দীপ্তিময় অগ্রযাত্রায় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
এইচ এম মুশতাক আহমদ॥ ১০ জানুয়ারি ছিল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবীন বরণ ও অভিভাবক সমাবেশ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক দিনে আরেকটি মিলনমেলার উপলক্ষ পেয়ে খুশি হলাম। ছোটবেলা বাবা আমাকে হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যেতেন ।
১৪ জানুয়ারী সোমবার একই স্কুলে ছেলের হাত ধরে যাচ্ছি বিষয়টি রোমাঞ্চকর বটে। নানা সুখকর স্মৃতির ভেলায় ভাসতে ভাসতে কখন যে স্কুলের মূল ফটকে পা দিয়েছি খেয়াল করি নি। সামনে তাকাতেই চোখে পড়লো, পরিছন্ন, সাজানো গোছানো পরিবেশ। কোথাও একটু ছেড়া কাগজের টুকরা পড়ে নেই, চানাচুরের টুংগা, চকলেটের খোসা নেই।
রোভার্স স্কাউট ও স্কুল স্কাউটের সদস্যরা ইউনিফর্ম পরে এলিট ফোর্সের মত শৃংখলা রক্ষায় ব্যস্ত। দলে দলে স্কুল প্রাঙ্গনে ঢুকছেন নানা বয়সী নারী পুরুষ অভিভাবকরা সামনে স্কুলের শতবর্ষি প্রশাসনিক ভবন, লাল বিল্ডিং।
পুরো স্কুল ক্যাম্পাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য নবীন শিক্ষার্থী চোখে মুখে স্বপ্ন ও উচ্ছাস অনেকের নতুন বন্ধু জুটেছে কেউ গল্পে কেউবা আড্ডায়।
সকাল ১১টায় সম্মিলিত কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবশেনার মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্ভোধন করেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ফজলুর রহমান। জাতীয় সংগীত পরিবেশনায় পরিপক্কতা বাড়তে হবে। সুর, ছন্দ, গভীরতা ও ভাবের মিশ্রন চাই। অনুষ্ঠান সঞ্চালক সহকারী শিক্ষক জনাব মোঃ মুহিবুর রহমানের দরাজ গলায় ঘোষণা এলো পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, গীতা পাঠ ও নবীন ও পুরনো শিক্ষার্থীদের মুগ্ধবক্তব্য উপস্থাপন। আবেগ ঝরে পড়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির নবীন শিক্ষার্থী ইব্রাহিম আহমদ ফাহিমের কন্ঠে “এই স্কুলে ভর্তি হতে পেরে আমি গর্বিত”। তারপর একে একে বক্তব্য দেন, সহকারী শিক্ষক, জনাব আব্দুল হাই, জনাব আখতারুজ্জামান সরকার, সহকারী প্রধান শিক্ষক আ,খ,ম ফারুক আহমদ ও বাবু শংকরানন্দ ভট্টাচার্য্য (স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক বাবু শ্যামপদ ভট্টাচার্য্যরে সুযোগ্য পুত্র) সূচনা-স্বাগত বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ফজলুর রহমান অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের আরো অধিক সচেতন হতে হবে পাঠ্য বইয়ের প্রতিটি পাতা মূল্যবান, যারা পুরো বই পড়ে তাদের ফলাফল কখনো খারাপ হয় না। আপনারা ভর্তির জন্য, ফেল হলে পাশ করানোর জন্য চাপ দেন তদবির করেন যা লজ্জাজনক। আপনারা বিদ্যালয়ে এসে ছেলের খুজ নেবেন। সন্ধ্যার সময় বাইরে আড্ডা না দিয়ে পড়াতে বসাবেন শ্রেণি শিক্ষকের মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ রাখবেন সকল বিষয়ে খোঁজ-খবর নেবেন প্রয়োজনে আমাকে জানাবেন তাহলে স্কুলের পড়াশুনার মান বাড়বে। ঐতিহ্য মর্যাদা, সমুন্নত থাকবে। কোচিং করানোর কোনো প্রয়োজন নেই। এই চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।
বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আশরাফুর রহমান তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন আমি জানি এটি গৌরবজ্জল ঐতিহ্যবাহী স্কুল আমার ছেলেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করতে পেরে আমি আনন্দিত। বহু বরেণ্য শিক্ষাবিধ, বিজ্ঞানী, অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান, অর্থমন্ত্রী শাহ্ এম এস কিবরিয়া ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীসহ অনেক সচিবরা এই স্কুল থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। শা,বি,প্র,বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড্ মসলেহ উদ্দীন,মৌলভীবাজার সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড্ মোঃ ফজলুর আলী,জি বিজ্ঞান আবেদ স্যার(ব্র্যাক) এ স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। এবারে আমাদের নব নির্বাচিত মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য জননেতা নেছার আহমদ এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। জানিয়ে রাখি ডাকসুর সাবেক ভিপি জনাব সুলতান মোঃ মনসুর আহমদ। যিনি মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নবনির্বাচিত হয়েছেন। তিনিও এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। উভয়ের প্রতি আমাদের নিরন্তর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইল।
প্রধান অতিথি মোঃ জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম জানান তদবির করে ভর্তির দিন শেষ এখন অন লাইনে সবভর্তি হচ্ছে যারা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয় তাদের মূল্যায়নই আলাদা, যতটুকু জানি প্রধান শিক্ষক একজন নিষ্টাবান ব্যক্তি আর মর্যাদাবান এই স্কুলের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রশাসনকে সবসমই পাশে পাবেন।
অভিভাবক প্রতিনিধি ও সাবেক সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার মুশতাক আহমদ মম জানান আমাদের স্কুল এ জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, এটি আমাদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, দেশপ্রেম ও নৈতিকতা বুকে ধারন করে শিক্ষার্থীরা বেড়ে উঠুক এই আমাদের প্রত্যাশা নবীনদের জন্য বলি “সাবাশ বাংলাদেশ এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়”। কবি সুকান্তের এমন উজ্জিবনী মন্ত্রেই আমরা দিক্ষিত হতে চাই। শিক্ষক ও অভিভাবকদের যৌথ নজরদারী বাড়াতে হবে। আমরা অসুস্থ রাজনৈতিক কারণের কোন স্কুলের শিক্ষার্থীদের অকালমৃত্যু দেখতে চাই না।
অনুষ্ঠানের ২য় পর্বে অভিভাবকদের সমস্যা ও সংকট নিয়ে মতবিনিময় হয়। এতে আক্রমনের তীর ছুড়েন অভিভাবকরা। পড়াশুনার মান কমছে। নিয়মিত ক্লাস হয় না হোমওয়ার্ক দেয়া হলে ও শিক্ষকরা মনিটরিং করেন না। শিক্ষকরা ক্লাসে কম পড়ান। কোচিং ভাল পড়ান ইত্যাদি। প্রধান শিক্ষক সব মনযোগ দিয়ে শুনেন তাৎক্ষনিক জবাব দেন, কথা দেন স্কুলের জন্য আমি আমার সবটুকু অভিজ্ঞতা ঢেলে কাজ করবো। পূর্বে স্কুলে কোনোদিন নবীন বরণ অনুষ্ঠান হয়নি। আমরা ছাত্রদের হাতে ফুল ও কলম তুলে দিয়েছি। আজকের যারা নবীন তারাই আগামীর বাংলাদেশ। মান সম্পন শিক্ষা দৃঢ নৈত্তিক ভিত্তি ও বিজ্ঞান মনস্ক সমাজ বিনির্মান আমাদের সামনের লক্ষ্য।আমাদেরকে লড়তে হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবটের সাথে মেধা ও মননে।
কবি গুরুর ভাষায়- তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দিও হে শকতি- প্রধান শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ ফজলুর রহমানের হাতে এখন স্কুলের পতাকা, আমরা একটি সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় রইলাম।
লেখক : এইচ এম মুশতাক আহমদ, এডভোকেট ও সাবেক ম্যানেজার, সোনালী ব্যাংক।
মন্তব্য করুন