“ত্রিশে মে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহদাত বার্ষিকীঃ স্মরনঃ শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ ”
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ ত্রিশে মে, দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার লৌহ মানব, সার্কের-মহান স্বপ্ন দ্রষ্টা-স্বাধীনতার মহান ঘোষক-স্বাধীন বাংলাদেশে বহু দলীয় গণতন্ত্রের প্রতর্বতক-সফল রাষ্ট্র নায়ক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৭তম শাহদাত বার্ষিকী।
বারো আউলিয়ার মুল্লুক-বন্দর নগরী- বাংলাদেশের বানিজ্যিক রাজধানী ঐতিহ্যবাহী চট্রগ্রাম সফর করছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তাঁর কতেক সফর সঙ্গীঁসহ প্রেসিডেন্ট জিয়া চট্রগাম সার্কিট হাউসে রাত্রি যাপন করছিলেন। এই ঐতিহ্যবাহী চট্রগাম থেকেই মেজর জিয়ার উত্থান। একাত্তোরের অগ্নিঝরা দিনগুলিতে পাকিস্থান সেনাবাহিনীর চৌকশ অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান বেঙ্গঁল রেজিমেন্টের সেনা কর্মকর্তা হিসাবে বন্দর নগরী চট্রগ্রামে কর্মরত ছিলেন। সত্তোর সালের সাধারণ নির্বাচনে বাঙ্গাঁলি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আপোষ হীন নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জনের পর পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন ফৌজি প্রেসিডেন্ট লেঃ জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খাঁন শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করতে থাকলে বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকে। এমতাবস্থায় একাত্তোরের সাতই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গঁবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষনে স্বাধীকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকে এগুতে থাকে। মুজিব-ইয়াহিয়া-ভূট্টো আলোচনা ব্যর্থতায় পর্য্যবসিত হয়। আলোচনার নামে পাক শাসক কর্তৃপক্ষ পাকিস্থান থেকে বাংলাদেশে সৈন্য সমাবেশ করতঃ পাক সেনাবাহিনী ঢাকা-জয়দেবপুর সহ বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে গুলি বর্ষন করে গণহত্যা করতে থাকে। অতঃপর জেনারেল ইয়াহিয়া খাঁন “অপারেশন সার্চ লাইট” নামে নিরস্্র বাঙ্গাঁলী হত্যা, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষন, লুন্টনসহ মানবতা বিরোধী অপরাধে মেতে উঠেন। দেশ ও জাতির সেই মহাসংকট ও ক্রান্তি কালে পাক সেনাবাহিনীর চৌকশ অফিসার মেজর জিয়া স্বদেশ প্রেমও স্বাদেশিকতায় উদ্ভোদ্ধ হয়ে বিদ্রোহ ঘোষনা করতঃ চট্রগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে- ও I Major Zia, on behalf of our great Leader Bango Bondhu Sheikh Mujibur Rahman do here by decleare the Indipendence of Bangladesh- – বলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে একটি দিক নির্দেশনা দেন-স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়ে নেন। লক্ষনীয় এই যে, মেজর জিয়ার এই ঘোষনা তাঁর কোন রাজনৈতিক স্বার্থও উদ্দেশ্যে ছিল না, তিনি যথার্থই সে সময় জাতির নির্বাচিত নেতা বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামেই ঘোষনা দিয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে সৈনিক জিয়া ব্যারাক এ ফিরে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী পূনর্ঘটনে আত্ব নিয়োগ করেন। জেনারেল কে.এম.শফিউল্লাহ বীর উত্তম বাংলা দেশ সেনা বাহিনীর প্রথম সেনা প্রধান নিযুক্ত হলে জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর উত্তম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিযুক্ত হয়ে ছিলেন। পঁচাত্তরের পনেরোই আগষ্ট ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাস ভবনে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের কমান্ডো কায়দায় আক্রমনে স্বাধীনতার মহানস্তপতি মহামান্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবকে স্বপরিবারে হত্যা, বঙ্গঁবন্ধুর আজীবনের বন্ধু খুনী মুস্তাক এর ক্ষমতারোহন, জেলহত্যা, পাল্টা অভ্যোত্থানে বাংলাদেশর রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হতে থাকে। এই অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক সংকট ও শূন্যতার মাঝে দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হন জেনারেল জিয়াউর রহমান।
রাষ্ট ক্ষমতায় আসীন হয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়া;
ক. দেশে বহু দলীয় গণতন্ত্র পূণঃ প্রবর্তন করেন।
খ. সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন।
গ. সেনাবাহিনীর মধ্যে চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনেন।
ঘ. সুশাসন ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করেন।
ঙ. উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতির লক্ষ্যে ঐতিহাসিক উনিশ দফা কর্মসূচী ঘোষনা করেন।
চ. ধর্মীয় মূল্যবোধকে ধারন করে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এর রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালু করেন।
ছ. বহি র্বিশ্বে বাংলাদেশের মর্য্যাদা ইমেজ ও ভাব মূর্তি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়ার পররাষ্ট্র নীতি দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়।
জ. রাষ্ট্র পরিচালনায় কৃচ্ছতা-স্বচ্ছতা-সততা-নিয়মানুবর্তিতা চালু করেন।
ঝ. তাঁর বলিষ্ট ও গতিশীল নেতৃত্বে দেশে আইন শৃংঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়, বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। বিদেশ থেকেও সম্মান ও স্বীকৃতি আসতে থাকে।
ঞ. বাংলাদেশের জ্ঞানী গুনী, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, চিকিৎসাবিদ, বিজ্ঞানী, নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তা বাদী দল বি.এন.পি. গঠন করেন। তাঁর মন্ত্রীসভাও ট্যেলেন্টেড ক্যেবিনেট হিসাবে খ্যাত। সিলেটের গর্ব ও গৌরব অর্থনীতিবিদ এম.সাইফুর রহমান তাঁরই আহ্বানে তাঁর সরকার ও রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন।
দেশীয় উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতির সুসময়ে একটি দেশী বিদেশী চক্র ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে সফল রাষ্ট্র নায়ক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। যে চট্টগ্রামেই মেজর জিয়ার উত্থান সেই চট্টগ্রামেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট জিয়ার এই আকস্মিক হত্যাকান্ড দেশব্যাপী শোকের ছায়া নেমে আসে। আওয়াজ উঠে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া হায় জিয়া। হায় জিয়া। প্রেসিডেন্ট জিয়ার নামাজে জানাজায় যে শোকাহত লাখোলাখো মানুষের ঢল ছিল তা ছিল বিস্ময় ও ব্যতিক্রম।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আজ আর আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই। রাধধানী ঢাকার জিয়া উদ্যোনে চীর শয়ানে শায়িত তিনি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া বেঁচে না থাকলেও আছে তাঁর অমর কির্তী, উজ্জল স্মৃতি। তাঁর ঐতিহাসিক উনিশ দফা কর্মসূচী। গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা।
দেশে গনতন্ত্র আজ প্রশ্নবিদ্ধ। কার্য্যকর সংসদ নেই। সুশাসন ও নির্বাসনে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্টা ও সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে জিয়ার সৈনিক গণকেই শপথ নিতে হবে-তাঁর এই শাহদাত বার্ষিকীতে।
ত্রিশে মে শহীদ প্রেসিডেন্ট মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান এর শাহদাত বার্ষিকীতে তাঁর উজ্জল স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি, তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। মহান মালিক তাঁর বেহেশত নসীব করুন-এই মোনাজাত- করছি।
[মুক্তিযোদ্ধা। আইনজীবী। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব।
মন্তব্য করুন