দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কারণে রাজনগরের কাউয়াদীঘি হাওরে আমন আবাদ ব্যাহত

August 13, 2022,

শংকর দুলাল দেব॥ মৌলভীবাজার জেলার শস্য ভান্ডার খ্যাত রাজনগরের কাউয়াদীঘি হাওরে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ১হাজার হেক্টর জমির আমন ধান আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। হাওর পাড়ের দরিদ্র কৃষককুল ইতোপূর্বে প্রায় দেড়মাস অব্যাহত বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এখন পড়েছেন জলাবদ্ধতার শঙ্কায়। অসহায় হয়ে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।
রাজনগর কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় কৃষক সূত্রে জানাযায়, মৌলভীবাজার জেলার শস্য ভান্ডার খ্যাত ২২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি বিস্তৃত রাজনগরের কাউয়াদীঘি হাওরে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কারণে আমন আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। এতে হাওর পাড়ের হাজার হাজার দরিদ্র কৃষককুল রয়েছেন চরম শঙ্কায়। আমন আবাদের ভরা মৌসূমে জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমন মৌসুম শুরুর পূর্বে কোন উদ্যোগ না নেয়ায় হাওর পাড়ের কৃষকরা নিরুপায় হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। গত ১১ আগস্ট বৃহস্পতিবার হাওর পাড়ের ১০টি গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক কৃষক ‘কৃষি ও কৃষক রক্ষা কমিটির ব্যানারে’ মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিদ্যুৎ সংকট ও কিছু সংখ্যক বিল লিজ গ্রহনকারীদের কারণে হাওরের এই জলাবদ্ধতার সৃষ্ঠি করা হয়েছে। গুটি কয়েক ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষার জন্য উপজেলার ৩৫টি গ্রামের হাজার হাজার দরিদ্র কৃষকের স্বপ্নের ফসল আমন আবাদ ব্যাহত হতে পারে না। হাওরের পানি দ্রুত নিস্কাসনের জন্য ৮টি পাম্প বিশিষ্ট কাসিমপুর পাম্প হাউজে সরকার আরো ৪টি পাম্প মেশিন সংযোজন করার পরও তা যথাসময়ে পানি নিষ্কাশনে সচল রাখা হয়নি। এতে হাওরের আবাদি জমি প্রায় ৫ থেকে ৬ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে ধানের চারা। কৃষকরা জানান, হাওর পাড়ের সকল কৃষকরাই কাউয়াদীঘি কেন্দ্রিক কৃষি নির্ভর জীবন যাপন করেন। তাই আমন ফসল না হলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে।
এদিকে রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম জানান, সঠিক সময়ে আমন আবাদ ও কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিক বিবেচনা করে হাওরের পানি দ্রুত নিস্কাসনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড(পিডিবি) এর সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) এম এ হান্নান খান জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা বৃদ্ধি করায় দিনের বেলায় আপাতত ৮টি পাম্প চালু রাখছি। আশা করছি শীর্ঘই যথাযত ভাবে পাম্প পরিচালনার মাধমে সর্বোচ্চ নিস্কাসন সুবিধা প্রদান করে আমন উৎপাদন নিশ্চিতে সহায়তা করতে পারবো।
এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, কৃষকের আমন আবাদ ব্যাহত হতে দেয়া যায় না। হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসনে অন্যত্র থেকে ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অতিরিক্ত যোগ করে দিনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে কাশিমপুর পাম্পে একটানা ১৮ ঘন্টা চলবে ৮টি পাম্প ও ৬ ঘন্টা চলবে ২টি পাম্প। সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করবে পাউবো, পিডিবি, কৃষি বিভাগ ও জেলা প্রশাসন। আশা রাখি কয়েকদিনের মধ্যেই হাওরের পানি নিষ্কাসন করে কৃষকের আমন আবাদ করার প্রতিবন্ধকতা দূরিভূত হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com