দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ বিপর্যস্ত বড়লেখা ও জুড়ীর ২ শতাধিক গ্রামে নেই ঈদ আনন্দ
আবদুর রব॥ ‘অকাল বন্যায় ধান-মাছ মরেছে। বন্যার পানিতে ভেঙেছে অনেকের ঘরবাড়ি। ভাঙা ঘর কিলা বানাইতাম, কিলা খাইতাম, বাঁচতাম, অতা চিন্তায় রাইত অইলে আমরার ঘুম লাগে না। কাজ-কামও নাই। দুইবার ভাত খাওয়াটা এখন কঠিন অই গেছে। রমজানের ঈদ কিভাবে গেছে বুছতেও পারিনি। দুইদিন পর কোরবানি ঈদ থাকলেও ঈদের চিন্তা মাথাত নাই। খুব কষ্টের মাঝে আছি।’ এ কথাগুলো বলছিলেন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওরপাড়ের পশ্চিম গগড়া গ্রামের বেলাল আহমদ, কাদির আহমদ ও জাহাঙ্গির আলম।
আর একদিন পর ঈদুল আজহা। ঘরে ঘরে ঈদের প্রস্তুতি থাকার কথা থাকলেও হাকালুকি হাওরপাড়ের বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার ২ শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের চোঁখে-মুখে দুশ্চিন্তার চাপ। কিভাবে খেয়ে পরে বাঁচবেন, সে চিন্তায় তাদের দিন কাটছে। তাই রোজার ঈদের মতো এবারও কোরবানির ঈদে তাদের মাঝে নেই কোন আমেজ।
হাকালুকি হাওরপাড়ের সুজানগর ইউনিয়নের দশঘরি গ্রামের নিয়াজ আলী, ফরিজ উদ্দিন জানান, কয়েকদফা বন্যায় তাদের সব কেড়ে নিয়েছে। তাদের আয়ের একমাত্র উৎস ধান, মাছ, গরু হারিয়ে তারা এখন অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন। দুবেলা দুম’ঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। এতোদিন সরকারি-বেসরকারী সংগঠন ত্রাণ বিতরণ করেছে। কিন্তু এখন ত্রাণ সহায়তা একবারে নেই। এ কারণে গত রোজার ঈদের মতো এবারও কোরবানির ঈদে তাদের মাঝে কোন আনন্দ নেই।
এদিকে গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে তাদের মধ্যে আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকের ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তালিমপুর ইউপির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সুনাম উদ্দিন সুনাই জানান, ‘হাওরে পানি দিন দিন বাড়ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। হাওরপাড়ের মানুষের অনেক মানুষ খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করছেন। তাই এবারও হাওরপাড়ের মানুষের মাঝে ঈদ আনন্দ নেই।’
তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস বলেন, ইতিমধ্যে জি.আর কর্মসূচির আওতায় ৫০০ জনকে ১০ কেজি করে চাল ও ১০০ জনকে নগদ তিনশ টাকা করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া অস্বচ্ছল-ক্ষতিগ্রস্ত আরো ৫৮০জনকে ভিজিএফ কর্মসুচির আওতায় ৩০ কেজি করে চাল ও নগদ ৫০০ টাকা করে দেয়া হয়েছে।
সুজানগর ইউপি চেয়ারম্যান নছিব আলী জানান, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় তার ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে হাওরে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনদফা বন্যায় মানুষজন এখন নিঃস্ব। সম্প্রতি ৪ টন জি.আর বরাদ্দ পেয়ে বৃহস্পতিবার দুস্তদের মধ্যে বিতরণ করেছেন। কাল ঈদুল আজহা অথচ মানুষের মধ্যে কোন ঈদ আনন্দ নেই।
মন্তব্য করুন