত মরহুমের কর্ম ও জীবন দর্শন নিয়ে একখানা স্মারক সংকলন বেরা করার ইচ্ছা প্রকাশ করতঃ তার উপর স্মৃতি কথা লিখার দাবী জানালে আমি সম্মতি জানিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেই। মুশতাক চৌধুরীর দাবীতে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
নয়ই আগষ্ট রবিবার অফিস খোলার দিনই আমি আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে কমিটিকে জানিয়ে বার ভবন মসজিদে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনায় মিলাদ শরীফ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করি, গত মাসে এমনি করে আমার প্রিয় কনিষ্ট কলিগ এডভোকেট আব্দুল হান্নান চৌধুরীর আকস্মিক মৃত্যোতে করেছিলাম-কোন স্বজনের মৃত্যোতে আমি সাধারনতঃ করে থাকি, কারণ আমার ও এখন পড়ন্ত বেলা, আশা করি চলে গেলে কেউ না কেউ দোয়া দূরূদ কবর জিয়ারত করবেন। গত সপ্তাহে লন্ডন থেকে কোন করে বিলেতের বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা আমার একান্তই স্নেহ ভাজন মকিস মনসুর জানালো লন্ডনেও সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন সাহেব এর সম্মান ও স্মরনে শোক সভার আয়োজন করা হবে, আমাকেও ভিডিও কলের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে। আমি এ প্রজন্মের প্রিয় মুখ মকিস মনসুরকে এমন মহতি উদ্যোগের সাধুবাদ জানিয়ে ভিডিও কলে সংযুক্ত হতে সম্মতি প্রকাশ করি।
জেলার বিশিষ্ট আইনজীবী রাজনীতিবিদ ধর্ম ও সমাজ সেবক আলহাজ্ব সাইয়্যেদ আব্দুল মতিন পরিনত বয়সেই পরলোক গমন করেছেন। প্রাকৃতিক নিয়ম-খোদায়ী বিধান মোতাবেক সব স্বজনের চোখের পানি একদিন শুকিয়ে যাবে, শুকিয়ে যাবে তাঁর কবরের মাটি ও। গজাবে ঘাস, লতা, পাতা। মুসলিম লঅফ ইন হেরিট্যাস মোতাবেক তার সকল সম্পত্তির মালিকানা তিনি অব্যাহতি পেয়ে তাঁর যোগ্য উত্তরাধিকারীগণ মালিকানা প্রাপ্ত হবেন, জেলা বারের ওকালতনামা থেকে এই প্রবীনতম সম্মানিত সদস্যদের নাম কর্তন হবে-ক্রমাগত হয়ত তিনি হারিয়ে যাবেন স্মৃতির গভীরে কিন্তু তাঁর সকল মহৎ কাজের মাঝে তিনি বেঁচে থাকবেন অনেক দিন কারণ মানুষ মরণশীল হলেও কিছু মহৎ মানুষ কথা ও কাজের মানুষ বেঁচে থাকেন তাঁদের সকল কাজের মাঝে। কথার মানুষ, কাজের মানুষ সাইয়্যেদ আব্দুল মতিনের উজ্জল স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই, তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করি। মহান মালিক তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস প্রদান করুন এই মোনাজাত সহ আমীন। ছুম্মা আমীন।
[মরহুমের স্নেহ ধন্য কনিষ্ট কলিগ। সিনিওর এডভোকেট হাইকোর্ট, সাবেক সভাপুিত, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা]
মন্তব্য করুন