দালাল বেষ্টিত বড়লেখা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ঘুষ ছাড়া সংযোগ মিলেনা : অনুমান নির্ভর বিল দিয়ে গ্রাহক হয়রানী
আবদুর রব॥ বড়লেখায় দালাল ও ঘুষ ছাড়া পল্লীবিদ্যুতের সংযোগ মিলে না। অনুমান নির্ভর বিরাট অঙ্কের বিল দিয়ে গ্রাহক হয়রানীও নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপারে দাঁড়িয়েছে। পল¬ীবিদ্যুতের এসব অনিয়ম নিয়ে প্রায়ই ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের কার্যালয়ে ভুক্তভোগীদের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেখা যায়।
পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার, ওয়ারিং ইন্সপেক্টর, লাইনম্যান, ইলেক্ট্রিশিয়ানসহ সংশি¬ষ্টদের সিন্ডিকেট অর্ধশত দালালের মাধ্যমে ঘুষ আদায় করে নতুন সংযোগ প্রদানসহ বিদ্যুৎসেবা প্রদান করছে। এ সিন্ডিকেটকে পাশ কাটিয়ে বিদ্যুৎ পাওয়ার চেষ্টাকারীরা মূখোমূখি হন নানা হয়রানীর, দুর্ভোগ, জটিলতা আর দীর্ঘসুত্রিতার। এ প্রতিবেদকের দীর্ঘ অনুসন্ধানে ঘুষ দুর্নীতির এসব নানা তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১৮ সালের মধ্যে সরকার দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী, শাসক দলের স্থানীয় কিছু নেতা ও দালালদের যোগসাজসে সরকারের এ লক্ষ্যকে পুঁিজ করে সাধারণ মানুষের নিকট থেকে বিদ্যুৎ প্রদানের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
উপজেলার গ্রামতলা (নয়াগ্রাম) গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহক (মিটার নং-৬৩২/১২৭০) শাহজাহান কমর অভিযোগ করেন প্রতি মাসে তিনি নুন্যতম বিল ১০৫ টাকা পরিশোধ করে থাকেন। সর্বশেষ জানুয়ারী ২০১৭ পর্যন্ত একই পরিমানে ১০৫ টাকা বিল পরিশোধ করলেও ফেব্রুয়ারী মাসে রিডিংয়ের স্থানে আনুমানিক লিখে তাকে ১২৩৬ টাকার বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। যদিও তার কোন বিদ্যুৎ বিল বকেয়া নেই। এধরনের রহস্যজনক বিল দিয়ে অহরহ নিরীহ গ্রাহকদের হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
আবেদন করে বছরের পর বছর ধরনা দিয়েও বিদ্যুৎ প্রত্যাশীরা সংযোগ পান না। দালালের মাধ্যমে সরকারী ফিস ৬০০ টাকার স্থলে ২ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিলে দ্রুত পাওয়া যায় বিদ্যুতের সংযোগ। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে নতুন সংযোগের আবেদন করেন পুর্ব দক্ষিণভাগ গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে ছয়দুর রহমান। প্রায় দেড় বছর ধরনা দিয়ে বিদ্যুৎ না পেয়ে বিদ্যুৎ অফিসের এক দালালের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা উৎকোচ দেয়ায় ৮ মার্চ তার বাড়ীতে মিটার সংযোগ দেয়া হয়। একই গ্রামের জনৈক ব্যক্তি মিটার প্রতি ৬ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে আবেদনের ৫-৬ দিনের মধ্যেই সংযোগ লাগিয়েছেন। মাহতাব উদ্দিন নামে গ্রাহক ঘুষের টাকা জোগাড় করতে না পারায় আজও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। দক্ষিণভাগ গ্রামের বাবুল মিয়া দুই বছর পূর্বে আবেদন (ক্রমিক নং-৩২৭৫৬২) করেন। দালালের মাধ্যমে কনটাক্ট না করায় বিদ্যুৎ পাননি। সম্প্রতি তিনি এক দালালকে উৎকোচ বাবত দেড় হাজার টাকা অগ্রীম করায় ১০-১৫ দিনের মধ্যে সংযোগ পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছেন। ১ বছর আগে বিদ্যুতের আবেদন করেন সফিক উদ্দিন ও ছালিক মিয়া। মিটার ফিস জমার ১ মাস পরও সংযোগ না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে এক দালালের মাধ্যমে ১ হাজার ২শ’ টাকা ঘুষ দিয়ে ৮ মার্চ সংযোগ পেয়েছেন। যদিও টাকা জমার ৭২ ঘন্টার মধ্যে সংযোগ প্রদানের নিয়ম রয়েছে।
পল্লীবিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নীল মাধব বণিক জানান, সংযোগ প্রদানে ঘুষ আদায়ের বিষয় তার জানা নেই। কোন পল্লীবিদ্যুৎ কর্মীর বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানী ও ঘুষ আদায়ের প্রমাণ মিললে তিনি চাকুরীচ্যুত হতে পারেন। যাতে কোন দালাল অনাগুনা করতে না পারে সেজন্য অফিসের সকলকে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। এব্যাপারে তিনি জনগনকেও সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান।
মন্তব্য করুন